Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

স্ত্রীকে প্রার্থী করে আইএসএফের হাত ধরলেন ভাইপো

কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৭ ও ৫৮ নম্বর পার্টের ইতিহাসে দল ভাঙানোর ঘটনা লুকিয়ে আছে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৩ ০৮:৩৮
Share: Save:

বারাসত ১ নম্বর ব্লকের কদম্বগাছি পঞ্চায়েতে কাকার সঙ্গে ভাইপোর রাজনৈতিক লড়াই ঘিরে গ্রামে সাড়া পড়ে গিয়েছে। পরিবারের খবর, পাঁচ বছর ধরে দুই পরিবারের মধ্যে বাক্যালাপ কার্যত বন্ধ। শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাকিমার কাছে ভাইপোর স্ত্রী হেরেছিলেন নির্দল হিসেবে। এ বার তিনি শক্ত খুঁটি আইএসএফে। যদিও ভাইপোর দাবি, রাজনৈতিক লড়াই পারিবারিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না। অন্য দিকে কাকার দাবি, ভাইপো নীতিহীন। যে দল তাঁর পরিচিতি ঘটিয়েছে, তার সঙ্গেই ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন তিনি।

কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৭ ও ৫৮ নম্বর পার্টের ইতিহাসে দল ভাঙানোর ঘটনা লুকিয়ে আছে। সেখানে ২০০৮ থেকে ২০১৩— এই পাঁচ বছর পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের মহম্মদ ইসরায়েলের সঙ্গী ছিলেন জিয়াউল ইসলাম। ২০১৩ সালে তৃণমূল জিয়াউলকে দাঁড় করিয়ে ইসরায়েলকে হারায়। ২০১৮ সালে ওই আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকায় জিয়াউলের স্ত্রী হালিমা বিবিকে প্রার্থী করে তৃণমূল। কাকা জিয়াউলের সঙ্গে তাঁর ভাইপো ফিরোজ আলির রাজনৈতিক সম্পর্কে ফাটল তখন থেকেই শুরু। শোনা যায়, বরাবর তৃণমূল করা ফিরোজ চেয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী রেশমা মণ্ডলকে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হোক। তা না হওয়ায় নির্দল হিসেবে দাঁড়ান রেশমা। কাকিশাশুড়ি হালিমার কাছে সামান্য ব্যবধানে হেরেও যান।

চলতি বছরেও ওই আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। এ বারও দল ভাঙার খেলা হয়েছে। নির্দল হয়েও পরে তৃণমূলে ফিরে আসা ফিরোজ এ বার স্ত্রীর জন্য ঘাসফুল প্রতীক আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এলাকার খবর, গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ এবং ফিরোজের অনুগামীরা রেশমাকে আইএসএফে যোগ দিতে চাপ দেন। তাঁর বাড়িও ঘেরাও হয়। শেষ পর্যন্ত হালিমাই ওই আসনে আবার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন।

ফিরোজের দাবি, ‘‘অতীতে আমাদের টিকিট দেওয়ার কথা বলেও তৃণমূল তা দেয়নি। বর্তমান পঞ্চায়েতের সদস্যা আমার কাকিমা আগের বার জিতেও বিশেষ কাজ করেননি বলেই এলাকার মানুষ মনে করেন। সে সব কারণে মানুষের তৃণমূল নিয়ে আপত্তি ছিল। তাই তাঁদের অনুরোধেই স্ত্রীকে আইএসএফে দাঁড় করিয়েছি। সংরক্ষণ না হলে আমিই দাঁড়াতাম।’’ আর রেশমার দাবি, ‘‘পারিবারিক সম্পর্ক এতে খারাপ হবে না।’’

যদিও জিয়াউল ও তাঁর শিবির খুশি হালিমা ফের প্রার্থীপদ পাওয়ায়। জিয়াউল বলেন, ‘‘আমার ভাইপোর নীতির ঠিক নেই। ওর স্ত্রী টিকিট না পেতেই ও আইএসএফের হাত ধরেছে। ওর সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই।’’

মূলত যিনি উদ্যোগী হয়েছিলেন ফিরোজের স্ত্রী রেশমাকে প্রার্থী করতে, সেই কদম্বগাছি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি নিজামুল কবীরের দাবি, ‘‘রেশমার স্বামী অনেক দিনই তৃণমূল করতেন। প্রতি বারই নানা কারণে ওঁদের টিকিট দেওয়া হত না। এ বার চেষ্টা করা হয়েছিল। তালিকায় ওঁর স্ত্রীর নামও ছিল। কিন্তু উনি ধৈর্য হারিয়ে আইএসএফে চলে গেলেন। তবে হালিমাও খারাপ প্রার্থী নন। ওঁকেও মানুষ চেনেন।’’

বারাসত-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরসাদ উদ জামানের দাবি, ‘‘দল টিকিট না দেওয়ায় রেশমা ও তাঁর স্বামী নির্দল হয়ে যান। বিধানসভায় ওঁরা আইএসএফকে সমর্থন করেছিলেন। এখন আবার তৃণমূলে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। বরং উনি লড়লে এখানে তৃণমূল হারত। হালিমা দলের পুরনো সদস্য। উনি থাকায় তৃণমূল ওখানে শক্তিশালী।’’

যদিও আইএসএফের উত্তর ২৪ পরগনার সম্পাদক কুতুবুদ্দিন হক পুরকাইত পাল্টা বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ তৃণমূলের উপরে বিরক্ত। তাই তাঁরা ওই প্রার্থীকে ঠিক পথ দেখিয়েছেন। সর্বত্র শাসানি দিয়ে আমাদের আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy