Advertisement
E-Paper

‘মারা গেলে দায়িত্ব নেব’

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পুলিশের নৃশংসতা ও গুন্ডামির অভিযোগে সরব। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘পুলিশকে দিয়ে এই আন্দোলন থামানো যাবে না।’’

ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে অরুণিমা পাল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে অরুণিমা পাল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২৪
Share
Save

আন্দোলনরত মহিলা চাকরিপ্রার্থীর হাতে পুলিশের কামড়ের অভিযোগেই বুধবার বিতর্কের ঝড় উঠেছিল বিস্তর। তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এ নিয়ে জল আরও ঘোলা হল থানায় বন্দি চাকরিপ্রার্থী আন্দোলনকারীদের প্রতি পুলিশের ‘অসংবেদনশীল আচরণ ও মন্তব্যে’র অভিযোগকে কেন্দ্র করে।

সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেওয়া এক ভিডিয়ো-ফুটেজের মাধ্যমে (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘কামড়ে জখম’ মহিলার শুশ্রূষা দূরে থাক, হেয়ার স্ট্রিট থানার এক পদস্থ কর্তা উল্টে বলেছেন, কেউ মারা গেলে পুলিশই তার দায়িত্ব নেবে। প্রশ্ন উঠেছে, এমন অসংবেদনশীল কথা পুলিশ বলে কী ভাবে? যদিও নিজেদের কথা বা কাজে নিষ্ঠুরতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।

এরই মধ্যে আবার এ দিন আদালতের রায়ে ‘নৈতিক জয়’ দেখছেন আন্দোলনকারীরা। কারণ, পুলিশের কাজে বাধাদানের অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় তাঁদের ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হলেও, সেই অভিযোগ কোর্টে ধোপে টেকেনি। ব্যাঙ্কশাল কোর্টে জামিন পেয়ে ৩০ জনই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালত চত্বর থেকে বেরিয়েছেন।

ক্যামাক স্ট্রিটে তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের কাছে অবস্থানের জেরে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল ওই আন্দোলনকারীদের। ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটে উত্তীর্ণ ওই চাকরিপ্রার্থীদের বুধবার রাতে লালবাজার, হেয়ার স্ট্রিট, এন্টালি থানার মতো কয়েকটি জায়গায় রাখা হয়েছিল।

আন্দোলনকারীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হেয়ার স্ট্রিট থানার একটি ভিডিয়ো নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। তাতে এক পুলিশ অফিসারকে পকেটে হাত দিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে, তা মোটামুটি এ রকম:—

আন্দোলনকারী: এক জন অসুস্থ, সেটাও আপনাদের হাতে নেই!

পুলিশ: আপনারা ওখানে গিয়েছিলেন, ধরা পড়েছেন!

(আন্দোলনকারীদের সমস্বরে চিৎকারে পরের অংশ স্পষ্ট নয়।)

পুলিশ: কেউ মারা গেলে, তার দায়িত্ব আমরা নিয়ে নেব।

আন্দোলনকারী: আপনারা নিয়ে নেবেন!

পুলিশ: হ্যাঁ, একদম নিয়ে নেব। আপনারা লিখে নিন।

পুলিশের এই কথা এবং হাবভাব নিয়েই পরে সরব হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। মহিলা পুলিশকর্মীর ‘কামড়ে’ জখম চাকরিপ্রার্থী অরুণিমা পালকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গা-ছাড়া ভাব এবং টালবাহানার অভিযোগও উঠেছে। তবে অভিযুক্ত হেয়ার স্ট্রিট থানার অ্যাডিশনাল ওসি শচীন মণ্ডল বলেন, ‘‘কোন কথার প্রসঙ্গে কী বলা হয়েছে, তা না দেখিয়ে আমার মুখে কথা বসানো হয়েছে। পুলিশের বিষয়ে মিথ্যাচার চলছে।’’ তাঁর দাবি, দু’জন আন্দোলনকারীকে শুরুতেই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অরুণিমার বাধাতেই তাঁকে নিয়ে যেতে দেরি হয়। পরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ডাক্তার দেখানো হয়। শচীনের অভিযোগ, ‘‘আন্দোলনকারীরা পুলিশকে গালিগালাজ, অভিসম্পাত করছিলেন। সে-সব আমরাও রেকর্ড করেছি। প্রয়োজনে আদালতে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে। থানায় নাবালক অপরাধীদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় এসি ঘরে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের রাখা হয়েছিল। ওঁরা সেখানে ক্ষতি (ড্যামেজ) করেছেন।’’

এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ আদালত চত্বরে পুলিশের ভ্যান থেকে নামানোর সময়ে অরুণিমা বলেন, ‘‘দেখুন, আমাকেই গ্রেফতার করল। রক্ষকই ভক্ষক। পুলিশের কামড় খেয়ে পুলিশের হাতেই আমাকে গ্রেফতার হতে হল। আমাদের ঘুষি মেরেছে। মাথায় লাথি মেরেছে।...’’ অরুণিমার স্বামী এজলাসে ছিলেন। রাতে অরুণিমার মা অলকা পাল টিভি চ্যানেলে বলেন, ‘‘মেয়েকে পুলিশের কামড় এবং তার পরে পুলিশের ব্যবহারে খুব কষ্ট পেয়েছি। সারা রাত উৎকণ্ঠায় কেটেছে।’’

বিচারক শৌনক মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে সরকারি আইনজীবী ধৃত চাকরিপ্রার্থীদের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত চেয়েছিলেন। সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ ৩০ জন চাকরিপ্রার্থীই জামিন পান। চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীরা আদালতে পুলিশ তথা সরকারের অগণতান্ত্রিক ভূমিকা নিয়ে সরব হন। অন্য দিকে, সরকারি আইনজীবীরা বলেন, আন্দোলনকারীরা ‘আক্রমণাত্মক’ হতেই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। ব্যান্ডেজ বাঁধা হাত দেখিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা এর প্রতিবাদ করেন।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পুলিশের নৃশংসতা ও গুন্ডামির অভিযোগে সরব। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘পুলিশকে দিয়ে এই আন্দোলন থামানো যাবে না।’’ সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ কামড়ে দিল, এক জন পুলিশ আধিকারিক বললেন, মরে গেলে দায়িত্ব আমাদের— (এর পরেও) কোনও ব্যবস্থা হবে না?’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মানবাধিকার শাখা সাহিনা জাভেদের নেতৃত্বে মৌলালিতে পথে নেমেছে। সিটুর রাজ্য নেতারা বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। নতুন নিয়োগ নিয়ে জটিলতা কাটাতে হাই কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে এসইউসি। ছাত্র সংগঠন ডিএসও-ও প্রতিবাদে শামিল।

TET Protest TET TET Scam Camac street TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।