Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
State News

সিএএ-বিরোধী বন্‌ধে গুলিবৃষ্টি, জলঙ্গিতে নিহত ২

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তহিরুদ্দিনের দাপটে গত কয়েক বছর ধরেই নাভিশ্বাস উঠেছে এলাকার বাসিন্দাদের।

সালাউদ্দিন শেখ এবং আনারুল বিশ্বাস

সালাউদ্দিন শেখ এবং আনারুল বিশ্বাস

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
জলঙ্গি শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৭
Share: Save:

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল সীমান্ত ঘেঁষা সাহেবনগরের একটি সংগঠন। বুধবার, সেই আন্দোলন কর্মসূচির প্রথম দিনেই এলাকায় বন্‌ধ ডাক দিয়েছিল ‘নাগরিক মঞ্চ’ নামে ওই সংগঠনটি। অভিযোগ, সাতসকালেই এলাকার তৃণমূলকর্মীরা সেই বন্‌ধ ভাঙার চেষ্টা করতেই দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে যায় বচসা। কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি আর তারই পরিণতিতে চলল গুলি।

এ দিন সকালে জলঙ্গির সাহেবনগরে সেই গুলিবৃষ্টিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান দুই গ্রামবাসী। গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও তিন জন।

খবর পেয়ে জলঙ্গি থানার পুলিশ দু’টি মারুতি ভ্যানে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের উপরেও চড়াও হয় জনতা। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের ভাড়া করা দু’টি গাড়ি, পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি মোটরবাইক। বেগতিক দেখে আধ ঘণ্টার মধ্যেই গাড়ি ফেলে এলাকা ছাড়ে পুলিশ।

আরও পড়ুন: জলঙ্গি কাণ্ডে উত্তপ্ত রাজ্য, কং-বামের যৌথ আক্রমণ মমতা-দিলীপকে

পরে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি মুকেশ কুমার এবং জেলার পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বিরাট পুলিশবাহিনী নিয়ে এলাকায় পৌঁছন। সাহেবনগর-জলঙ্গি সড়ক জুড়ে তখনও প্রবল উত্তেজনা। পুলিশ শেষ পর্যন্ত লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। গ্রেফতার করা হয় তিন জনকে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিংহ বলেন, ‘‘দু'পক্ষের মধ্যে বিবাদ থেকেই গন্ডগোল। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে কোনও পক্ষই এখনও অভিযোগ দায়ের করেনি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগরিক মঞ্চ নতুন সংগঠন। বাম-কংগ্রেস, এমনকি তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এ দিন, সকাল ৮টা নাগাদ ওই সংগঠনের জনা কয়েক সমর্থক রাজ্য সড়কে দু’টো বেঞ্চ পেতে অবরোধ শুরু করেন। এলাকার দোকানপাটও খোলেনি। অভিযোগ, সেই সময় একটি স্করপিয়ো গাড়িতে সেখানে হাজির হন জলঙ্গি উত্তর জ়োনের তৃণমূল সভাপতি তহিরউদ্দিন মণ্ডল। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি ঝাঁঝিয়ে ওঠেন। স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, তহিরুদ্দিনের সাঙ্গোপাঙ্গরা প্রথম থেকেই মারমুখী ছিল।

স্বজনহারা: ভেঙে পড়েছেন সালাউদ্দিনের বাবা এবং আনারুলের স্ত্রী। বুধবার। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তহিরুদ্দিনের দাপটে গত কয়েক বছর ধরেই নাভিশ্বাস উঠেছে এলাকার বাসিন্দাদের। তাই বেশ কিছু দিন ধরেই ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছিলেন মানুষ। এ দিন তাঁর চোখ রাঙানির সামনে পাল্টা প্রতিরোধ তৈরি করে কয়েকশো মানুষ বেরিয়ে এসে ঘিরে ফেলেন তহিরুদ্দিনকে। বেগতিক দেখে এ বার পিছু হটতে থাকেন ওই তৃণমূল নেতা। তাঁর অনুগামীরা দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়েন। ভয় পেয়ে তহিরুদ্দিনও লাফিয়ে উঠে পড়েন স্করপিয়োয়ে। জনতা গাড়ির পিছু ধাওয়া করলে জানলার কাচ নামিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু হয়। গুলিতে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়তে থাকেন গ্রামের অনেকে। মারা যান আনারুল বিশ্বাস (৬১) নামে গ্রামের এক মোয়াজ্জিন। মারা যান বছর উনিশের যুবক সালাউদ্দিন শেখ।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামবাসীদের দিক থেকেও সম্ভবত গুলি ছুটে এসেছিল। সেই গুলিতে আহত হন তহিরুদ্দিনের ভাই মন্টু শেখ। তহিরউদ্দিনের দাবি, ‘‘গোটা ঘটনা কংগ্রেস এবং সিপিএম পরিকল্পিত। তার পরে আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রজ্জাক মণ্ডলও দাবি করেছেন, ‘‘এক শ্রেণির দুষ্কৃতী এনআরসি বিরোধিতার নামে গুন্ডামি করেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jalangi Crime Violence TMC BJP CAA Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE