E-Paper

একই দিনে ধর্ষিত আর এক বালিকাও

প্রথম ঘটনায় অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে আলিপুরদুয়ার জেলার ওই এলাকায় দিনভর ছিল উত্তেজনা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন, বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসী।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৩
Share
Save

দু’জনেই ‘ধর্ষিত’ শুক্রবার। সাড়ে ছ’বছর বয়সি বালিকা বেঁচে নেই। প্রধান অভিযুক্তেরও মৃত্যু হয়েছে গণপ্রহারে। তবে ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়া অন্য অভিযুক্তের চরম শাস্তি চেয়ে শনিবার দিনভর অবরোধ-বিক্ষোভ চলল আলিপুরদুয়ার জেলার এক প্রান্তে। এ দিনই সেই জেলার ন’বছর বয়সি আর এক বালিকার উপরে হামলার কথা জানা যায়। মেয়েটি হাসপাতালে। তাকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে।

প্রথম ঘটনায় অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে আলিপুরদুয়ার জেলার ওই এলাকায় দিনভর ছিল উত্তেজনা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন, বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসী। রাস্তায় জ্বালানো হয় টায়ার। বন্ধ ছিল এলাকার সমস্ত দোকানপাট। ওঠে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। পুলিশি তদন্ত, এমনকি বিচারব্যবস্থায় তাঁদের বিশ্বাস নেই বলেও দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে স্থানীয় বিডিও এবং থানার আইসি-কে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আইন মানুষের জন্য। এরা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। কাজেই এদের বিচার হবে কী ভাবে?’’ তাই ঘটনায় ধরা পড়া অন্য অভিযুক্তকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তোলেন তাঁরা।

গ্রামবাসীদের বিক্ষোভে শামিল হন জেলারই অন্য এক নির্যাতিতার বাবা। ২০১৯ সালে দুর্গাপুজোর দশমীতে তার দেহ মেলে। ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে দু’জন ধরা পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘আদালতে ঘুরছি। বিচার পাচ্ছি না। এ দিন যখন জানতে পারলাম, একই ভাবে একটি ফুটফুটে মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে, নিজেকে ঘরে আটকে রাখতে পারিনি!’’

সাড়ে ছ’বছরের বালিকার ময়না তদন্ত এ দিন কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে হয়। কিন্তু সেখানকার একমাত্র ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ছুটিতে ছিলেন। ফলে, তিন সদস্যের দল ময়না তদন্ত করে। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ও সহকারী অধ্যক্ষ সৌরদীপ রায় বলেন, “এমন ক্ষেত্রে এ ভাবেই ময়না তদন্ত করা হয়। যদি ওই পরিবারের তরফ থেকে বা কেউ আপত্তি করতেন, তা হলে অন্য জায়গায় রেফার করার কথা ভাবা হত।” ময়না তদন্ত চলাকালীন মেয়েটির বাবা বলছিলেন, “মেয়েটাকে এ ভাবে খুন করা হবে, ভাবতে পারছি না! অপরাধীদের ফাঁসি চাই।”

বাবার দাবি, ‘‘দুই অভিযুক্ত একই ঘরে ছিল। আমরা ডাকাডাকি করায় এক জন জানলা গলে পালায়। অন্য জন মেয়েকে তুলে পাশের পুকুরে ছুড়ে ফেলে।” আক্ষেপ, “তখন অভিযুক্তের পিছনে ছুটতে পারিনি। পুকুর থেকে মেয়েকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাই। বাঁচাতে পারিনি!” এক অভিযুক্তকে যখন জনতা মারধর করে, তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলেও দাবি তাঁর। তিনি জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে এক জন মাস তিনেক আগে তাঁর মেয়েকে চকলেট দিয়ে বাড়ি নিয়ে গিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলে। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েকে সাবধান করে বলি, আর যাস না ওই লোকটা ডাকলে। কিন্তু বাচ্চা তো, বুঝতে পারেনি।’’

চকলেট এবং রসগোল্লা দেওয়ার কথা বলেই জেলার অন্য বালিকাকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। শুক্রবার দুপুরে গ্রামের পাঁচ জন নাবালিকা একটি নদীর পাশে খেলা করছিল। অভিযোগ, সে সময়ে প্রতিবেশী এক যুবক ওই কাণ্ড করে। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ওই অভিযুক্ত মেয়েটিকে ভয় দেখায় এবং মুখ খুলতে বারণ করে। যদিও নাবালিকা বাড়িতে ফেরার পরে বাড়ির লোকেরা দেখেন, সে অসুস্থ। শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। এলাকার বাসিন্দারা অভিযুক্তকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে, পুলিশ বছর চৌত্রিশের যুবককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, মেয়েটি আপাতত স্থিতিশীল।

আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম ঘটনায় ময়না তদন্তের পরে প্রাথমিক ভাবে তারা জানতে পেরেছে, সাড়ে ছ’বছরের মেয়েটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তার গলায় ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘‘আমরা ময়না তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি।’’

ঘটনায় ধৃতকে এ দিন আলিপুরদুয়ার আদালতে হাজির করানো হয়। তার পক্ষে কোনও আইনজীবী সওয়াল করতে চাননি। ‘লিগ্যাল এড’-এর তরফে দেওয়া আইনজীবী জামিনের আবেদন করলেও, তা খারিজ হয়। সরকারি আইনজীবী পীযূষকান্তি দত্ত বলেন, “এই ঘটনায় গণধর্ষণ, খুন ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের মামলা রুজু করা হয়েছে। বিচারক ধৃতকে দশ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।’’

তবে ন’বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণে ধৃতকে এ দিন হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানায়নি পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনার তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। খুব শীঘ্রই কিছু পরীক্ষার জন্য অভিযুক্তকে হেফাজতে চাওয়া হবে। আপাতত বিচারক তাকে ১৪ দিনের জন্য জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rape and Murder Sexual Harassment Minor Rape Sexual Assault Alipurduar

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।