শিবরাত্রির উপোস করেছিল মেয়েটি। পুজো সেরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। কিন্তু রাত হয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় খোঁজ শুরু করেন পরিজনেরা। তখনই রেল পুলিশ খবর দেয়, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ বছরের ওই কিশোরীর।
বুধবার রাত ৯টা ৫০ মিনিট নাগাদ সোদপুর স্টেশনে রেললাইন পেরোতে গিয়ে কাটিহারগামী হাটেবাজারে এক্সপ্রেসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় দু’জনের। যার মধ্যে এক জন কোয়েল রায় (১৬)। তার দেহটি ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে থাকা কাউ ক্যাচারে আটকে নৈহাটি স্টেশন পর্যন্ত যায়। হাটেবাজারে এক্সপ্রেস শিয়ালদহ থেকে ছেড়ে প্রথম থামে নৈহাটিতে। সেখানেই কোয়েলের দেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশ। ওই একই ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় আর এক তরুণীর দেহ। সেটি সোদপুর স্টেশনের চার নম্বর লাইনের ধারে মেলে। বছর বাইশের ওই তরুণীর নাম পায়েল মিশ্র। বাড়ি সোদপুরের রামচন্দ্রপুরের শ্রমিক আবাসনে।
কোয়েলের বাড়ি সোদপুরের আট নম্বর রেল গেট লাগোয়া রানি রাসমণি নগর এলাকায়। দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর এক ভাই রয়েছে। তবে, এক মাস বয়স থেকেই কোয়েল সোদপুরের ছ’নম্বর রেল গেট লাগোয়া গান্ধীনগরের মামাবাড়িতে বড় হয়েছে। ছোট থেকেই মামাদের অতি আদরের ভাগ্নি ছিল কোয়েল। সে স্থানীয় চন্দ্রচূড় বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ত। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, বুধবার শিবরাত্রির উপোস করেছিল কোয়েল। বিকেলে পাড়ার শিব মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিল। শিবের মাথায় জল ঢেলে বাড়ি ফিরে ফল, জল খেয়ে সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়েছিল। কিন্তু রাত হয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় পড়েন পরিজনেরা। মামা পিন্টু দে, বাবা কমল রায়-সহ অনেকে খোঁজ করতে শুরু করেন। বার বার চেষ্টা করেও কোয়েলের মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না পরিজনেরা। এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে পিন্টু বলেন, ‘‘ও আমার মেয়ে ছিল। পুজো দিয়ে এসে কলা, জল খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। কিন্তু এমন খবর যে আসবে, ভাবতেই পারিনি।’’
পায়েলও শিবপুজো সেরে বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। রাত ৯টা নাগাদ বাবাকে ফোন করে ভূতনাথ মন্দিরে যাওয়ার জন্য অনলাইনে এক হাজার টাকা চেয়েছিলেন। বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না তরুণীর। থাকতেন মায়ের সঙ্গে। বুধবার সারা রাত তিনি বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় ছিলেন পরিজনেরা। এ দিন বিকেলে স্থানীয়দের থেকে তাঁরা জানতে পারেন দুর্ঘটনার কথা। দমদমে গিয়ে পায়েলের দেহ শনাক্ত করেন পরিজনেরা।
রেল পুলিশ জানিয়েছিল, তিন নম্বর লাইন পার করার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত এক জনের কানে হেডফোন ছিল। কোয়েলের কাছে পাওয়া মোবাইল থেকেই পরিজনদের ফোন করে পুলিশ। রাতেই নৈহাটি স্টেশনের রেল পুলিশ থানায় গিয়ে তার দেহ শনাক্ত করেন পরিজনেরা। দমদম রেল পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়া হয় পায়েলের দেহ।
প্রাথমিক তদন্তের পরে রেল পুলিশের অনুমান, তিন নম্বর লাইন দিয়ে ‘থ্রু’ আপ হাটেবাজারে এক্সপ্রেস আসছিল। কিন্তু ঘোষণা উপেক্ষা করেই লাইন পেরোচ্ছিলেন কয়েক জন। কোয়েল ও পায়েল ট্রেনের সামনে পড়ে যান। ট্রেনের ধাক্কায় পায়েল ছিটকে পড়েন চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের সামনে। কোয়েলের দেহ কাউ ক্যাচারে আটকে নৈহাটি পর্যন্ত চলে যায়। সোদপুর স্টেশনে আন্ডারপাস রয়েছে। তা সত্ত্বেও ঝুঁকির লাইন পারাপার বন্ধ হয় না। রেল পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘লাইন পেরোনো বন্ধ করতে মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়। ঘোষণাও করা হয়। তা-ও অনেকে শোনেন না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)