হাজারো অনুযোগ-অভিযোগ এবং আদালতে দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং সম্প্রতি নিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে গেল নতুন এক জোড়া মামলায়। একটি মামলা করেছেন প্রশিক্ষিত প্রার্থীরা। অন্য মামলাটি প্রশিক্ষণহীনদের।
নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাব-সহ বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে নতুন একটি মামলায় বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দেন, ওই অভিযোগ সম্পর্কে তাদের বক্তব্য হলফনামা দাখিল করে জানাতে হবে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, চলতি পর্যায়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুলে নিযুক্ত শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে এই মামলার ফলাফলের উপরেই।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা ‘টেট’ নেওয়া হয় ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর। সে-দিনই অভিযোগ ওঠে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে যান কিছু পরীক্ষার্থী। সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। বিচারপতি এ দিন জানান, ২০১৫-র প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে যে-মামলা চলছে, সেটিকেও এই মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
পর্ষদ ৩১ জানুয়ারি টেটের পূর্ণাঙ্গ মেধা-তালিকা প্রকাশ না-করে এসএমএসের মাধ্যমে কয়েক হাজার প্রার্থীকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা জানায়। কিন্তু গোল বাধে নিয়োগ নিয়েই। আদালতের নির্দেশ, প্রশিক্ষিতদের নিয়োগের পরে পদ খালি থাকলে তবেই প্রশিক্ষণহীনদের নেওয়া যাবে। কিন্তু দেখা যায়, প্রশিক্ষিত সব প্রার্থী পদ পাওয়ার আগেই প্রশিক্ষণহীন অনেক প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছে। তার পরেই কিছু প্রশিক্ষিত প্রার্থী ফের মামলা করেন।
আবেদনকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও সুদীপ্ত দাশগুপ্ত আদালতে অভিযোগ করেন, পর্ষদ নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই-র নির্দেশিকা মেনে প্রশিক্ষিতদের অগ্রাধিকার দেয়নি। পর্ষদ কোন যুক্তিতে মেধা-তালিকা প্রকাশ না-করেই এসএমএসের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেই প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য স্তরে কেন্দ্রীয় ভাবে প্রশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের পৃথক প্যানেল বা তালিকা তৈরি ও প্রকাশ করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। স্বজনপোষণ এবং টাকার লেনদেন হয়েছে। নিয়োগে সংরক্ষণের নীতি মানা হয়নি বলেও অভিযোগ।
তার পরেই বিচারপতি পর্ষদের আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্তকে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেন। লক্ষ্মীবাবু আর্জি জানান, হলফনামা দাখিলের জন্য পর্ষদকে এক মাস সময় দেওয়া হোক। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে পৃথক একটি মামলা ওঠে এ দিনই। সেই মামলা করেছেন প্রশিক্ষণহীন বেশ কিছু প্রার্থী। তাঁদের কৌঁসুলি ঋজু ঘোষাল আদালতে জানান, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী নিয়োগের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নিয়ম মানা হয়নি। আদালত জানিয়েছে, সেই মামলা পৃথক ভাবে শোনা হবে। টেট নিয়ে বারবার মামলায় নাজেহাল রাজ্য সরকার দক্ষ কৌঁসুলি দিতে চাইছে। এই বিষয়ে আইন ও বিচারমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী।
আরও পড়ুন:
কোথাও কাউন্সেলিংয়ের পরে নিয়োগপত্র না-পাওয়ায়, কোথাও কাউন্সেলিং বন্ধ করতে অবস্থান-বিক্ষোভের জেরে সমস্যা বেড়েছে। বীরভূমে ৪৪ জন প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। বীরভূম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে জানানো হয়, প্যারাটিচার বা পার্শ্বশিক্ষক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবেই ওই প্রার্থীদের নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু নিয়োগপত্র দিতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁরা সেই শ্রেণিতে পড়েন না। নথিপত্র ফের যাচাই না-করে নিয়োগপত্র দিতে চাননি কর্তারা। টেট-উত্তীর্ণ ওই প্রার্থীদের দাবি, তাঁরা নিয়ম মেনেই ফর্ম পূরণ করেছিলেন।
কাউন্সেলিংয়ের পরেও নিয়োগপত্র না-পেয়ে এ দিন বর্ধমানে বিক্ষোভ দেখান কিছু প্রার্থী। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান অচিন্ত্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আশা করছি, সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy