চৈতি বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।
ফের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল বনগাঁ ব্লকের এক তরুণীর।
ব্লক জুড়ে মশাবাহিত এই রোগের দাপট কমার লক্ষণ নেই। জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে, প্রশাসনের তরফে মশা মারার কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রবিবার ভোরে মারা গিয়েছেন আকাইপুর পঞ্চায়েতের আইটপাড়ার বাসিন্দা চৈতি বিশ্বাস (২১)। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল থেকে দেওয়া চৈতির মৃত্যুর শংসাপত্রে ডেঙ্গির উল্লেখ রয়েছে। এই নিয়ে চলতি মরসুমে সরকারি ভাবে ডেঙ্গি আক্রান্ত তিন জনের মৃত্যু হল এই ব্লকে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের প্রায় সর্বত্র ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়াবাড়ি বেশি আকাইপুর, গাঁড়াপোতা, ছয়ঘড়িয়া ও গোপালনগর পঞ্চায়েত এলাকায়। রবিবার পর্যন্ত ব্লকে এ বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৭১।
মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার সকালে চৈতি জ্বরে আক্রান্ত হন। স্থানীয় চিকিৎসক দেখান। তাঁর মায়ের কথায়, ‘‘গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মেয়ের জ্বর ছিল না। শনিবার সকালে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করি। রবিবার ভোরে মারা যায়।’’ পঞ্চায়েতের অন্যান্য এলাকায় মশা মারার কাজ ভাল ভাবে হলেও মেয়ের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আইটপাড়ায় সে ভাবে মশা মারার কাজ হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চৈতির মা। স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য দাবি করেছে, আকাইপুরে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ চলছে।
বনগাঁ ব্লকে পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৬। ভোটের আগে থেকে এই সব এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ কার্যত হয়নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিলই। তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন হওয়ার পরেও ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ চলছে ধীর গতিতে। জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। একই পরিবারে এক সঙ্গে জ্বর-ডেঙ্গি আক্রান্ত রয়েছেন, এমন নজিরও রয়েছে। অনেকে আবার হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না গিয়ে স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়ে বাড়িতেই থাকছেন। সচেতনতার অভাবে বহু মানুষ ডেঙ্গি পরীক্ষা করাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
বনগাঁ ব্লক এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। বাড়ির মধ্যে জমা জল, অসংখ্য ডোবা, ঝোপ-জঙ্গল-আগাছা-কচুবন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, কচু গাছের ডগায় জল জমে থাকে। তাতে ডেঙ্গি মশার লার্ভা জন্মাতে পারে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, নিয়মিত মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে না। চুন-ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর কাজও নিয়মিত হচ্ছে না।
প্রশাসনের দাবি, স্বাস্থ্যকর্মী, আশাকর্মীরা রোজ এলাকায় সমীক্ষা করছেন। বাড়িতে কারও জ্বর হলে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। প্রতি সাত দিন অন্তর বাড়িতে মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। চুন, ব্লিচিং ছড়ানো, ঝোপ-জঙ্গল সাফাইয়ের কাজ চলছে।
“সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ১০০ জন ভর্তি আছেন। মাঝে জ্বর-ডেঙ্গিতে ভর্তি কমে এসেছিল। এখন প্রায় রোজই জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ে মানুষ ভর্তি হচ্ছেন। অবশ্য রোজই রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।’’
কৃষ্ণচন্দ্র বড়াই, বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার।
“আকাইপুর পঞ্চায়েত-সহ গোটা বনগাঁ ব্লকে ঘরে ঘরে জ্বর-ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। ওই পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকজন মারাও গিয়েছেন। ডেঙ্গি পরিস্থিতি ভয়াবহ। স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন সক্রিয় পদক্ষেপ করছে না।’’
অশোক কীর্তনিয়া, বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক।
‘‘জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ডেঙ্গি রুখতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
বিশ্বজিৎ দাস, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy