স্কুলের ভবন খাঁ খাঁ করছে। নেই শিক্ষক, নেই এক জনও পড়ুয়াও!
খাতায়-কলমে ছাত্রছাত্রী থাকলেও শিক্ষকের অভাবে বাস্তবে বন্ধ হতে বসেছে পাথরপ্রতিমা ব্লকের দক্ষিণ শিবগঞ্জ জুনিয়র হাই স্কুল। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাসুদেব দাস বলেন, ‘‘বহু বার এসআই, ডিআই অফিসে যোগাযোগ করেছি শিক্ষক দেওয়ার জন্য। কোনও লাভ হয়নি। অভিভাবকদের চাপে আমি বাধ্য হয়ে সকলকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছি।’’
স্কুল সূত্রের খবর, ২০২৩ সালে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১৬ জন। ২০২৪ সালে এক জনও ভর্তি হয়নি। উল্টে, ওই ১৬ জন পড়ুয়া স্কুল থেকে ‘ট্রান্সফার সার্টিফিকেট’ নিয়ে দশ কিলোমিটার দূরে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে স্কুলটিতে কোনও ছাত্র নেই। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলে অবসরপ্রাপ্ত এক জন মাত্র শিক্ষক ছিলেন। তাঁর একার পক্ষে স্কুল চালানো সম্ভব ছিল না। স্কুলের কাজে তিনি বাইরে গেলে স্কুল বন্ধ থাকত। সে কারণে বাধ্য হয়েই কাছের স্কুল ছেড়ে তাঁরা ছেলেমেয়েদের অন্যত্র ভর্তি করিয়েছেন।
পাথরপ্রতিমা ব্লকের পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েতের দক্ষিণ শিবগঞ্জ গ্রামে ২০১৩ সালে তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ শিবগঞ্জ জুনিয়র হাই স্কুল। সে সময়ে তিন জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে ওই বিদ্যালয়ে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। বছর চারেক পরে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বয়স ৬৫ হওয়ায় তাঁরা অবসর নেন। কিন্তু নতুন নিয়োগ হয়নি। তাঁদের পরিবর্তে আবার নতুন করে এক জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের শেষে অবসর নেন। শিক্ষক না থাকায় পড়ুয়ারাও চলে যায়।
শুরুতে অবশ্য ছবিটা এমন ছিল না। ২০১৩ সালে চারটি ক্লাসে ৬০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। কিন্তু স্কুলে এক দিকে শিক্ষকের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকায় এবং বিষয়ভিত্তিক নতুন শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় পড়ুয়াদের অন্য স্কুলে ভর্তি করতে শুরু করেন অভিভাবকেরা।
শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, স্কুলছুট কমাতে এবং ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর শিক্ষাগ্রহণকে সুনিশ্চিত করতে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় গড়ে তোলা হয়েছিল বহু জুনিয়র হাই স্কুল। সমগ্ৰ শিক্ষা মিশনের উদ্যোগে শুরু হওয়া ওই সব জুনিয়র হাই স্কুলগুলিতে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হত। প্রাথমিক ভাবে স্কুলগুলিতে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক এবং হাই স্কুলের শিক্ষকদের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করে সরকার। কিন্তু পরে নতুন নিয়োগ না হওয়ায় বেহাল এমন বহু স্কুল।
দক্ষিণ শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শুভ্রাংশু নায়েক বলেন, ‘‘বাড়ির সামনের স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করতেই তো চাই। কিন্তু শিক্ষক না থাকলে পড়াবে কে? শিক্ষকের অভাবে স্কুলটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীরকুমার জানা বলেন, ‘‘আইনি জটিলতায় শিক্ষক নিয়োগ আটকে আছে। রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে স্কুলগুলিতে নতুন শিক্ষক দেওয়ার। আমরাও চেষ্টা করছি, যাতে ফের স্কুলটি কী ভাবে চালু করা যায়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)