আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট গড়তে চায় কংগ্রেস। গ্রাফিক:শৌভিক দেবনাথ
রাজ্য রাজনীতিতে ‘বড়সড় চমক’ দিতে চাইছে কংগ্রেস। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে নিয়ে ‘মজবুত বিকল্প’ এবং ‘দ্বিধাহীন জোট’ গড়েই ভোটের ময়দানে নামতে চাইছে বিধান ভবন। এ বার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করে ভোটে যাওয়ার বিষয়েও একমত প্রায় গোটা প্রদেশ কংগ্রেস। এবং সে নামটি হল— অধীররঞ্জন চৌধুরী। পুজো মিটলেই বামেদের সঙ্গে জোরকদমে শুরু হবে জোট-আলোচনা। অধীরকে ‘ভাবী মুখ্যমন্ত্রী’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব তখনই আনুষ্ঠানিক ভাবে বামেদের দেওয়া হবে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে সিপিএম-কংগ্রেস জোটই ছিল তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ। বিজেপি তখন বহুদূরের তৃতীয় শক্তি। কিন্তু ওই জোট তৃণমূলকে সামান্যতম চ্যালেঞ্জের মুখেও ফেলতে পারেনি। সেই পরাজয়ের পর বাম এবং কংগ্রেস— উভয়েরই ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমেছে। ততটাই দ্রুততায় উত্থান ঘটেছে বিজেপি-র। ২০২১-এর ভোটে মূল লড়াই যে তৃণমূল আর বিজেপি-র মধ্যেই, সে বিষয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক থেকে সাধারণ ভোটদাতা, কারওরই সংশয় নেই। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের এক অধীর-ঘনিষ্ঠ নেতার কথায়, ‘‘আগেই এ ভাবে হেরে গিয়ে আমরা ভোটে নামতে চাই না। এখন হয়তো অনেকের মনে হচ্ছে, লড়াই তৃণমূল আর বিজেপি-র মধ্যে। কিন্তু আমরা যে পথে এগোতে চাই, তাতে বামেদের পূর্ণ সহযোগিতা মিললে লড়াই দ্বিমুখী নয়, ত্রিমুখী হতে চলেছে।’’
বিধান ভবন সূত্রের খবর, পাঁচ বছর আগের মতো ‘অসম্পূর্ণ জোট’ এ বার কংগ্রেস চাইছে না। কংগ্রেস শিবিরের মতে, ২০১৬-র ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের শুধুমাত্র ‘আসন সমঝোতা’ হয়েছিল। জোট নয়। বিমান বসু বা মহম্মদ সেলিমদের মতো নেতারা ‘জোট’ শব্দটি সচেতন ভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন গোটা প্রচারপর্বেই। শুধু তা-ই নয়, সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা মোটের উপরে মসৃণ হলেও সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি-র মতো বাম শরিকরা সমঝোতা মানতে চায়নি। ফলে বেশ কিছু আসনে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হয়েছিল। ভোট ভাগাভাগি আটকানো যায়নি।
আরও পড়ুন: চ্যানেলকে লিখতে পারেন করোনায় আক্রান্ত বিচারক শ্রীকান্ত, মিকা, মনোময়, আকৃতিরা
প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ঋজু ঘোষালের কথায়, ‘‘এ বার আর ওই রকম কোনও জোট হবে না। আমরা জোট চাই। কিন্তু সিপিএম-কে মনে রাখতে হবে যে, কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোট হচ্ছে। কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের জোট হচ্ছে। সিপিএম যদি ভাবে ওদের বিভিন্ন শরিকের মতো কংগ্রেসও আরেকটা শরিক হবে, তা হলে খুব ভুল হয়ে যাবে।’’ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে প্রাপ্ত ভোটের হারের কথা তুলে ঋজু বলছেন, ‘‘সিপিএমের থেকে আমরা দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট কম পেয়েছি। প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে হিসেব হলে ২৯৪-এর মধ্যে অন্তত ১৪০টি আসনে আমাদের লড়া উচিত।’’ তবে ১৪০ আসনের দাবি তুলেই যে কংগ্রেস থামবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেসের এই সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে, বামেদের এখন এমন কোনও মুখ নেই, যাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প মুখ হিসেবে তুলে ধরা যায়। কংগ্রেসের রয়েছে— অধীররঞ্জন চৌধুরী। লোকসভায় তিনি প্রধান বিরোধী পক্ষের নেতা। গোটা দেশ তাঁকে চেনে। রাজ্যেও তৃণমূল-বিরোধী পরিসরে তিনি প্রথম সারির নেতা। অর্থাৎ বাম-কংগ্রেস জোট হলে সেই জোটের তরফে মমতার বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হতে পারেন একমাত্র অধীর চৌধুরীই। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস হবে জোটের বড় শরিক এবং তারা ১৫০-১৬০ আসনে লড়বে।’’
অধীর নিজে এ বিষয়ে এখনও মুখ খুলছেন না। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, অধীর মনে করছেন, এ বার জোট হলে কংগ্রেসের সামনে দর কষাকষির সুযোগ গতবারের চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৬ সালে আসন ভাগাভাগি হয়েছিল ২০১৪-র লোকসভা ভোটের ফলাফলের প্রেক্ষিতে। ২০১৪-র ভোটে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ বামেদের চেয়ে অনেকটাই কম ছিল। ফলে কংগ্রেসকে ৯২টি আসন ছেড়েছিল সিপিএম। অধীরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক তরুণ নেতার কথায়, ‘‘এ বার পরিস্থিতি আলাদা বলেই দাদা (অধীর) মনে করছেন। আগের বার অনেক আসন চেয়েও আমরা পাইনি। সিপিএম বলেছিল, যে সব আসন কংগ্রেস চাইছে, সেখানে তারা ২-৩% করে ভোট পেয়েছে। কিন্তু এ বার আর সিপিএমের পক্ষে সেটা বলা সম্ভব হবে না। কারণ, ওদের ভোটও অনেক কমেছে। আমরা তো পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২টো লোকসভা আসন জিততে পেরেছি। বামেরা তো ৪০টা আসনে লড়ে ৩৯টাতেই জামানত খুইয়েছে।’’
আরও পড়ুন: আচমকা প্রকাশ্যে গুরুঙ্গ, হাজির গোর্খা ভবনে, তবে ঢুকতে পারলেন না
কংগ্রেস যে বেশি আসন চাইবে এবং অধীরকেই জোটের তরফে ‘ভাবী মুখ্যমন্ত্রী’ হিসেবে তুলে ধরা হবে, এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত কি পাকা? অধীর-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘লিখিত সিদ্ধান্ত সে ভাবে কিছু হয়নি। তবে দলের মধ্যে এই দাবিটা খুব জোরদার ভাবে উঠেছে। দলের বিধায়ক, জেলা সভাপতি এবং রাজ্য স্তরের অধিকাংশ পদাধিকারী এটাই চাইছেন।’’
কিন্তু সিপিএম বা বামেরা কি এই দাবি মানবে?
কংগ্রেসের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পৌঁছয়নি। তাই আনুষ্ঠানিক ভাবে কেউ মুখও খোলেননি। কিন্তু উত্তর দমদমের সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যের মন্তব্যে এটুকু বোঝা গিয়েছে যে, কংগ্রেসের তরফ থেকে যে প্রস্তাবই পৌঁছোক, আলোচনার আগেই মুখের উপরে ‘না’ বলে দেওয়া হবে না। অধীরকে ‘ভাবী মুখ্যমন্ত্রী’ হিসেবে মেনে নেওয়া কি সিপিএমের পক্ষে সম্ভব? তন্ময় জবাব এড়াচ্ছেন ‘‘এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করার কেউ নই’’ বলে। তবে পাশাপাশিই যোগ করছেন, ‘‘বাম-কংগ্রেসের জোট এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের জন্য খুব জরুরি এবং জোট অনিবার্য। তৃণমূলকে উৎখাত করা ছাড়া বাংলার মানুষের সামনে আর কোনও রাস্তা নেই। আর তৃণমূলকে উৎখাত করার প্রশ্নে কারও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকলে সেটা বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসেরই আছে। তাই জোটটা হতেই হবে।’’
এ বার আর ‘মাথা বিকিয়ে’ জোট করবেন না বলে জোর গলায় দাবি করেও কংগ্রেসের ঋজুও বলছেন, ‘‘কংগ্রেস এবং বামেদের জোট এ রাজ্যে স্থায়ী বিকল্প হতে চলেছে। সকলকেই এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে। সিপিএম সেই প্রয়োজনীয়তা বুঝলে জোট আটকে যাওয়ার বা অধীরদাকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে মানতে না চাওয়ার কোনও কারণ দেখছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy