Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
দু’দিনে বন্ধ দুই মিল, কর্মহীন কয়েক হাজার
Reliance

আচমকাই বন্ধের নোটিস রিলায়্যান্সে

রবিবার রাতে আচমকা বন্ধ করে দেওয়া হয় ভাটপাড়ার রিলায়্যান্স জুটমিল। অভিযোগ, রাতের শিফটের শ্রমিকদের মিলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রবিবার দিনভর শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে গোলমাল চলে।

বন্ধ মিল। তারই প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ। ছবি: মাসুম আখতার

বন্ধ মিল। তারই প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ। ছবি: মাসুম আখতার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:১১
Share: Save:

ফের বন্ধ হয়ে গেল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের আরও একটি চটকল। কর্মহীন হলেন প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক।

রবিবার রাতে আচমকা বন্ধ করে দেওয়া হয় ভাটপাড়ার রিলায়্যান্স জুটমিল। অভিযোগ, রাতের শিফটের শ্রমিকদের মিলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রবিবার দিনভর শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে গোলমাল চলে।

চটকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় তাঁরা মিল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। অন্য দিকে, শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকপক্ষ জোর করে দ্বিগুণ কাজ করাতে চাইছেন। সোমবার সকালে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা মিলের সামনে ঘোষপাড়া রোড অবরোধ করেন। ব্যারাকপুর-কাঁচরাপাড়া গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটিতে আটকে পড়ে প্রচুর যানবাহন। পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। গোলমালের আশঙ্কায় কারখানার আশেপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দিন দু’য়েক আগে শ্যামনগরে উইভারলি জুটমিলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে গত দু’সপ্তাহে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে মোট চারটি চটকল বন্ধ হল। তার মধ্যে দু’টি চটকলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে একের পর মিল বন্ধ হতে থাকায় ভোটের আগে সঙ্কট বাড়ছে চটশিল্পে। বিপাকে পড়ছেন হাজার হাজার শ্রমিক। চটকল বন্ধের পিছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ আছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে শিল্পাঞ্চলে।

রিলায়্যান্স ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম বড় চটকল। লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে গত জুলাই মাসে নতুন করা চালু হয় চটকলটি। শ্রমিক এবং তাদের ইউনিয়নগুলির নেতৃত্বের দাবি, রবিবার সকাল থেকেই চটকলে গোলমাল শুরু হয়। মিলের আইএনটিটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক রাজেশ পাসোয়ান বলেন, “চটকল কর্তৃপক্ষ উৎপাদন দ্বিগুণ করতে বলেন। তা হলে আরও বেশি যন্ত্র চালানো দরকার। কিন্তু মিল কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি নন। তা নিয়ে ড্রয়িং বিভাগের কর্মীরা প্রতিবাদ জানান। গোলমাল বাধে।”

রাজেশ জানান, চটকল কর্তৃপক্ষ ড্রয়িং এবং সিলেকশন বিভাগের কর্মীদের জানানো হয়, তাঁরা যতটা কাজ করবেন, ততটাই মজুরি পাবেন। তা নিয়ে গোলমাল চূড়ান্ত আকার নেয়। অন্যান্য শ্রমিকেরাও প্রতিবাদে সামিল হন। চটকলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ইউনিয়নের নেতারা মিলে এসে আলোচনা করে ফের কাজ শুরু করেন। অভিযোগ, তারপরেই মিল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সমস্ত কর্মীদের তুলে নেন।

সে ভাবেই সকাল এবং দুপুরের শিফটে কাজ হয়েছে। রাত ১০টার শিফটের কাজের জন্য চটকল কর্তৃপক্ষ কোনও বাঁশি বাজাননি। দুপুরের শিফটের কর্মীরা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও মিলের ভিতরে ঢোকার দরজা খোলা হয়নি। ফলে রাতের শিফটের শ্রমিকেরা ভিতরে ঢুকতে পারেননি। মিল কর্তৃপক্ষ এরপরে চটকল বন্ধ রাখার নোটিসও সেঁটে দেন দরজায়।

মিলের শ্রমিক নেতা মহম্মদ ইসলাম বলেন, “মিল কর্তৃপক্ষ নানা অছিলায় চটকল বন্ধ করতে চাইছিলেন। সে জন্যই দ্বিগুণ কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ওঁরা জানেন, এমন বেআইনি নির্দেশে শ্রমিকেরা রাজি হবেন না।”

কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জুলাই মাসে যে চুক্তির পরে কারখানা চালু হয়েছিল, শ্রমিকেরা তা মানেননি। তাঁরা চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছিলেন না। ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ পণ্যের পরিমাণ বাড়ছিল।

রবিবার পর পর দু’টি শিফটে দু’টি বিভাগের কর্মীরা কাজ করেননি। সাড়ে ৪টের সময় শ্রমিক ইউনিয়নগুলির সঙ্গে মিটিং হলেও তা ফলপ্রসু হয়নি। সে জন্যই মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

রাজেশ বলেন, ‘‘একটা আলোচনায় ঐক্যমত না হলেই মিল বন্ধ করে দিতে হবে? আসলে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের গ্র্যাচুইটির টাকা মেটাননি মিল কর্তৃপক্ষ। সে সব নিয়ে দাবি তোলাতেই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Reliance Jute Mill unemployment jobless
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy