ধৃত মৌমিতা দাস ও অভিজিৎ সাহা। —নিজস্ব চিত্র।
কলসেন্টারের আড়ালে চলা আর্থিক প্রতারণা চক্রের হদিস পেল বনগাঁ সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। মঙ্গলবার পুলিশ ওই চক্রের পান্ডা-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে মধ্যমগ্রাম থেকে। ধৃতদের নাম অভিজিৎ সাহা ও মৌমিতা দাস। বনগাঁ সাইবার ক্রাইম থানার আধিকারিকদের দাবি, অভিজিৎ ওই চক্রের পান্ডা। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। ধৃতদের বুধবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
সাইবার ক্রাইম থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা অভিজিৎ প্রায় তিন বছর ধরে মধ্যমগ্রামের বৈকুণ্ঠ রোড এলাকায় ভাড়া বাড়িতে কল সেন্টার চালাচ্ছিল। সেখানে কাজ করতেন কয়েক জন। পুলিশ সেন্টারটি সিল করে দিয়েছে। বাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নোটিস দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ২৯ জুন বনগাঁ শহরের প্রতাপগড় এলাকার বাসিন্দা দিলীপ বণিক একটি অচেনা নম্বর থেকে এক মহিলার ফোন পান। দিলীপ বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ব্যবসা করেন। অভিযোগ, ফোনে ওই মহিলা দিলীপের কাছে একটি ফাইনান্স সংস্থার কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়ে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন। ১০ লক্ষ টাকার ঋণ পেতে ওই মহিলা দিলীপকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেয়। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ব্যাঙ্কের পাস বই ইত্যাদির ছবি তুলে পাঠাতে বলে। দিলীপ সে সব পাঠিয়ে দেন। এরপরে চার দফায় দিলীপের কাছ থেকে প্রায় ২৮ হাজার টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু ঋণ পাননি দিলীপ। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে ৫ অগস্ট বনগাঁ সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
তদন্তকারীরা জানান, যে ফোন নম্বর থেকে মহিলা ফোন করেছিল, তার ডিটেল রেকর্ড ও চক্রটি যে অ্যাকাউন্ট নম্বর দিলীপকে দিয়েছিল, তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তদন্তে নেমে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ নিশ্চিত হয়, মধ্যমগ্রামের ওই কল সেন্টারের আড়ালেই প্রতারণা চক্র চলছিল। মঙ্গলবার সেখানে হানা দিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের জেরা করে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা প্রতারণার কথা জানা গিয়েছে। বাকি যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
কী ভাবে পাতা হত ফাঁদ?
মৌমিতার বাড়ি দত্তপুকুরে। সেই মূলত ফোন করত অপরিচিত লোকজনকে। সঙ্গে আরও কয়েক জন ছিল। এদের ফোন করার কায়দা পুরোপুরি ‘জামতারা’ ওয়েব সিরিজ়ের আদলে। এক জন মহিলা যে কোনও মোবাইল নম্বরের শেষ পাঁচটি নম্বরে শূন্য থেকে শুরু করে ৯৯ পর্যন্ত নম্বরে ফোন করত। ওয়েব সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়নের প্রশিক্ষণ শিবিরের ঢঙে। পরের জন তার পরের সংখ্যা থেকে ফোন শুরু করত। এ ভাবে ফোন করে কোনও ব্যক্তি ফাঁদে পা দিলে পরবর্তী পর্যায়ে অভিজিৎ বিষয়টি দেখাশোনা করত।
কী প্রক্রিয়ায় টাকা নেওয়া হত?
প্রথমে বলা হত, একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পরিচয়পত্রের ছবি তুলে পাঠাতে। তারপর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরে প্রসেসিং ফি, টিডিএফ ফি, ঋণের প্রেক্ষিতে ইনসিওরেন্স ফি, আরবিআই ফি বাবদ বিভিন্ন পর্যায়ে টাকা পাঠাতে বলা হত।
কেন মানুষ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না নিয়ে এই সব সংস্থার চক্করে পা দেন?
তদন্তকারীরা মনে করছেন, চক্রের পক্ষ থেকে মানুষকে ব্যাঙ্কের তুলনায় অনেক কম সুদে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। নথিপত্র পরীক্ষা করার বিষয় থাকে না। নিজের অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠিয়ে দিলে সেখানে সরাসরি ঋণের টাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকে। এ সব প্রলোভনে পড়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
এ দিকে, অভিজিতের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, অভিজিৎ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত। যদিও যুব তৃণমূল সে কথা অস্বীকার করে দাবি করেছে, অভিজিৎ তাদের কর্মী নয়। মাঝে মধ্যে মিছিলে এসেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy