Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ganga Sagar Mela 2024

‘সাধুসেবা করে আনন্দ পাই’

পলাশ পাপ-পুণ্যের হিসাব না করলেও ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিংহভাগ মানুষ আসেন পুণ্যলাভের আশায়। যেমন, উত্তরপ্রদেশ থেকে এসেছেন আজাদ বাবা।

গঙ্গাসাগর মেলায় গঙ্গা আরতির শুরুর আগের মুহূর্ত। ঢাক, শাঁখ ও নৃত্যের মাধ্যমে আরতির পথে।

গঙ্গাসাগর মেলায় গঙ্গা আরতির শুরুর আগের মুহূর্ত। ঢাক, শাঁখ ও নৃত্যের মাধ্যমে আরতির পথে। —নিজস্ব চিত্র।

মিলন হালদার
গঙ্গাসাগর শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৭
Share: Save:

পাপ-পুণ্য কী?

গঙ্গাসাগরে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার পলাশ দাস। তিনি গঙ্গাসাগরে আসেন নাগা সাধুদের সেবা করতে। শুক্রবার বিকেলে দু’নম্বর ঘাটে দাঁড়িয়েছিলেন বছর ৪৩-এর পলাশ। পোশাক বানানোর জন্য কাপড় কাটার কাজ করেন তিনি। পলাশ প্রথম গঙ্গাসাগরে এসেছিলেন ২০১৩ সালে। তার পর থেকে প্রতি বছর আসেন। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৩ সালে প্রথম বার সাগরে স্নান করেছিলাম। তার পর থেকে আর স্নান করিনি ঠিকই। তবে সাগরমেলায় আসি নাগা সাধুদের সেবা করতে। পাপ-পুণ্য কী জানি না। সাধুসেবা করে মানসিক আনন্দ পাই।’’ কুম্ভমেলায় গিয়েও তিনি সাধু সেবা করেছেন বলে জানালেন পলাশ।

পলাশ পাপ-পুণ্যের হিসাব না করলেও ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিংহভাগ মানুষ আসেন পুণ্যলাভের আশায়। যেমন, উত্তরপ্রদেশ থেকে এসেছেন আজাদ বাবা। তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন। আজাদ গঙ্গাসাগরে এসেছেন তাঁর মা পার্বতীর একটি শাড়ি নিয়ে। শাড়ি কেন? আজাদ বলেন, ‘‘মায়ের হার্টের সমস্যা রয়েছে। তাই তিনি এত দূরে গঙ্গাসাগরে আসতে পারেননি। আমিই তাই মায়ের শাড়ি নিয়ে এসেছি। সেটি সাগরে চুবিয়ে নিয়ে গিয়ে মাকে দেব। এতে মায়ের পুণ্যলাভ হবে।’’ পুণ্যের আশায় ১০ বছরের ভাইঝি সন্ধ্যাকে নিয়ে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র থেকে গঙ্গাসাগরে এসেছেন সীতারাম পহেলও।

এ দিন সন্ধ্যায় গঙ্গাসাগরে ঠান্ডা তেমন মালুম হয়নি। তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আজ এবং আগামী কাল রাজ্যের প্রায় সব জেলায় পারদ পতন হবে। মেলার জন্য এখানে চা-সহ বিভিন্ন খাবারের দোকান দিয়েছেন স্থানীয় চেমাগুড়ির বাসিন্দা শশাঙ্ক দাস। তিনি বললেন, ‘‘রাতে এবং ভোরের দিকে কিন্তু বেশ ঠান্ডা মালুম হচ্ছে।’’

শুক্র-সন্ধ্যায় গঙ্গাসাগর মেলায় অবশ্য ভিড় মোটামুটি ভালই হয়েছে। সন্ধ্যায় উদ্বোধন হয় গঙ্গারতির। তা চলবে তিন দিন। ৩ এবং ৩এ সমুদ্র-তটের মাঝখানে মঞ্চ বেঁধে হচ্ছে গঙ্গারতি। এ দিন গঙ্গারতির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কপিলমুনির আশ্রমের প্রধান পুরোহিত জ্ঞানদাস মোহন্ত, রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা প্রমুখ। আরতি উপলক্ষে বিকেলে কপিলমুনি আশ্রম সংলগ্ন প্রাঙ্গণ থেকে একটি শোভাযাত্রা যায় সমুদ্র-তট পর্যন্ত। সন্ধ্যায় দেখা গেল, দলে দলে মানুষ চলেছেন গঙ্গারতি দেখার জন্য।

তবে ৩ এবং ৩এ ঘাটের রাস্তা বন্ধ থাকায় আরতি দেখার জন্য সেই ভিড়কে যেতে হল চার, পাঁচ এবং ছ’নম্বর সমুদ্র-তট ঘুরে। তিন নম্বর ঘাটে তখন বালির বস্তা ফেলে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। পুলিশ জানায়, জোয়ারের কারণে ঘাটের দশা বেহাল সেটাই মেরামতির কাজ চলছে। দ্রুত এই কাজ শেষ করা হবে। ৩এ ঘাটের রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে অত্যধিক কাদার জন্য।

এ বছর কিউআর কোডের মাধ্যমে জানা যাবে মেলার খুঁটিনাটি। মোবাইলে কিউ আর কোড স্ক্যান করলেই জানা যাবে, পানীয় জল, অ্যাম্বুল্যান্স-সহ কী কী সরকারি পরিষেবা মিলবে কাছাকাছি জায়গা থেকে। সেই সঙ্গে কন্ট্রোল রুম থেকে মেলার আনাচ-কানাচে ২৪ ঘণ্টা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি
চালাচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।

অন্য দিকে শুধুমাত্র ডিজিটাল মাধ্যমে নয়, বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য ম্যানুয়ালি থাকছে একাধিক পরিষেবা। বিভিন্ন রকম চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে তাঁদের সুবিধার্থে। তবে এরই মধ্যে এ দিন দেখা গিয়েছে এক বিপত্তি। মুড়িগঙ্গা নদীতে চর থাকায় দুপুরে একটি যাত্রী বোঝাই ভেসেল দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা আটকে থাকে। তার পরে ভেসেল ছাড়লে যাত্রীরা কচুবেড়িয়ায় পৌঁছন।

এ দিন সন্ধ্যারতি চলাকালীন মূর্তি সেজে দাঁড়িয়েছিলেন গোপাল মণ্ডল। কুলপির বাসিন্দা গোপাল মূর্তি সেজে চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্য তুলে ধরেছেন। পরনে শুধু ধুতি। আদুর গায়ে সোনালি রং মাখানো। ঠান্ডা লাগছে না? ‘‘ধুর, কিসের ঠান্ডা!’’ হাসতে হাসতে জবাব দিলেন গোপাল। আকাশে তখন চক্কর কাটছে ড্রোন।

অন্য বিষয়গুলি:

Pilgrimage ganga sagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy