Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Fire Accident

পনেরো বছরে তিন বার আগুন, সন্তোষপুরে তবু হুঁশ ফেরেনি কারও

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, আগুনের লেলিহান শিখায় স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেডের প্রায় ১৫০ ফুট অংশ পুড়ে গিয়েছে।

A Photograph of the accident in Santoshpur

অসহায়: ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বাসস্থান ও দোকান। পরের দিন ধ্বংসস্তূপে এক দৃষ্টিহীন ব্যক্তি। শুক্রবার, সন্তোষপুর স্টেশনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:০৬
Share: Save:

গত পনেরো বছরে মোট তিন বার বিধ্বংসী আগুন লেগেছে শিয়ালদহ-বজবজ শাখার আক্রার সন্তোষপুর স্টেশনে। কিন্তু, তার পরেও রেল বা স্থানীয় প্রশাসন— কারও তরফেই অঘটনের পুনরাবৃত্তি এড়াতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলেই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বছরের পর বছর প্ল্যাটফর্মের লোহার বেড়ার ধার ঘেঁষে, নিকাশি খাল কার্যত বুজিয়ে দিয়ে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক ঘুপচি দোকানঘর। টিনের বেড়ার ভিতরে পলিথিন এবং ভিনাইলের আস্তরণ দিয়ে সাজানো হয়েছে সেই সব দোকান। সেখানে না আছে বিদ্যুতের বৈধ সংযোগ, না আছে অগ্নি-সুরক্ষা মানার দায়। ফলে, খাবারের দোকানে যেখানে রান্নাবান্না হচ্ছে, তার পাশেই গজিয়ে উঠেছে জামাকাপড়, ব্যাগ অথবা মোবাইলের বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান।

রেল সূত্রের খবর, দৈনিক প্রায় ৫০-৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন সন্তোষপুর স্টেশন দিয়ে। দু’টি ট্রেনের মাঝের ব্যবধানে সারা দিনই ভিড়ে জমজমাট থাকে স্টেশন। এই ভিড়ের টানেই বেপরোয়া গতিতে দোকান আর ঝুপড়ি গজিয়ে উঠেছে ওই স্টেশন চত্বরে। নিত্যযাত্রী এবং স্থানীয়দের অবশ্য অভিযোগ, এর পিছনে প্রচ্ছন্ন ‘প্রশ্রয়’ রয়েছে রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, আগুনের লেলিহান শিখায় স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেডের প্রায় ১৫০ ফুট অংশ পুড়ে গিয়েছে। আগুনের তাপে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া শেড ছাড়াও পুড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের তার এবং আলো। প্রচণ্ড তাপে ঝলসে গিয়েছে দু’টি নলকূপ এবং একটি ৩৫ ফুট উঁচু কদম গাছ। অন্তত ৩০টি দোকান যে ভাবে মিনিট কুড়ির মধ্যে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে, তাতে ঘটনাটি যেন এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না কারও। সেলিম মোল্লা, আলাউদ্দিন খানরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই খোলা আকাশের নীচে কাটাচ্ছেন। আসন্ন ইদ উপলক্ষে বিক্রি করার জন্য দোকানে নিয়ে আসা নানা মূল্যবান সামগ্রী থেকে ব্যাঙ্কের পাসবই, আধার কার্ড, ক্যাশ বাক্স— আগুনের গ্রাস থেকে কিছুই প্রায় বাঁচাতে পারেননি তাঁরা। আগুনের তাপে ঝলসে গিয়েছে কাছাকাছি থাকা একটি অতিথিশালার নিকাশি নালা ও জলের সমস্ত পাইপ। ভেঙে গিয়েছে কাচের জানলাও।

স্টেশন চত্বরে এ ভাবে কেন বাজার বসবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন নিত্যযাত্রীদের অনেকেই। এর ফলে তো তাঁদেরও প্রাণের ঝুঁকি বাড়ে। রেল এবং স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য এ নিয়ে দায় ঠেলেছেন পরস্পরের ঘাড়ে। শিয়ালদহ ডিভিশনের এক রেলকর্তা বললেন, ‘‘স্থানীয় মদতেই রেলের জমি দখল করে এ ভাবে দোকানিদের রমরমা চলে। উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলেই আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দেয়। তাই সব সময়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য রেল পুলিশ ও রেলরক্ষী বাহিনীর ঢিলেঢালা মানসিকতার সমালোচনা করেছেন।

স্থানীয় বাজার কমিটির সম্পাদক আজম খান এবং মহেশতলা পুরসভার স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি তাপস হালদার জানান, মানবিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুরসভার তরফে সাহায্য করা হবে। তবে, ভবিষ্যতে অগ্নিকাণ্ড এড়াতে কী ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তার সদুত্তর মেলেনি রেল বা পুর প্রশাসন কারও কাছেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Accident Santoshpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy