হরিণের চামড়া-সহ গ্রেফতার এক পাচারকারী। নিজস্ব চিত্র।
বন দফতর ও পুলিশের লাগাতার নজরদারিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একটি বন্যপ্রাণী পাচার চক্র ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠছিল সুন্দরবনে। রাতের অন্ধকারে দুর্ভেদ্য জঙ্গলে ফাঁদ পেতে বিভিন্ন লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের ধরত পাচারকারীর দলটি। কখনও জীবিত কখনও আবার মৃত পশুর চামড়া মোটা টাকার বিনিময়ে ভিন্ রাজ্যে পাচার করত তারা। গত দিন পনেরো আগে সুন্দরবনে এ রকমই একটি চক্রের হদিশ পায় বনদফতর।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সহকারি বিভাগীয় বনাধিকারিক (এডিএফও) অনুরাগ চৌধুরী বেশ কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে ক্রেতা সেজে বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের একটি দলকে পাকড়াও করেন। বনদফতর সূত্রে খবর, কুলতলির কাঁটামারি এলাকা থেকে ৯টি তক্ষক উদ্ধার হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪ পাচারকারীকে। ধৃতেরা হল, অসিত শিলুই, কৃষ্ণপদ মণ্ডল, পরিতোষ নস্কর এবং অর্ধেন্দু বৈদ্য। তারা সকলেই কুলতলি থানার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার রাতেই ফের অভিযান চালিয়ে নামখানার সীমাবাঁধ এলাকা থেকে চারটি হরিণের চামড়া-সহ এক ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন বন দফতরের আধিকারিকরা। ধৃত মনোরঞ্জন জানা নামখানার দ্বারিকনগর এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।
বন দফতর সূত্রে খবর, দিন পনেরো আগেই পাচারকারী দলের ব্যাপারে তথ্য আসতে শুরু করে। দলটিকে হাতেনাতে ধরতে ওৎ পেতে বসে থাকে বন দফতর। কিন্তু কোনও ভাবেই তাদের নাগাল না পাওয়ায় এডিএফও স্থির করেন তিনি নিজেই ক্রেতা সেজে দলটির সঙ্গে দেখা করবেন।
তক্ষক-সহ ধৃত চার। নিজস্ব চিত্র।
বিভিন্ন সূত্র মারফৎ খবর নিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ৯টি তক্ষক কেনার নাম করে টোপ দেন অনুরাগ। কথা ছিল বৃহস্পতিবার রাতে কুলতলির একটি জায়গায় দেখা করে তক্ষক ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হবে। অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে অনুরাগ পাচারকারীদের ধরতে ওৎ পেতে থাকেন। কিন্তু তাঁদেরকে বারংবার ঘোরাতে থাকে পাচারকারীরা। অবশেষে ঠিক হয় কাঁটামারি এলাকায় দেখা করে ১০ লাখ টাকা নিয়ে তক্ষকগুলোকে তুলে দেবে তারা। সেই মত বন দফতরের আধিকারিকরা কাঁটামারির একটি উচ্ছে ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে পাচারকারীদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ চার জনকে আসতে দেখেই উচ্ছে ক্ষেত থেকে বনআধিকারিকরা বেরিয়ে এসে তাদের ঘিরে ফেলেন। তাদের কাছ থেকে একটি লোহার খাঁচায় ভরা ৯টি তক্ষক উদ্ধার হয়। আধিকারিকদের অনুমান তক্ষকগুলি বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা হয়েছিল বিক্রির জন্য।
অন্য দিকে, নামখানা থেকে একটি গাড়িতে করে হরিণের চামড়া কলকাতায় পাচার হওয়ার খবরও জানতে পারে বন দফতর। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নামখানার সীমাবাঁধ এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পের কাছ থেকে এক জনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন বনাধিকারিকরা। আর এক পাচারকারী পালিয়ে যায়। গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় চারটি হরিণের চামড়া।
এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) মিলন মণ্ডল বলেন, “ক্রেতা সেজে আমাদের দফতরের আধিকারিকরা সুন্দরবনের কুলতলি ও নামখানা থেকে ৯টি তক্ষক ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করেছে। মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা রুজু হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত বাকিদের খোঁজ চালানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy