Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
গড়িয়াহাটে জোড়া খুনে এখনও অধরা মূল অভিযুক্ত
Murder

Gariahat murder case: বাবাকে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত ভিকি জেলে গিয়েছে আগেও

তদন্তকারীদের দাবি, প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বামীকে খুন করে তাঁর টাকা হাতানোর ছক কষেছিল মিঠু। ‌এই কাজে সাহায্য করেছিল দুই ছেলে।

ডায়মন্ড হারবারে এই বাড়িতেই ভাড়া থাকত মিঠু।

ডায়মন্ড হারবারে এই বাড়িতেই ভাড়া থাকত মিঠু। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৪১
Share: Save:

গড়িয়াহাটে জোড়া খুনে মূল অভিযুক্ত ভিকি বছরখানেক আগেও ধরা পড়েছিল পুলিশের হাতে। সে বার বাবাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ভিকির মা মিঠু হালদার এবং ভাই বিলাসও গ্রেফতার হয়েছিল সে সময়ে।

২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই ঘটনায় হাত-পা বাঁধা, মুখে সেলোটেপ জড়ানো অবস্থায় খাটের তলা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করেছিলেন মিঠুর স্বামী সুভাষকে। তদন্তকারীদের দাবি, প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বামীকে খুন করে তাঁর টাকা হাতানোর ছক কষেছিল মিঠু। ‌এই কাজে সাহায্য করেছিল দুই ছেলে। তিন জন জেল খেটে জামিনে ছাড়া পায়। মামলাটি বিচারাধীন।

গড়িয়াহাটের ঘটনায়, নিহত সুবীর চাকীর বাড়ির কাছেই কাঁকুলিয়া রেলগেটের কাছে মিঠুর শ্বশুরবাড়ি। সেখানেই থাকেন সুভাষের ভাই খোকন। তিনি জানান, গত বছর ডিসেম্বর মাসে বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসে ভিকি। কেতাদুরস্ত চেহারার ভিকিকে তখন চেনাই মুশকিল। গাড়ি চড়ে এসে সে বাবাকে জানায়, সে ইঞ্জিনিয়ার। ভাল চাকরি করে। এখানে ফ্ল্যাট কিনতে চায়। বিয়েও করেছে। খোকনের দাবি, বৌমাকে দেখানোর নাম করেই বাবাকে এখান থেকে নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনর ডায়মন্ড হারবারের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যায় ভিকি। দিন দু’য়েক পরে ওই বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছিল সুভাষকে।

ভিকি প্রসঙ্গে খোকন বলেন, ‘‘যে ছেলে ছোট থেকে পড়াশোনায় মোটেই ভাল ছিল না, তার মুখে সে বার ইংরেজির খই ফুটছিল। খুব অবাক হয়েছিলাম।’’

পুলিশ জানতে পেরেছে, দুর্গাপুজোর আগে একাধিক বার ভিকি ফোন করেছিল সুবীর চাকীকে। প্রতিবারই ইংরেজিতে কথা বলে। তবে ভিকির হয়ে ইংরেজিতে অন্য কেউ কথোপকথন চালিয়েছিল কিনা, তা নিশ্চিত নয় পুলিশ।

তদন্তে নেমে মঙ্গলবার রাতে ডায়মন্ড হারবারের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নাইয়াপাড়ায় মিঠুর ভাড়া বাড়িতে আসে পুলিশ। মিঠু সে সময়ে বাড়ি ছিল না। রাত ২টো থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালায় পুলিশ। পরে ঘরের গেটে তালা ঝুলিয়ে চলে যায়। বাড়ির মালিককে নজর রাখার কথা বলে যান তদন্তকারীরা।

বুধবার সকালে ফের পুলিশ আসে নাইয়াপাড়ার পঞ্চাননতলায় মিঠুর ভাড়া বাড়িতে। বাড়িতে ঢোকার আগেই রাস্তা থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে নগদ কিছু টাকা, নথিপত্র, একটি ধারাল অস্ত্র ও একটি সিমকার্ড উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বামীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে জেল থেকে বেরিয়ে মিঠু বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল ডায়মন্ড হারবারের ২ নম্বর ওয়ার্ড মঞ্জিতা মোড়ের কাছে। সেখানে বেশি দিন ছিল না। মাস দু’য়েক আগে নাইয়াপাড়ার পঞ্চাননতলায় পম্পা গায়েনের বাড়িতে ওঠে।

পম্পা জানান, মাস দু’য়েক হল এসেছে নতুন ভাড়াটিয়া। তেমন ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়নি। ছোট ছেলেকে কয়েকবার দেখলেও বড় জন এ বাড়িতে কখনও আসেনি বলেই জানালেন পম্পা। মিঠু তাঁদের জানিয়েছিল, ডায়মন্ড হারবারের কপাটহাট এবং পারুলিয়া মোড়ের কাছে দু’বাড়িতে আয়ার কাজ করে সে। বিকেল ৫টায় বেরিয়ে যেত। ফিরত পরদিন সকাল ৯টা নাগাদ।

পম্পা জানান, বিজয়া দশমীর পরে রক্তমাখা জামা-কাপড় ধুতে দেখে জানতে চাওয়ায় মিঠু বলেছিল, ছেলে মদ্যপ অবস্থায় মারপিট করে মাথা ফাটিয়েছে। সেই জামাকাপড়ই ধুচ্ছে। পম্পা বলেন, ‘‘সে দিন মহিলা কেমন যেন ভয়ে ভয়ে কথা বলছিল। জানিয়েছিল, কেউ যদি খুঁজতে আসে, তা হলে যেন আমরা বলি, ও এখানে থাকে না।’’ ছোট ছেলে কলকাতায় দোকানে কাজ করে বলে পম্পাদের জানিয়েছিল মিঠু। তবে বড় ছেলের সম্পর্কে কিছু বলতে শোনা যেত তা মিঠুকে।

পম্পার প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, খুব বেশি দিন এক বাড়িতে থাকত না মিঠু। নতুন বাড়ি ভাড়া করে উঠে যেত। পাড়ায় কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা ছিল না।

মিঠুর বাবার সঙ্গেও সুবীরবাবুর কিছু পূর্ব পরিচয় থাকতে পারে বলে জানতে পারছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, সুবীরবাবুর দিদি ডায়মন্ড হারবারে মাথুর গার্লস হাইস্কুলে পড়াতেন। থাকতেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নুনগোলায়, ভাড়া বাড়িতে। সেখানে মাঝে মধ্যে আসতেন সুবীর। কাছেই মিঠুর বাবা মহাদেব হালদারের সিগারেটের দোকান ছিল। সুবীরবাবু সেখানে কেনাকাটা করতেন। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল নেতা রাজর্ষি দাস বলেন, ‘‘১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নাইয়াপাড়া উত্তরপাড়ায় মিঠুর বাবার দোতলা বাড়ি ছিল। বছর দশেক আগে বাড়ি বিক্রি করে কোথাও চলে যান। বছর চারেক আগে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে আমার কাছে আসে মিঠু। তখনই জানতে পারি, ওরা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বসবাস করছে।’’ তিনি জানান, লকডাউনের সময়ে মিঠু তার দুই ছেলে ভিকি ও বিলাসকে নিয়ে শিবিরে খেতে এসেছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy