E-Paper

সেপটিক ট্যাঙ্কে পড়ে মৃত্যু বালকের, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

শৌচাগারের সেপটিক ট্যাঙ্কের উপরে সিমেন্টের স্লাব ভেঙে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল বছর বারোর এক বালকের। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ থানার বাগানগ্রাম পিপলিপাড়া এলাকায়।

সন্দীপ মজুমদার।

সন্দীপ মজুমদার। ছবি: নির্মল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪৩
Share
Save

শৌচাগারের সেপটিক ট্যাঙ্কের উপরে সিমেন্টের স্লাব ভেঙে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল বছর বারোর এক বালকের। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ থানার বাগানগ্রাম পিপলিপাড়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সন্দীপ মজুমদার।

অভিযোগ উঠেছে, নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে শৌচাগার বা সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরির করার ফলেই তা ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে।

সন্দীপ স্থানীয় ট্যাংরা কলোনি হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। দাদা সংগ্রাম মানসিক ভারসাম্যহীন। রবিবার বিকেলে বাবা সঞ্জীবের সঙ্গে বাড়ির পুকুরে ছিপ দিয়ে মাছ ধরছিল সন্দীপ। সঞ্জীব চাষবাস করেন। মাছ ধরতে ধরতে এক সময়ে উঠে গিয়েছিলেন।

সন্দীপ মাছ ধরা শেষে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাড়ির গোয়ালের টিনের ছাউনির উপরে ছিপ রাখতে গিয়েছিল। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোয়ালের পাশেই শৌচাগার। সন্দীপ সেপটিক ট্যাঙ্কের উপরে স্ল্যাবে পা দিয়ে ছিপটি রাখতে গিয়ে স্ল্যাব ভেঙে ট্যাঙ্কে পড়ে যায়।

ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে মা ঝর্না সহ পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। জ্যাঠা বাবলু বলেন, ‘‘রাত ৯টা নাগাদ ওর মা সেপটিক ট্যাঙ্কের কাছে গিয়ে দেখেন, ছেলে ট্যাঙ্কের মধ্যে পড়ে আছে। স্ল্যাবের একাংশ ভেঙে সন্দীপের গলায় উপরে। আমরা সকলে মিলে ওকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে বাঁচাতে পারিনি।’’

সোমবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের মানুষ সন্দীপদের বাড়িতে ভিড় করেছেন। মা বারান্দায় বসে চিৎকার করে কাঁদছেন। গ্রামের মহিলারা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে থাকা জলে দেখা গেল সন্দীপের জুতো ভাসছে।

সন্দীপের মৃত্যুতে এ দিন তার স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। নীরবতা পালন করে ছুটি দেওয়া হয়। শিক্ষক তন্ময় দে বলেন, ‘‘খুবই চটপটে ছেলে। স্কুলের সব কর্মকাণ্ডে যোগ দিত।’’ সন্দীপের সহপাঠী শুভজিৎ বিশ্বাস, দীপ তালুকদার সহ অনেকে তাদের বাড়িতে গিয়েছিল। অনেকেরই চোখে জল।

পরিবারের লোকজন এবং গ্রামের মানুষ ক্ষুব্ধ শৌচাগার নিয়ে। সন্দীপের জ্যাঠার কথায়, ‘‘নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে শৌচাগার তৈরির জন্যেই অকালে সন্দীপকে চলে যেতে হল। সেপটিক ট্যাঙ্কের স্ল্যাবটি পাতলা ছিল। কিছু দিনের মধ্যেই তার কিছুটা অংশ ভেঙে গিয়েছিল।’’

স্বচ্ছ ভারত মিশন-গ্রামীণ প্রকল্পে সন্দীপদের বাড়িতে বছর দেড়েক আগে শৌচাগার তৈরি হয়েছিল। শৌচাগারের পাশেই সেপটিক ট্যাঙ্ক। তার উপরে সিমেন্টের স্ল্যাব। শৌচাগারে লেখা, সেটি রূপায়ণ করেছে বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতি। এ দিন মৃত বালকের বাড়িতে যান বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘শৌচাগার তৈরিতে কেন্দ্র ১০ হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দ করেছিল। বাস্তবে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে কিনা সন্দেহ! পঞ্চায়েতে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা কাটমানি খেয়েছেন বলেই ছোট ছেলেটাকে চলে যেতে হল।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে সুন্দরপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তৃণমূলের নীলপদ বালা বলেন, ‘‘কাটমানির অভিযোগ ভিত্তিহীন। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই শৌচাগার তৈরি হয়েছিল।’’ বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘বালকের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তবে নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে শৌচাগার তৈরি করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ীই কাজ হয়েছিল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Child Death Case Bangaon Septic Tank Death Septic Tank

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।