স্মারক: সাংসদের হাতে। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।
প্রথমবার পা দিলেন ঠাকুরনগরের মাটিতে। সভা করলেন মতুয়াদের সামনে। মতুয়াদের ধর্মগুরুদের মন্দিরে প্রণাম সারলেন। জয়ধ্বনি দিলেন তাঁদের নামে। মঞ্চ থেকে প্রণাম জানালেন মতুয়াদের পাগল, গোঁসাই, দলপতিদের।
সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আচরণ, মন ছুঁয়ে গেল মতুয়া সমাজের বড় অংশের, দাবি করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। সে কথা মানছেন মতুয়া গোঁসাই, দলপতিদের অনেকেও।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন মাঠে এক সভায় এসেছিলেন অভিষেক। বেলা ১টা থেকে ঠাকুরবাড়িতে ডঙ্কা-কাশি-নিশান নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে মতুয়া ভক্তেরা ঠাকুরবাড়িতে এসে জড়ো হতে থাকেন। ভক্তদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা হয়েছিল। বড়মা বীণাপানিদেবীর ঘর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। প্রচুর পুলিশ কর্মী নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ অভিষেকের হেলিকপ্টার ঠাকুরবাড়ির আকাশে চক্কর কাটতেই মতুয়ারা ডঙ্কা বাজিয়ে, নিশান উড়িয়ে স্বাগত জানান।
অভিষেক প্রথমেই যান হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে। সেখান থেকে গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দির হয়ে পৌঁছন বড়মার ঘরে। সেখানে বড়মার মূর্তিতে মালা দিয়ে প্রণাম করেন। মতুয়াদের ধর্মগুরুদের ছবিতে ফুলও দেন। তারপরে ওঠেন মঞ্চে।
অভিষেকের সঙ্গে ছিলেন বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর। সভামঞ্চের পাশেই তৈরি করা হয়েছিল অস্থায়ী মতুয়া মন্দির। ঠাকুরবাড়ি থেকে সভাস্থলে এসে অভিষেক সেই মন্দিরে গিয়ে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুর, বড়মা বীণাপানি ঠাকুর, ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের ছবিতে ফুল দিয়ে প্রণাম করে তাঁদের শ্রদ্ধা জানান। ক’দিন আগেই ঠাকুরনগরে সভা করতে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রথমে ঠাকুরবাড়ির মন্দিরে না ঢুকে সভা মঞ্চে চলে গিয়েছিলেন। সভা শেষে মন্দিরে আসেন। অভিষেক উল্টো পথ ধরায় দু’জনের তুলনা শুরু হয়েছে মতুয়াদের মধ্যে। মতুয়াদের অনেকের কাছে তুলনায় কিছুটা নম্বর বেশিই পেয়ে গেলেন অভিষেক। এ দিন সভামঞ্চে তাঁর হাতে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মূর্তি ও হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের জীবনীগ্রন্থ তুলে দেন মমতা ঠাকুর। মঞ্চে উঠেই জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন অভিষেক। মতুয়া গোসাঁই, সাধু, পাগলদের উদ্দেশে হাতজোড় করে প্রণাম করেন। শুরুতেই তিনি বলেন, ‘‘আপনারা (মতুয়ারা) আওয়াজ তুলুন জয় হরিচাঁদ, জয় গুরুচাঁদ, জয় হরি বল।’’ অভিষেকের ওই কথায় সভায় উপস্থিত মতুয়ারা তাঁর সঙ্গে গলা মেলান। অভিষেক মতুয়াদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত দিন বেঁচে থাকবেন, আপনাদের নাগরিকত্বের গ্যারান্টি তাঁর। বলুন আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন?’’ জনতা স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতিসূচক ধ্বনি তুলে তৃণমূল সাংসদকে নিরাশ করেনি।
অভিষেক এ দিন বক্তৃতা শেষ করেছেন ‘জয় হরিচাঁদ গুরুচাঁদ’ বলে। তা-ও মন কেড়েছে জনতার। সাংসদ সৌগত রায়, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা এ দিন সভায় উপস্থিত ছিলেন। সৌগত বলেন, ‘‘তৃণমূলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করে দিতে চাই, এ রাজ্যে সিএএ কার্যকর হতে দেব না। নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপি চিটিংবাজি করেছে। আপনারা তৃণমূলে ফিরে আসুন।’’ মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাগরিকত্ব নিয়ে মতুয়াদের ভাঁওতা দিয়েছেন, তা মতুয়ারা ধরে ফেলেছেন।’’
অভিষেকের সভা নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করেছেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তাঁর কথায়, ‘‘মতুয়া উদ্বাস্তু সমাজের মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে অভিষেকের রাজনৈতিক কথার কোনও গুরুত্ব নেই। কেন্দ্র নাগরিকত্ব আইন করেছে। তারা তা কার্যকর করবে।’’ জ্যোতিপ্রিয় দাবি করেন, এ দিনের সভায় অন্তত ৭০ হাজার মানুষ এসেছিলেন। শান্তনুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল যে মাঠে সভা করেছে তাতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ ধরে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy