মন্দিরার সঙ্গে সালমা। —নিজস্ব চিত্র।
সাড়ে তিন বছর পরে পরিবার ফিরে পেল নিখোঁজ কিশোরী। সৌজন্যে, তার আশ্রয়দাতা ‘মা’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যার সাক্ষী থাকল বীরভূমের বক্রেশ্বর শিবমন্দির লাগোয়া জনপদ। কলকাতার মল্লিকবাজার এলাকার বাসিন্দা সালমা বেগম নিজে বক্রেশ্বরে এসে মন্দিরা তুরী নামে তেরো ছোঁয়া ওই কিশোরীকে বাড়ি পৌঁছে দেন। কিশোরীর হতদরিদ্র পরিবার তো বটেই, সালমার কাছে কৃতজ্ঞ এলাকার বাসিন্দারাও।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে ছোট্ট মন্দিরাকে কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে নিয়ে গিয়েছিলেন এক চিকিৎসক ও তাঁর স্ত্রী। প্রতিশ্রুতি ছিল, মেয়েটিকে লেখাপড়া শেখাবেন ও বাড়িতে মেয়ের মতো রাখবেন তাঁরা। আর টুকটাক বাড়ির কাজ করবে সে। মেয়ে ভাল থাকবে ভেবে রাজি হয়েছিলেন বাবা কালী তুরী। অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি পূরণের পরিবর্তে মারধর করা হত ওই মেয়েটিকে। গত বছরের জানুয়ারিতে ওই পরিবারের কাছ থেকে পালায় মন্দিরা। কলকাতার রাস্তায় একাকী ওই কিশোরীকে দেখে তাকে উদ্ধার করেন সালমা। তার পরে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের কাছে সন্তান স্নেহে রাখেন।
কিশোরীর বাবা পেশায় দিনমজুর। তিনি বলছেন, ‘‘স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে সন্তানদের নিয়ে পরিবার চালাতে অসুবিধায় পড়ি। বিশেষত ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে কী করব, বুঝতে পারছিলাম না। বক্রেশ্বরে প্রতি বছর আসতেন ওই দম্পতি। পরিচয় ছিল, তাই পাঠাই মেয়েকে। আগের বছরের জানুয়ারিতে বক্রেশ্বর ফাঁড়ির পুলিশ খবর দেয়, মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে।’’ কালীবাবুর অভিযোগ, নিখোঁজ ডায়েরি করা ছাড়া কোনও সহযোগিতা করেননি ওই দম্পতি। ভাগ্যিস সালমা ছিলেন। ওই দম্পতির সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
সালমা বেগমদের সংসারও চলে কার্যত ভিক্ষাবৃত্তি করেই। তবে, সেখানে সচ্ছলতা না থাকলেও আনন্দে ছিল মন্দিরা। সালমার কথায়, ‘‘গত বছর জানুয়ারির এক সন্ধ্যায় কলকাতার এক্সাইড মোড়ে মেয়েটিকে কাঁদতে দেখি। এত বড় শহরে কোথায় যাবে, কী হবে ভেবে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। তার পর থেকে আমার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সঙ্গে আর এক মেয়ে হয়ে ছিল।’’
এত দিন পরে কেন? কেনই বা পুলিশকে জানাননি? তার উত্তর দিয়েছে মন্দিরা নিজেই। তার কথায়, ‘‘মা-ই (সালমা) থানায় নিয়ে গিয়েছিল আমাকে। পুলিশ জানতে চাওয়ায় বলি, খুব ভাল আছি। যত ক্ষণ না বাড়ির খোঁজ মেলে, তত ক্ষণ পুলিশ আমাকে ওখানেই থাকতে বলে।’’ আর সালমা বলছেন, ‘‘চাইছিলাম ও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুক। কিন্তু, লকডাউনে সব পণ্ড হয়ে যায়। আর ওর কাছে শুধু বক্রেশ্বরের গরম জল ও দুবরাজপুর দুটো শব্দ শুনেছিলাম। এ বার সেই সূত্র ধরে ট্রেনে দুবরাজপুরে নেমে বক্রেশ্বরে আসি।’’
কেন পালিয়েছিলে? মন্দিরা বলছে, ‘‘যখন কলকাতায় গিয়েছিলাম, তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। ওখানে বাড়ির কাজ করতাম। বেশ কিছু দিন পরে দু’ক্লাস উঁচুতে ভর্তি করে দেয় ওরা। কিছু বুঝতে পারতাম না। এমনিতেই বকত। আর পড়াতে বসালেই ভীষণ মারত। তাই পালিয়ে গিয়েছিলাম।’’ মন্দিরার দিদি লক্ষ্মী বলছেন, ‘‘বোনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে আমাদের অন্য কথা বলা হয়েছিল। এখনও বুঝতে পারছি সবটাই মিথ্যা ছিল। কাকিমা (সালমা) না থাকলে বোনটা পাচার হয়ে যেত।’’
ঘটনার কথা শুনে বীরভূমের শিশু সুরক্ষা আধিকারিক নিরুপম সিংহ বলেন, ‘‘ওই কিশোরীর বাড়িতে লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। বাড়ির কাজের জন্য একটি বাচ্চাকে কোন পরিবার নিয়ে গিয়েছিল, কেন সেখান থেকে মেয়েটি পালাল, সবই দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy