Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
acid

খোলা বাজারে সহজলভ্য অ্যাসিড, দর্শক প্রশাসন

বুধবারই বীজপুরে পড়শিদের বিবাদে এক মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিন মহিলার গায়ে অ্যাসিড ছুড়েছেন তিনি। বাথরুম পরিস্কার করার অ্যাসিড হওয়ায় তিন জনের জখম তেমন তীব্র ছিল না। কিন্তু এই ঘটনায় ফের প্রমাণ হল, খোলাবাজারে অ্যাসিড কতটা সহজলভ্য।

প্রতীকী চিত্র। ছবি: শাটারস্টক

প্রতীকী চিত্র। ছবি: শাটারস্টক

সীমান্ত মৈত্র 
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৪১
Share: Save:

বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিল প্রতিবেশী যুবক। মুখের বিকৃতি, শারীরিক যন্ত্রণা, সমাজের বাঁকা নজর সহ্য করতে হয়েছিল মেয়েটিকে। অদম্য মানসিক শক্তিতে ভর করে, সব কিছু ভুলে নতুন করে বাঁচার লড়াই করেছিল কিশোরীটি। এই কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে দীপিকা পাড়ুকোনের ‘ছপক’ সিনেমা।

সিনেমাটি মুক্তি পাওয়া পরে আলোচনায় ফিরে এসেছে অ্যাসিড হামলা ও বিক্রির বিষয়গুলি। বুধবারই বীজপুরে পড়শিদের বিবাদে এক মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিন মহিলার গায়ে অ্যাসিড ছুড়েছেন তিনি। বাথরুম পরিস্কার করার অ্যাসিড হওয়ায় তিন জনের জখম তেমন তীব্র ছিল না। কিন্তু এই ঘটনায় ফের প্রমাণ হল, খোলাবাজারে অ্যাসিড কতটা সহজলভ্য।

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটছে পশ্চিমবঙ্গে। কেন এই পরিস্থিতি?

রাজ্যে অ্যাসিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছে সেভ ডেমোক্র্যাসি নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীর বলেন, ‘‘এখানে হামলার বড় কারণ, অ্যাসিড পাওয়াটা খুবই সহসলভ্য। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে, অ্যাসিড বিক্রেতার নির্দিষ্ট লাইসেন্স থাকতে হবে। তাঁকে স্টক রেজিস্টার মেইনটেইন করতে হবে। ক্রেতার নাম-পরিচয় লিখে রেখে তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে রাখতে হবে। ক্রেতার পরিচয়পত্র দেখতে হবে দোকানিকে। কী উদ্দেশ্যে তিনি অ্যাসিড কিনছেন, তা-ও লিখে রাখতে হবে।’’ কিন্তু বাস্তবে এ সবের কিছুই প্রায় মানা হয় না বলে অভিযোগ। প্রশাসনিক নজরদারির অভাব আছে বলে মনে করেন চঞ্চল। তাঁর কথায়, ‘‘অ্যাসিডের যথেচ্ছ বিক্রি বন্ধ না হলে অ্যাসিড হামলার ঘটনা কমানো যাবে না।’’ অতীতে দেশ জুড়ে অবাধে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধের ডাক দিয়েছেন, অ্যাসিড হামলা লড়াইয়ের মুখ তরুণী লক্ষ্মী অগ্রবাল। ওই বিষয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও করেছেন। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি।

বনগাঁ, বারাসত, বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সরকারি নিয়মনীতি না মেনেই দোকানিরা অ্যাসিড বিক্রি করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে নিয়মকানুন নিয়ে কোনও সচেতনতাও নেই। বনগাঁ শহরের ট বাজার সংলগ্ন একটি মুদির দোকানে গিয়ে জানতে চাওয়া হল, শৌচাগার পরিস্কার করার অ্যাসিড আছে কিনা। মাথা নেড়ে দোকানি জানালেন, অবশ্যই আছে। ৭০০ মিলিলিটার অ্যাসিড দিলেন। দাম পড়ল ২৫ টাকা। টাকা মিটিয়ে চলে আসার সময়েও কেউ জানতে চাইলেন না ক্রেতার নাম-পরিচয়। ওই দোকানিকে অ্যাসিড বিক্রির নিয়মকানুন বলতে নিতান্তই অবাক হলেন। বললেন, ‘‘এমন কথা কখনও শুনি তো!’’

বনগাঁ শহর ও মহকুমার গ্রামীণ এলাকায় মুদি, স্টেশনারি দোকান বা হার্ডওয়্যার দোকানে অ্যাসিড বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ওই সব দোকান থেকে মিউরেটিক, কারবলিক অ্যাসিড সংগ্রহ করছেন। চঞ্চল বলেন, ‘‘মিউরেটিক বা কারবলিক অ্যাসিডের থেকেও আমাদের এখানে নাইট্রিক এবং সালফিউরিক অ্যাসিড হামলা বেশি হয়। সোনার দোকানের কর্মচারীদের হাত ঘুরে তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।’’

সোনার দোকানের মালিকেরা সোনা খাঁটি করতে অ্যাসিড ব্যবহার করেন। বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির বনগাঁ মহকুমার সহ সম্পাদক দিলীপ মজুমদার বলেন, ‘‘লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমরা নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিড কিনি। আমাদের পরিচয়, নাম-ঠিকানা বিক্রেতারা লিখে রাখেন। সইও করিয়ে নেন।’’ তাঁর দাবি, মালিকের অনুমতি ছাড়া কর্মীরা কেউ অ্যাসিড বাইরে বের করেন না। এ বিষয়ে আমরা খুবই সর্তক। তবে খোলা বাজারে ওই সব অ্যাসিড কিনতে পাওয়া যায়। মানুষ সেখান থেকে সহজেই সংগ্রহ করেন।’’

সেভ ডেমক্র্যাসি সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাংসারিক অশান্তির জেরে এবং প্রেমে প্রত্যাখাত হয়ে এ রাজ্যে অ্যাসিড হামলার ঘটনা বেশি ঘটে। রাজনৈতিক সংঘর্ষ বা অন্য কারণে অ্যাসিড হামলা হয় না। পুলিশ যদি সাংসারিক অশান্তি বা মেয়েদের উপরে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের অভিযোগগুলি আরও তৎপরতার সঙ্গে দেখে, তা হলে অ্যাসিড হামলা কমবে বলে সংগঠনের কর্মকর্তারা মনে করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাগদা, চাঁদপাড়া, হাবড়া এলাকায় মহিলাদের উপরে অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটছে। হয় স্বামী, নয় তো প্রেমিক ওই হামলা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।

উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে অ্যাসিড বিক্রির বিরুদ্ধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালায়। এনফোর্সমেন্ট বিভাগগুলি এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে নিময়কানুন কী আছে, তা না দেখে বলা যাবে না।’’

বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদারের কথায়, ‘‘মেয়েদের উপরে অপরাধের ঘটনাগুলিতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়। বেআইনি ভাবে অ্যাসিড বিক্রির খবর পেলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ অতীতে বনগাঁ ও গাইঘাটা থানার তরফে অ্যাসিড বিক্রেতার শনাক্ত করে তাঁদের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। ওই পর্যন্তই। নজরদারি কার্যত নেই বলে অভিযোগ। সেই সুযোগে নিয়ম না মেনে বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড। অ্যাসিড হামলর পরে অবশ্য খোঁজখবর নিয়ে বিক্রেতাকে গ্রেফতার করার উদাহরণ আছে।

অন্য বিষয়গুলি:

acid open market chhapaak bangaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy