অনুপ ঘোষ।
সাপুড়েদের ঘরে থেকে তাঁদের সঙ্গে মাঠেঘাটে ঘুরে সাপ ধরার কৌশল শিখেছিলেন যৌবনে। আজীবন সেই কৌশল কাজে লাগিয়ে প্রচুর সাপ উদ্ধার করেছেন। সেই কাজ করতে গিয়েই এ বার একটি চন্দ্রবোড়ার কামড়ে মৃত্যু হল ব্যারাকপুরের অনুপ ঘোষের (৬৩)।
বৃহস্পতিবার নৈহাটিতে একটি চন্দ্রবোড়া সাপকে উদ্ধার করে ব্যাগে পোরার সময়ে সেটি তাঁকে ছোবল মারে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অ্যান্টিভেনম দেওয়ার পরেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। শনিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
অনুপবাবু পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সদস্য ছিলেন। শুধু সাপই নয়, অজস্র পশু-পাখি উদ্ধার করে তুলে দিয়েছেন বন দফতরের হাতে। সাপের কামড়ে তাঁর মৃত্যু তাই অবাক করেছে অনেককেই।
অনুপবাবুর বাড়ি ব্যারাকপুরের চন্দনপুকুরে। টিটাগড়ের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা থেকে অবসর নেওয়ার পরে পরিবেশ, পশু-পাখি এবং সরীসৃপ বাঁচানোর কাজেই জড়িয়ে পড়েন। তাঁর স্ত্রী শিখা ঘোষ জানান, অনেক সময়ে বন দফতর ছুটি থাকলে সরীসৃপ তিনি বাড়িতে এনে রাখতেন। অন্যেরা ভয় পেলেও তিনি হাসিমুখে তাদের খাওয়াতেন, পরিচর্যা করতেন। ওই কাজে অন্যদেরও উৎসাহিত করতেন।
সাপ ঢুকেছে খবর পেয়ে নৈহাটির হাজিনগরের একটি বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি পৌঁছন। রান্নাঘরের টালির চালের মধ্যে প্রায় পাঁচ ফুটের চন্দ্রবোড়াটি লুকিয়ে ছিল। সেটিকে ওই জায়গা থেকে টেনে বার করে ব্যাগে পোরার সময়ে সাপটি তাঁর আঙুলে কামড় বসায়। তার পরেও সাপটিকে ব্যাগে পুরে তিনি ফোন করেন বন দফতরের এক আধিকারিককে। কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁকে নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়। তার পরে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে দেওয়া হয় আরও একটি অ্যান্টিভেনম ইঞ্জেকশন।
ওই হাসপাতালে তাঁকে আরও একটি অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়, সঙ্গে দেওয়া হয় চার ইউনিট প্লাজমা। তা সত্ত্বেও শুক্রবার রাতে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। শনিবার তাঁর অঙ্গপ্রতঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। তাঁকে কলকাতার একটি হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি।
তাঁর পরিচিত এবং বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য অনিন্দিতা ভৌমিক জানান, প্রায় ৩০-৩২ বছর ধরে উনি ওই কাজ শুরু করেন। চাকরি করার সময়েও তিনি নিয়মিত ওই কাজ করতেন। সাপ ধরার তালিম নিতে সাপুড়েদের সঙ্গেও মেলামেশা করতেন। তাঁদের বাড়িতে তাঁদের সঙ্গে থেকে সাপের পরিচর্যা, জখম সাপের চিকিৎসা সব কিছু শিখে নেন।
সাধারণ লোকেদের মধ্যে সচেতনতার প্রচার করতেন। সাপ দেখলে তাদের না মেরে তাঁকে খবর দিতে বলতেন সর্বত্র। ধীরে ধীরে তাঁর কাজকর্মের খবর ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ব্যারাকপুরের বাইরেও।
বিজ্ঞান মঞ্চের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অনুপদা শুধু সাপ ধরতেন না। সাপ উদ্ধার করে এলাকার লোকজনকে তার সম্বন্ধে বোঝাতেন। তাঁর মৃত্যুতে জনবিজ্ঞান আন্দোলনে বড় ক্ষতি হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy