Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
oxygen concentrator

কোভিড-নায়ক: তুরস্ক থেকে গোবরডাঙায় অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠালেন রোমিও

করোনা-কালে জন্মভূমির দুঃসময়ে গোবরডাঙার পাশে দাঁড়ালেন এই প্রবাসী যুবক। চারটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠানোর পাশাপাশি তিনি কয়েক লক্ষ টাকা নগদ পাঠিয়েছেন দেশে।

রোমিও (বাঁ দিকে)। নাথ পরিবারের তরফে পুর প্রশাসকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর।

রোমিও (বাঁ দিকে)। নাথ পরিবারের তরফে পুর প্রশাসকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। নিজস্ব চিত্র।

অমিতা দত্ত
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ১৪:২৩
Share: Save:

উড়ানটা বেশ লম্বা। উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা থেকে তুরস্কের ইস্তানবুল। সেখানেই গত এক দশক ধরে কর্মসূত্রে থাকেন বছর চল্লিশের রোমিও নাথ। ইস্তানবুলে তাঁর একটি যোগ স্টুডিয়ো রয়েছে। করোনা-কালে জন্মভূমির দুঃসময়ে গোবরডাঙার পাশে দাঁড়ালেন এই প্রবাসী যুবক। চারটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠানোর পাশাপাশি তিনি কয়েক লক্ষ টাকা নগদ পাঠিয়েছেন দেশে। সেই টাকায় চাল-ডাল-আলু-সয়াবিন-বিস্কুট কিনে দাঁড়ানো হচ্ছে কোভিড আক্রান্তদের পাশে। শুধু তাই নয়, কোভিড পরবর্তী সময়ে কোন কোন যোগব্যায়ামে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা যায়, নিজের স্টুডিয়োয় তোলা সেই সব ভিডিয়োর ইউটিউব লিঙ্কও পাঠাচ্ছেন, যাতে গোবরডাঙাবাসীর কাজে লাগে।

ভাগ্যান্বেষণে ২০১১ সালে তুরস্ক পাড়ি দিয়েছিলেন রোমিও। গড়ে তোলেন একটা ছোট যোগ স্কুল। সেই স্কুলই এখন যোগ স্টুডিও। রোমিও এখন তুরস্কের অন্যতম নামী যোগ প্রশিক্ষক। বিয়ে করেছেন সে দেশের তরুণী এব্রু অজদেমির-কে। দু’জনে মিলেই ওই স্টুডিয়ো চালান। এব্রু ইস্তানবুলের অল্টিনবাস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেন।

গোটা দেশ এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রথম ঢেউয়ে সবচেয়ে সংক্রমিত হয়েছিল বড় শহরগুলো। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল ভাবেই ঢুকে পড়েছে এবং পড়ছে মফস্সল শহর থেকে গ্রামাঞ্চলেও। গোবরডাঙাতেও তাই। রোমিও-র মা-বাবা-ভাই গোবরডাঙাতেই থাকেন। তাঁদের কাছ থেকেই জানতে পারেন, এলাকায় অক্সিজেন সঙ্কট আছে। অক্সিজেন প্রয়োজনের তুলনায় জোগান কম। এর পরেই তিনি কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে চারটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠান। নাথ পরিবারের তরফে সেগুলো তুলে দেওয়া হয়েছে গোবরডাঙা পুরসভার হাতে।

গোবরডাঙার চ্যাটার্জিপাড়ায় থাকেন রোমিওর ভাই সন্দীপ। তিনিই পরিবারের তরফে সোমবার ৪টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর স্থানীয় পুরপ্রশাসক সুভাষ দত্তের হাতে তুলে দেন। পরে সন্দীপ বলেন, “গোবরডাঙায় অক্সিজেন সঙ্কট রয়েছে। মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। আমরা নিজেরাও ভুক্তভোগী। বিষয়টি জেনে দাদা গোবরডাঙার মানুষের জন্য এই পদক্ষেপ করেছে। দাদার বেশ কয়েক জন বন্ধু, আমরা সবাই মিলে গোবরডাঙা জুড়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়ছি। আক্রান্তদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে দাদার সাহায্যটা আমাদের বড় কাজে লেগেছে।”

মঙ্গলবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে ইস্তানবুল থেকে রোমিও বললেন, ‘‘আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সব গোবরডাঙায়। যে গোবরডাঙা আমাকে জীবনের মুখ দেখিয়েছে, তার দুঃসময়ে আমি পাশে থাকব না সেটা কি হয়! আমার বাবা-মায়ের তো বয়স হয়েছে। ওঁরাও ওখানে থাকেন। সকলের কথা ভেবেই আমি ওগুলো পাঠিয়েছি।” একই সঙ্গে জানান, “এর পর আমি ইউটিউব লিঙ্ক পাঠাব, যেখানে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত সেরে ওঠার পদ্ধতি শেখাব অনলাইনে। এই দুঃসময়ে আমার নিজের এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি, সেটাই অনেক। এর বেশি কিছু ভাবছি না।’’

অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পেয়ে স্বস্তি বোধ করছেন পুরপ্রশাসক সুভাষ। তিনি বলেন, “পুরসভা ২৪ ঘণ্টার একটি অক্সিজেন পার্লার করেছে। সেখানে এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রাখা থাকবে। সর্বক্ষণ চিকিৎসক, নার্স থাকবেন। মানুষ প্রয়োজন মতো সেখান থেকে অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারবেন। একসঙ্গে চার জনকে অক্সিজেন দেওয়া যাবে।”

পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য শঙ্কর দত্তও রোমিওর এই উদ্যোগে খুশি। তিনি বলেন, “অতিমারি পরিস্থিতিতে রোমিও ইস্তানবুল থেকে যে ভাবে গোবরডাঙার পাশে দাঁড়িয়েছে, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। পুরসভার পক্ষ থেকে এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটরগুলো আক্রান্তদের সেবার কাজে ব্যবহার করতে পারব।”

রোমিও জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে এলাকার চেনা-পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কারও কোনও সমস্যা থাকলে এখানকার বন্ধুদের জানাচ্ছেন। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাচ্ছেন। প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই সবটা সামলাচ্ছেন টিম-রোমিও।

অন্য বিষয়গুলি:

Turkey Gobordanga oxygen concentrator
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy