Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
PMAY

আবাসে দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তে বাধা প্রশাসনকে, পুলিশ নিয়ে গ্রামে ঢুকতে হল বিডিওকে

প্রায় সব ক্ষেত্রেই শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি কতটা জটিল, তা বোঝা গেল হিঙ্গলগঞ্জের গ্রামের ঘটনায়।

সরেজমিন: গ্রামে বিডিও। চোখে পড়ল বহু অসঙ্গতি। নিজস্ব চিত্র

সরেজমিন: গ্রামে বিডিও। চোখে পড়ল বহু অসঙ্গতি। নিজস্ব চিত্র

নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৩
Share: Save:

আবাস যোজনার সমীক্ষার কাজে গ্রামে গিয়ে নানা ভাবে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে এর আগে অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে। ঘেরাও-বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। নিরাপত্তা চেয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা। চাপের মুখে স্বরূপনগরের গ্রামে এক আশাকর্মী আত্মঘাতী হন বলেও দাবি করেছিল পরিবার।

প্রায় সব ক্ষেত্রেই শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি কতটা জটিল, তা বোঝা গেল হিঙ্গলগঞ্জের গ্রামের ঘটনায়। এক পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী সমীক্ষার কাজে বার বার বাধা দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। শেষে বিশাল পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে গ্রামে যেতে হল বিডিওকে। তালিকায় একাধিক অসঙ্গতির প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর।

আবাস যোজনা নিয়ে অভিয়োগ জানাতে কিছু দিন আগে বিভিন্ন বিডিও অফিসে নির্দিষ্ট বাক্স রাখা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। হিঙ্গলগঞ্জ বিডিও অফিসে নাম-পরিচয়হীন কিছু অভিযোগ জমা পড়ে। বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ীর তা নজরে আসে।

প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুলদুলি পঞ্চায়েতের ১৬৮ নম্বর বুথের ২১ জনের নাম তালিকায় ‘প্রভাব খাটিয়ে’ তোলা হয়েছিল বলে অভিযোগ জমা পড়েছিল। ওই উপভোক্তাদের সকলের পাকা বাড়ি আছে বলেও দাবি করা হয় অভিযোগপত্রে।

বিডিও অফিস থেকে পঞ্চায়েত অফিসের সরকারি কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়, অভিযোগ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে। কিন্তু সেই কাজ করতে তাঁরা সাহস পাচ্ছেন না বলে জানান পঞ্চায়েতের কর্মীরা। ব্লক অফিস থেকে কিছু দিন আগে এক অফিসারকে পাঠানো হয়েছিল ১৬৮ নম্বর বুথে ওই ২১ জনের পারিবারিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে।

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, সে সময়ে সরকারি কর্মীদের বাধা দেন বুথের তৃণমূল পঞ্চায়েতের সদস্য ছন্দা হালদার মহাজনের স্বামী বিশু হালদার। ফিরে আসতে হয় অফিসারকে।

বুধবার ব্লক অফিস থেকে ফের এক অফিসারকে পাঠানো হয়েছিল গ্রামে। ৬ জন পুলিশ কর্মীও ছিলেন। বিতর্কিত ২১টি বাড়ির মধ্যে ১২টি পরিদর্শনের পরে দেখা যায়, ১১টি পরিবারই সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য নন। বাকি বাড়িগুলি পরিদর্শন করতে চেয়েছিলেন কর্মীরা। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ কর্মী ও ব্লক প্রশাসনের অফিসারকে ঘিরে ধরে ৫০-৬০ জনের একটি দল। সেখানে বিশুও উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ কর্মীরা সংখ্যায় কম থাকায় পিছু হটতে হয়।

‘জল মাথার উপর দিয়ে বইছে’ বুঝতে পারেন বিডিও। তিনি শুক্রবার গ্রামে যাবেন বলে জানিয়ে দেন। এদিন দুপুরে হিঙ্গলগঞ্জ থানার ওসি অনিল সাউকে নিয়ে গ্রামে যান বিডিও। সঙ্গে ছিলেন হিঙ্গলগঞ্জ থানার একাধিক অফিসার ও ২০-২৫ পুলিশ কর্মী। মহিলা পুলিশও ছিল।

একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে ঘাট-বাঁধানো বড় পুকুর। পাকা ছাদ দেওয়া বাড়ি। পাশে আর একটি একটি বড়, পাকা প্লাস্টার করা ঘর। তবে সেখানে অ্যাসবেস্টসের ছাউনি। এই বাড়ির পিছন দিকে বাড়ি-সংলগ্ন একটি মাটির দেওয়াল দেওয়া ত্রিপলের ছাউনির ঝুপড়ি রয়েছে। এই ঝুপড়ি দেখিয়ে, ছবি তুলেই ঘরের আবেদন করা হয়েছিল বলে জানতে পারেন আধিকারিকেরা।

বাড়ির গৃহিণী বিডিওকে জানান, তাঁরা আগে কখনও ঘর পাননি। এ বার যদি পাওয়া যায়, সেই আশায় তালিকায় নাম তুলেছিলেন।

আর এক ব্যক্তির দাদা দাবি করেন, আমপানে মাটির ঘর ভেঙে গিয়েছিল। তাই আর ঘর করেননি। পরিবার নিয়ে বাবার পাকা বাড়িতে থাকেন। ভাই ভিন্‌ রাজ্যে শ্রমিকের কাজে গিয়েছেন। আধিকারিকদের অবশ্য সন্দেহ হয়, বাবার সঙ্গে পাকা বাড়িতেই থাকেন ওই ব্যক্তির ভাই। তবুও ঘরের আবেদন করেছিলেন। কোনও ভাবে নামও উঠেছে তালিকায়।

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, যে ২১টি ক্ষেত্রে নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল, তার মধ্যে মাত্র তিন জন বাড়ি পাওয়ার যোগ্য। অযোগ্যদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিডিও। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন পরিদর্শনে কেউ বাধা দেননি। ঘর নিয়ে ব্লক জুড়ে দুর্নীতির যা অভিযোগ আসবে, সব খতিয়ে দেখে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

বিশুর দাবি, ‘‘বুধবার প্রশাসনের সঙ্গে যা হয়েছিল, তা গ্রামবাসীরাই করেছিলেন। আমি পরে গিয়েছিলাম। আসলে এই বুথে বার বার পরিদর্শক দল আসছে কেন, সেটাই প্রশ্ন ছিল গ্রামবাসীদের। কেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে কিছু জানানো হচ্ছে না, তা-ও জানতে চেয়েছিলাম সে দিন।’’ বিশু আরও বলেন, ‘‘এই বুথের ৬ জনের নাম তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। অথচ, কেন তখন কোনও পরিদর্শন হয়নি তা-ও জানতে চেয়েছিলাম।’’

হিঙ্গলগঞ্জের তৃণমূলের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘দলের অবস্থান হল, অযোগ্যেরা তালিকায় বাদ যাবেন। যোগ্য ব্যক্তিরা যেন বঞ্চিত না হন, তা দেখতে হবে। সে জন্য প্রশাসন যা করবে, দল পাশে থাকবে।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কিছু আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বলেন, ‘‘পরিস্থিতি কতটা জটিল, এ বার আশা করি কর্তারা বুঝতে পারছেন। ঢাল-তরোয়াল ছাড়া আমাদের সিংহের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

PMAY Hingalganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy