প্রতীকী ছবি।
গত বছর লক্ষ্মীপুজোর রাতের কথা ভাবলেই এখনও আতঙ্কিত বোধ করেন সত্যজিৎ বিশ্বাস।
হাবড়ার প্রফুল্লনগর বিদ্যামন্দির স্কুলে পড়ান বছর আটান্নর মাস্টারমশাই। বললেন, ‘‘গতবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরে নাগাড়ে শব্দবাজি ফেটেছিল। তাণ্ডব এতটাই বেশি ছিল, বাড়িতে পোষা বিড়ালগুলো পর্যন্ত ভয়ে খাটের তলায় লুকিয়ে পড়ে। রাতে খাওয়া-দাওয়া করেনি। আমরা ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করেও স্বস্তিতে থাকতে পারিনি।’’
প্রায় ৪৫ বছর ধরে লক্ষ্মীপুজোর রাতে হাবড়া শহরে শব্দবাজির দাপট দেখে আসছেন তিনি। এ বার এখন থেকেই আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন। বললেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের কড়া নজরদারি ও টহলেই শব্দবাজির তাণ্ডব কমতে পারে।’’
সত্যজিতের মতো হাবড়া শহরের অনেক বাসিন্দাই এখন থেকে লক্ষ্মীপুজোর রাতের কথা ভেবে আতঙ্কিত। শহরবাসীর অভিজ্ঞতা, লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে যায় শব্দবাজির তাণ্ডব। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বেশিরভাগ মানুষ ভয়ে নিজেদের ঘরবন্দি রাখেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোন না। লক্ষ্মীপুজোর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতেও মানুষ যেতে ইতস্তত করেন। রাস্তাঘাট শুনশান চেহারা নেয়। চারিদিকে বারুদের গন্ধ ও কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়।
বাসিন্দারা জানালেন, যে বছরগুলিতে পুলিশ-প্রশাসন আগে থেকে নজরদারি, ধরপাকড় শুরু করে, সে বার তাণ্ডব কিছুটা কমে। শহরের বাসিন্দা, চিকিৎসক দীপক কুণ্ডু বলেন, ‘‘শব্দবাজি সম্পর্কে মানুষ এখনও সচেতন হননি। রাজ্যের বেআইনি বাজি কারখানাগুলি এখনও বন্ধ করা যায়নি। ফলে এখানকার লোকজন হাতে শব্দবাজি পেয়ে যাচ্ছেন। লক্ষ্মীপুজোর রাতের কথা ভেবে এখন থেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।’’
হাবড়া বাজার, কামারথুবা, হাটথুবা, আশুতোষ কলোনি, আক্রামপুর, ইতনা কলোনি, ডহরথুবা, বাণীপুর, প্রফুল্লনগর, কইপুকুর, প্রফুল্লনগর, শ্রীনগর, চোংদা, জয়গাছি, নাংলা, বাউগাছি, কুমড়া, গোয়ালবাটি সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দেদার শব্দবাজি ফাটে। অন্য বছরগুলিতে শব্দবাজির দাপট কমাতে লক্ষ্মীপুজোর আগে পুরসভার তরফে পদক্ষেপ করা হয়। বৈঠক করে ব্যবসায়ীদের শব্দবাজি বিক্রি না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পুরসভা ও পুলিশের তরফে শব্দবাজি বিক্রি ও ফাটানো বন্ধ করতে মানুষকে সচেতন করতে লাগাতার প্রচারও চালানো হয়। সেই সঙ্গে চলে ধরপাকড়। এ বার এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। অথচ শুক্রবার লক্ষ্মীপুজো। হাবড়া থানার আইসি গৌতম মিত্র বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর বিসর্জন বুধবার শেষ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে আমরা শব্দবাজি বিক্রি ও ফাটানো বন্ধ করতে লাগাতার তল্লাশি শুরু করব। একই সঙ্গে মানুষকে সচেতন করা হবে।’’ পুরপ্রশাসক নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘শব্দবাজি নিয়ে মানুষকে বোঝাতে বৃহস্পতিবার থেকে প্রচার কর্মসূচি চলবে। একই সঙ্গে নজরদারি চালানো হবে।’’
এ দিকে, প্রশাসন এখনও নড়ে না বসায় গোপনে চোরাগোপ্তা শব্দবাজি মজুত ও বিক্রি হতে শুরু করেছে বলে বাসিন্দারা জানালেন। অতীতে শব্দবাজি উদ্ধার করতে গিয়ে তা ফেটে কয়েকজন পুলিশ কর্মীও গুরুতর জখম হয়েছিলেন এখানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy