একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
সংশয় তৈরি করেছিলেন তিনি নিজেই। শনিবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ দেখতে এসে ছুটির দিনে দলীয় সমাবেশে ভিড় কত হবে তা নিয়ে চিন্তাও ব্যক্ত করেছিলেন। সেই তিনিই রবিবাসরীয় সমাবেশে খুশি। বক্তৃতা করতে উঠে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবিও করলেন, এ দিনের ২১ জুলাইয়ে ভিড় হয়েছে আগের চেয়ে বেশি। এতটাই যে, ভিড়ের চাপে দু’-তিন লক্ষ লোক রেড রোডেই আটকে পড়েছেন। যা দেখে মনে হয়েছে আলাদা একটি ব্রিগেডের সভা হতে পারে।
তবে বিরোধীদের কটাক্ষ, ২৬ বছরে এত কম ভিড় কখনও হয়নি তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে। ভিড় যা ছিল, তা কেবল মঞ্চের উপরে। এই চাপানউতোর থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে এর আগে তৃণমূলের এই সমাবেশের ভিড়ের বহর নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তুলতেন না। এ বার সে প্রশ্ন উঠছে।
শনিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ছুটির দিন বলে সমাবেশে পথ চলতি মানুষ পাওয়া যাবে না। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, লোক যাতে আসতে না পারেন, তার জন্য অন্য দিনের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ফলে মূল ভরসা ছিল সংগঠিত ভিড়।
ভিড়-চিত্র: ফারাক চার মিনিটের। রবিবার ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
এ দিনও বক্তৃতা করতে উঠে মমতা বলেন, অন্য দিনের চেয়ে কম ট্রেন চালানো হচ্ছে। বহু জায়গায় নির্ধারিত ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিজ্ঞতা অবশ্য মিশ্র। মেট্রো, ট্রেন এবং লঞ্চঘাটে এ দিন প্রবল ভিড় চোখে পড়েছে অনেকেরই। জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্যবারের তুলনায় এ বার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস এসেছে কম। তবে সূত্রের খবর, লোকেরা বিভিন্ন কারণে এ বার বাসের বদলে ট্রেনে চড়ে এসেছেন। ফলে ট্রেনে ভিড় ছিল চোখের পড়ার মতো। যদিও এ দিন সভা শুরু হওয়ার আগেই বহু লোককে সভাস্থল ছেড়ে যেতেও দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত, প্রবল গরম এবং রোদের তেজের কারণে অনেকেই সভাস্থল থেকে দূরে ছায়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফলে রাস্তা বিক্ষিপ্ত ভাবে ফাঁকা থাকলেও লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন ফুটপাথের ছায়ায়। গরমের কারণেই বহু মানুষ সভাস্থল ছেড়ে গিয়েছেন আগেই।
বৃষ্টি হওয়া ২১ জুলাই সমাবেশের অঙ্গ। প্রায় প্রতি বছরই বৃষ্টি হয় সভা শুরুর আগে এবং পরে। গত বছরও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির মধ্যে সভা হয়েছিল। এ বার খর রোদে। মমতা বলেন, ‘‘আজ অবশ্য সকালে বৃষ্টি হয়েছে। ’১১ সালের আগে পর্যন্ত মিটিংয়ে বৃষ্টি হত। আজ সূর্য তেজ দিচ্ছে। বলছে আমি তোমাদের আলো সরবরাহ করছি। উঠে দাঁড়াও। রুখে দাঁড়াও।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সূর্য সরাসরি আমার মুখে তেজ দিচ্ছে। তেজোদ্দীপ্ত হচ্ছি। সেই তেজ আমার থেকে আপনাদের মধ্যে সরাসরি সঞ্চারিত হবে।’’
তৃণমূলনেত্রীর দাবি, ‘‘রেড রোড দিয়ে যখন আসছিলাম, দেখলাম দু’তিন লক্ষ মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। মনে হচ্ছিল, ব্রিগেডে আরও একটি সভার আয়োজন হয়েছে। সকলে এই পর্যন্ত পৌঁছতেও পারেননি।’’ এর পরেই বিজেপিকে নিশানা করে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘বনগাঁ থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে। বিজেপি ভাবছে ক্ষমতায় আছে, ট্রেন ওদের। ঘুঁটে পোড়ে, গোবর হাসে! এ ভাবে তৃণমূলের কর্মীদের আটকানো যায় না।’’
মঞ্চের সোজাসুজি ভিড় বেশ কিছু দূর ছড়ানো ছিল। ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত অনেকটাই চাপ চোখে পড়েছে। তবে মঞ্চের বাঁদিকে টিপু সুলতান মসজিদ সংলগ্ন ফুটপাথ দিয়ে লোক চলাচলে এ বার বিশেষ অসুবিধা হয়নি। ভিড়ের চাপে অন্যান্য বছর সেটা সম্ভব হয় না। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই বলেছিলেন, ‘‘আপনারা কেউ চলে যাবেন না। শেষ পর্যন্ত শুনবেন।’’ কিন্তু তাঁর বক্তৃতা চলাকালীনই ভিড় পাতলা হতে শুরু করে। সেই সময় মঞ্চ থেকে সোজা তাকালে ধর্মতলা মোড়ের পরে আর তেমন ভিড় ছিল না।
যদিও তৃণমূলনেত্রীর দাবি, ‘‘আজকের ২১ জুলাই সমাবেশ আগের চেয়ে অনেক বড় হয়েছে। কেউ কেউ ময়দানে বসে ভাষণ শুনছেন। খুব কায়দা করে মাইক লাগানো হয়েছে। যাতে সব জায়গা থেকে শোনা যায়। তৃণমূলের প্রদীপের আলো নেভেনি। এত তৃণমূল কর্মী কোথা থেকে এলেন? আমরা ট্রেন ভাড়া করিনি। সমাবেশের জন্য স্পেশাল ট্রেনও দেওয়া হয়নি। জায়গায় জায়গায় বাস আটকে দেওয়া হয়েছে। ’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘২৬ বছরে রেকর্ড সংখ্যক কম ভিড় হয়েছে এ বারের সমাবেশে। ডিম-ভাত সব নষ্ট হয়েছে। আমাদের বললে লোক পাঠাতাম। তাতে খাবার নষ্ট হতো না। দিদিমণি বুঝতে পারছেন তাঁর দলের গ্রহণযোগ্যতা কমছে। খেলা ঘুরছে। সে জন্যই সব দোষ এখন বিজেপি আর দিলীপ ঘোষের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিরোধীদের মতো আচরণ করছেন।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূলের সমাবেশে পুরো ভিড়টাই ছিল মঞ্চের উপরে। সামনে লোক ছিল না। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরাও চলে গিয়েছেন সভা শেষ হওয়ার আগেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy