মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ খণ্ডন করে পাল্টা তোপ বিরোধী দলেন নেতাদের।
তৃণমূলের শহিদ সমাবেশ শেষ হতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা আক্রমণ করলেন বিরোধীরা। বিজেপি, কংগ্রেস সিপিএম নেতাদের কেউ সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, কেউ আবার পাল্টা কটাক্ষে বিঁধেছেন। মমতার ট্রেন কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের খোঁচা, ‘‘ওদের ডিম ভাত খাওয়ার লোক হয়নি।’’ বাম জমানাতেও কাটমানি খেয়েছেন নেতারা— মমতার এই অভিযোগের জবাবে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে কমিশন গঠনের কথা বলেছেন সুজন চক্রবর্তী। ব্যালট ফেরানো নিয়ে তৃণমূল নেত্রীকে তীব্র আক্রমণ করেছেন অধীর চৌধুরী।
কাটমানি নিয়ে রাজ্য জুড়েই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে জেরবার তৃণমূল। জেলায় জেলায় অনেক নেতা কাটমানি ফেরতও দিয়েছেন। শনিবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেছিলেন, কলকাতাগামী বাস থামিয়ে তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে কাটমানি ফেরত চাইবেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। দু’-একটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটলেও বিজেপির বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার সামগ্রিক অভিযোগ নেই। কিন্তু এ দিন ধর্মতলায় শহিদ স্মরণের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই নিয়ে এসেছেন কাটমানির প্রসঙ্গ। বামেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, ‘‘৩৪ বছর ধরে বামেরা কত টাকা ফিরিয়েছে? পঞ্চায়েতে ছিল, মিউনিসিপ্যালাটিতে ছিল, এমএলএ ছিল, এমপি-তে ছিল, কত টাকা ফিরিয়েছে?’’ অর্থাৎ তৃণমূল নেত্রীর সরাসরি অভিযোগ, বাম জমানায় নেতা-মন্ত্রীরাও কাট মানি খেয়েছেন, কিন্তু এক টাকাও ফেরাননি।
জবাবে সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘উনি বিরোধী দলে থাকাকালীনও কাটমানির কথা বলতে পারেননি। এটা বলার যোগ্যতা আপনার বা আপনার দলের নেই। আপনার তো খুঁচিয়ে ঘা করা অভ্যাস আছে। যদি মনে হয় আমাদের দলের কেউ কাটমানি খেয়েছেন, তা হলে কমিশন করুন। কমিশনে প্রমাণ করে দেখান। এ জন্মে আপনি পারবেন না, তিন জন্মেও পারবেন না।’’
শহিদ স্মরণের সভার আগের দিন থেকেই বিজেপি বনাম তৃণমূল সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। দিলীপ ঘোষের হুঁশিয়ারির জেরে অশান্তির আশঙ্কাও করছিলেন রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। তবে শহিদ স্মরণ সুষ্ঠু ভাবে মিটলেও বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগতে ছাড়েননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘অনেক ট্রেন তুলে নেওয়া হয়েছে। বাস আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। যাতে আমাদের কর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে না পারেন, সেই চেষ্টা করেছে বিজেপি।’’ তবু প্রচুর লোক হয়েছে হয়েছে বলে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পডু়ন: ‘কাটমানি’ সামলাতে ‘ব্ল্যাকমানি দাওয়াই, দাবি ব্যালট ফেরানোর, একুশের মঞ্চে তীব্র আক্রমণাত্মক মমতা
সভার পর বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানতাম লোক আসবে না।’’ ট্রেন বাতিলের অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি পাল্টা বলেন, ‘‘অন্যান্য দিনের তুলনায় বরং বেশি ট্রেন দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের ট্রেনে বাড়তি কামরা যোগ করা হয়েছে। ডিম রান্না করেছে, খাওয়ার লোক নেই। পুলিশ ডিম-ভাত পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু ওঁদের লোক নেই। আমরা কী করব? আগের বারের চার ভাগের এক ভাগ লোকও হয়নি।’’
প্রায় একই রকম কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘গাড়ি এসেছে, লোক নেই। যাঁরা এসেছেন, তাঁদের উচ্ছ্বাস নেই। উনি যখন বক্তৃতার নামে ধমক দিচ্ছেন, তখন লোক মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ওনার বক্তব্য শোনার চেয়ে চিড়িয়াখানায় গিয়ে জীবজন্তু দেখতে বেশি পছন্দ করেছেন।’’
আরও পডু়ন: কেন্দ্রের সমান মাইনে চাইলে কেন্দ্রে চলে যান, সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা মমতার
এ বারের শহিদ স্মরণে তৃণমূলের সবচেয়ে বড় দাবি ছিল, নির্বাচনে ইভিএম তুলে দিয়ে ব্যালট ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই দাবির পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘রাজ্যে পুরভোট এবং পঞ্চায়েত ভোট আমরা ব্যালটে করব।’’ জবাবে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘ব্যালটে ভোটের স্বাদ আমরা জানি। গত পঞ্চায়েত ভোটে ৩৪ শতাংশ মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ২০ হাজার আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিরপেক্ষ নির্বাচন করবেন, এটা কেউ বিশ্বাস করেন না। কোনও বিরোধী দলই বিশ্বাসই করেন না। কারণ, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিংসা, সংঘাত, ভয়-ভীতি, বিনা দোষে গ্রেফতার— এ সব কিছুর মধ্যে দিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন। অতএব, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা নীতি-আদর্শের কথা শুনব না। উনি ব্যালট না বুলেটের কথা বলেছেন, তা বুঝতে পারছি না।’’
শুক্রবারই দিল্লিতে টলিউডের এক ঝাঁক তারকা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন অভিনেত্রী অঞ্জনা বসুকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘এক অঞ্জনা বসুকে আর কত বার দলে যোগ দেওয়াবেন বিজেপি নেতারা?’’ জবাবে এ দিন অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু বলেন, ‘‘আমার ইন্ডাস্ট্রির ১২ জন দলে যোগ দিয়েছেন। সেই জন্যই আমি দিল্লিতে গিয়েছিলাম। বার বার করে একটা মানুষ একই দলে কী ভাবে যোগ দিতে পারেন? হয়তো তৃণমূলে এটা হয়, তাই উনি বলেছেন। হয়তো বিজেপিতে গিয়েছি বলেই এমন কথা বলছেন দিদি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy