সহজলভ্য। অ্যাসিডের বোতল কিনে দোকান থেকে বেরোল কিশোর। নিজস্ব চিত্র
টাকা ফেললেই যার-তার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে অ্যাসিড। ক্রেতার নাম-পরিচয় জানার প্রয়োজন বোধ করছেন না বেশির ভাগ দোকানি। নাবালকদের হাতেও টাকার বিনিময়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে অ্যাসিডের বোতল।
মুদির দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান— সর্বত্রই কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করে অ্যাসিড বিক্রি হচ্ছে হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি-সহ বিভিন্ন জায়গায়। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অ্যাসিড বিক্রির লাইসেন্স থাকতে হবে বিক্রেতার। দোকানদারকে অ্যাসিড বিক্রির হিসেব রাখতে হবে। ক্রেতা কিনতে এলে তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে হবে। ক্রেতা কেন অ্যাসিড কিনছেন, সেই কারণও নথিভুক্ত রাখার কথা দোকানির। সেই সঙ্গে ক্রেতার নাম-পরিচয় লিখে তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়ার কথা।
কিন্তু এই নির্দেশ সম্পর্কে কতখানি সচেতন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
হাসনাবাদ থানার বাইলানি বাজারে বছর পনেরোর দুই ছাত্রীকে বেশ কিছু হার্ডওয়্যারের দোকানে পাঠিয়ে দেখা গেল, বাথরুম সাফ করার মিউরিয়েটিক অ্যাসিড কেনায় কোনও সমস্যা নেই। ক্রেতার পরিচয়পত্র দেখতেও চাইলেন না ক্রেতা। অ্যাসিড কেনার কারণ জানা তো দূরের কথা। এক বোতলের দাম ১৮-২৩ টাকা। মাত্র কুড়ি মিনিটের মধ্যেই বাজার থেকে দুই নাবালিকা তিন বোতল অ্যাসিড কিনে ফেলতে পারল।
দোকানের মালিকদের কাছে যখন জানতে চাওয়া হল, ছোটদের কাছে কী যুক্তিতে বিক্রি করা হল অ্যাসিড। এক দোকানি হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘শহরের দিকে অ্যাসিড-হামলা হয়। গ্রামে এ সব হয় না। আর বাথরুম পরিষ্কার করার অ্যাসিডে কোনও ক্ষতিও হয় না।’’
হাসনাবাদ বাজারের স্টেশনারি ও হার্ডওয়্যারের দোকানে বারো বছরের এক কিশোরকে পাঠিয়েও সহজেই মিলল পাথরুম সাফ করার অ্যাসিড। কোনও প্রশ্ন উঠল না সেখানেও। অ্যাসিড বিক্রি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কি তাঁরা জানেন না?
প্রশ্ন শুনে এক মুদিখানা মালিকের উত্তর, ‘‘যে কেউ টাকা নিয়ে এলেই শৌচাগার পরিষ্কার করার অ্যাসিড দিয়ে দেব। কারণ, যেখান থেকে এই অ্যাসিড আমরা কিনে আনি, তারা বা পুলিশ প্রশাসনের তরফে কেউ কখনও এ সব নিয়ে আমাদের কখনও কিছু জানায়নি।’’
হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, বাইলানি বাজার কমিটির সম্পাদকেরা জানালেন, বাজারের দোকানদারেরা জানেনই না, অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের কী নির্দেশ রয়েছে। তাই অ্যাসিড বিক্রি নিয়ম মেনে হচ্ছে না। বিক্রেতাদের এ বিষয়ে সরকারি ভাবে সচেতন করা হলে নিশ্চয়ই অ্যাসিড বিক্রি নিয়ম মেনে হবে।
শৌচাগার পরিষ্কার করার অ্যাসিড কম বিপদের, এ কথা মানছেন না চিকিৎসকেরা। হাসনাবাদের চিকিৎসক অর্ধেন্দুশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘মিউরিয়েটিক অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যার ঘটনা বহু ঘটে। এই অ্যাসিড চোখে লেগে ভয়ানক ক্ষতি হতে পারে।’’ সঠিক পদ্ধতি মেনে অ্যাসিড বিক্রি অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বসিরহাটের মহকুমাশাসক বিবেক ভাসমি বলেন, ‘‘অ্যাসিড বিক্রেতাদের আমরা আগেও সচেতন করার কাজ করেছি। আবারও করা হবে।’’ বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুইয়ের কথায়, ‘‘আমরা অ্যাসিড বিক্রেতাদের সচেতন করব, যাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মেনেই তা বিক্রি করা হয়। নাবালকদের কাছে যাতে কোনও ভাবেই অ্যাসিড বিক্রি করা না হয়, তা বিশেষ ভাবে দেখা হবে।’’ তবে এই প্রতিশ্রুতিতে পরিস্থিতি কতটা বদলাবে, তা নিয়ে সন্দিহান বসিরহাটের বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy