কারখানার শ্রমিকেরা নোটিস দেখছেন। জগদ্দলে। ছবি: মাসুম আখতার
কথা ছিল, ছট পুজোর জন্য শ্রমিকদের বকেয়া বেতন (হপ্তা) মেটানো হবে সোমবার। কিন্তু সোমবার হপ্তা পাননি শ্রমিকেরা। দু’এক দিনের মধ্যে তা মিলবে বলে জানানো হয়।
মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকেরা কাজে গিয়ে দেখেন, কর্তৃপক্ষ কারখানার ফ্লেক্স ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে ছট পুজোর মুখে জগদ্দলের এআই চাঁপদানি কারখানার প্রায় ৮০০ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়লেন। কারখানার আর একটি ইউনিট গত সপ্তাহে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে কারখানাটি পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে গেল। এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মেসেজেরও উত্তর আসেনি।
ছট পুজোর মুখে বকেয়া না মিটিয়ে কারখানা বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে শ্রমিক মহল্লায়। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। তৃণমূলের অভিযোগ, মিল বন্ধে এলাকার বিজেপি সাংসদ অর্জুনের কারসাজি রয়েছে। অর্জুনের পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের গুন্ডামিতেই বন্ধ হল কারখানা। সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস সাঁটানো ছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে রাজি হননি।
জগদ্দলের এই মিলটি বহু পুরনো। এখানে পাট থেকে বিভিন্ন ধরনের কাপড় তৈরি হয়। এই ইউনিটটির নাম ‘ফাইন ইউনিট।’ কারখানার অন্য ইউনিটটি হল ‘ফ্লেক্স ইউনিট।’ এখানে ফ্লেক্স ছাপানোর মূল ‘ফাইবার সিট’ তৈরি হয়। ফাইন ইউনিটে প্রায় ৯০০ শ্রমিক কাজ করতেন। ফ্লেক্স ইউনিটে শ্রমিকের সংখ্যা ৮০০। দু’টি ইউনিটের প্রায় পাঁচশো শ্রমিক ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের অবসরকালীন পাওনাগন্ডা মেটানো হয়নি বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা অজিতকুমার ঘোষ বলেন, “কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করে কারখানা বন্ধ করে দিলেন। উৎসবের মরসুমে বোনাস দেওয়া দূরের কথা, শ্রমিকদের হপ্তা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। দীপাবলির আগে হপ্তা দেওয়ার কথা ছিল। তা-ও দেওয়া হয়নি। নভেম্বরের ৩ তারিখ একটা হপ্তা দেওয়ার কথা মিল কর্তৃপক্ষই বলেছিলেন। তা-ও দেওয়া হয়নি। পরে বলা হয়, সোমবার দেওয়া হবে। সেটাও হয়নি।’’তিন দিন পরেই ছট পুজো। শ্রমিকদের বেশিরভাগই বিহারের বাসিন্দা। টাকা না পেলে উৎসবের মরসুমে আতান্তরে পড়লেন তাঁরা। সোমবারই তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন, দু’এক দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে বকেয়া।
কারখানার শ্রমিক নগেন্দ্র সিংহ বলেন, “রোজকার মতো মঙ্গলবার সকালে কাজে যাই। দেখি, কারখানার গেট বন্ধ। সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস সাঁটানো হয়েছে। আমরা গরিব মানুষ। এমনিতেই হপ্তা না পেয়ে অবস্থা খারাপ। তার মধ্যে বকেয়া না দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হল। এখন কী করে চলবে জানি না।”
ভাটপাড়ার তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম বলেন, “ওই মিলে অর্জুন সিংহের শেয়ার আছে। শ্রমিক ইউনিয়ন দখলে সুবিধা করতে না পেরে নোংরা রাজনীতি শুরু করেছেন। যে সব মিল সুষ্ঠু ভাবে চলছে, সেগুলিকে বন্ধ করে শ্রমিকদের তাতানোর খেলা শুরু করেছেন উনি। আমরা প্রশাসনের সব স্তরেই জানিয়েছি। আলোচনা করে মিল খোলার চেষ্টা চলছে।”
মিলে তাঁর শেয়ার আছে বলে মানতে চাননি অর্জুন। তাঁর বক্তব্য, “কারখানার মধ্যে ঠিকাদারি নেওয়ার জন্য তৃণমূল ঝামেলা করছে। মিলটির অবস্থা এমনিই খারাপ ছিল। তবুও শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তৃণমূলের লোকেরা কারখানার ম্যানেজারকে থানার সামনে মারধর করেছে। আমার মনে হয় না ছট পুজোর আগে মিল খুলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy