অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
নিজের লোকসভা কেন্দ্রে এক মাস ব্যাপী স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত ‘কর্মযজ্ঞ’ শুরু করতে চলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই উপলক্ষে শনিবার আমতলার ‘সমন্বয়’ প্রেক্ষাগৃহে একটি চিকিৎসক সম্মেলনে (ডক্টর্স সামিট) যোগ দেবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূল সূত্রে জানানো হচ্ছে, শনিবারের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন ১২০০-রও বেশি চিকিৎসক। তাঁদের মধ্যে ৩০০-র বেশি জুনিয়র ডাক্তারও থাকবেন। শ’তিনেক মহিলা চিকিৎসকও থাকছেন শনিবারের কর্মসূচিতে।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের পরে চিকিৎসক মহলের সঙ্গে তৃণমূলের ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছিল। এখন সেই আন্দোলন থিতিয়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সেই ‘পরিবর্তিত’ আবহে অভিষেকের এই কর্মসূচি চিকিৎসকদের সঙ্গে নতুন করে ‘সেতুবন্ধন’ বা ‘সেতু মেরামতি’র প্রয়াস। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে, ডায়মন্ড হারবারের সাতটি বিধানসভা এলাকায় গোটা জানুয়ারি মাস জুড়ে স্বাস্থ্যশিবির হবে। প্রতিটি বিধানসভায় ১০ দিন করে স্বাস্থ্যশিবির করার পরিকল্পনা হয়েছে। সেই কারণেই এই বিশেষ সম্মেলন।
অভিষেকের এই কর্মসূচিকে দলের অন্দরে অনেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আরও একটি ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ বলে অভিহিত করছেন। যেমনটা হয়েছিল ২০২১ সালে বিধানসভা ভোট পরবর্তী সময়ে, কোভিডকালে। সেই সময়েই প্রথম ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’-এর কথা শোনা গিয়েছিল অভিষেকের মুখে। কোভিডের নমুনা পরীক্ষায় সব লোকসভাকে ‘টেক্কা দিয়েছিল’ অভিষেকের সংসদীয় কেন্দ্র। যা নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণ নেতা তথা সাংসদ তখন ‘খোঁচা’ও দিয়েছিলেন অভিষেককে। কিন্তু চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক বা এমন ধরনের কর্মসূচিতে অভিষেককে আগে যোগ দিতে দেখা যায়নি। এমন কর্মসূচিও এত সাড়ম্বরে এর আগে হয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। সেই কারণেই আরজি কর-কাণ্ডের পরবর্তী পর্যায়ের সঙ্গে এই উদ্যোগকে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।
যদিও অনেকের মতে, এর সঙ্গে আরজি করের ঘটনা এবং তৎপরবর্তী চিকিৎসক আন্দোলনের কোনও যোগসূত্র নেই। কিন্তু পাশাপাশিই দলের এক প্রবীণ নেতা বলেছেন, ‘‘এ হল সমান্তরাল স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরি করা। যার ফলে সরকারের হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার অবকাশ থাকছে।’’ অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সাংসদ হিসাবে যে কাজ অভিষেক তাঁর কেন্দ্রে করছেন, সেই কাজ যদি রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে হয়, তা হলে মানুষই উপকৃত হবেন।’’
ডায়মন্ড হারবার এলাকায় তৃণমূলের সর্ব স্তরের সংগঠনকে এই কর্মসূচিতে মাঠে নামিয়েছেন অভিষেক। শহর এলাকায় পুরপ্রতিনিধি এবং গ্রামীণ এলাকায় পঞ্চায়েতের নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ব্লক এবং অঞ্চল স্তরের তৃণমূল নেতারাও নামছেন এক মাস ব্যাপী কর্মসূচি সফল করতে। চিকিৎসকদের এক জায়গায় আনা থেকে শুরু করে গোটা কর্মকাণ্ডে সমন্বয়ের কাজ করছেন দুই চিকিৎসক শান্তনু সেন এবং অভীক ঘোষ। তবে শান্তনুর ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই দলে আলোচনা শুরু হয়েছে। আরজি কর পর্বে মুখ খুলে রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ শান্তনুকে দলের মুখপাত্র পদ খোয়াতে হয়েছিল। তাঁর নিরাপত্তাও প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন শান্তনুকে ‘গুরুত্বহীন’ করতে চাইছেন, তখন অভিষেকের কর্মসূচিতে ‘নেপথ্য কারিগর’ হিসাবে ভূমিকা নিচ্ছেন তিনি। যাকে তৃণমূলের অন্দরে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে।
আরজি করের ঘটনা থেকে আপাতদৃষ্টিতে খানিকটা দূরেই সরে থেকেছেন অভিষেক। সেই পর্বে তাঁকে খুব ‘সক্রিয়’ হতে দেখা যায়নি। তবে কয়েকটি ‘মোক্ষম’ সময়ে তিনি ‘হস্তক্ষেপ’ করেছিলেন। আরজি কর-পর্বের শুরুতে ধর্ষণের অপরাধীদের জন্য আইন এনে তাদের ‘এনকাউন্টার’ করার কথা বলেছিলেন অভিষেক। ১৪ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনার পরে অভিষেক জানিয়েছিলেন, তিনি রাতেই কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে ফোন করে বলেছিলেন, যারা হাসপাতাল ভেঙেছে, গুন্ডামি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দল, মত এবং রং না দেখে ব্যবস্থা নিতে। তার পরে ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে আরজি কর নিয়ে বক্তৃতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচিকে সম্মান জানানোর কথা বলেন। যা তৃণমূলের কোনও নেতার মুখে প্রথম শোনা গিয়েছিল। ওই বক্তৃতাতেই অভিষেক প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন সন্দীপকে সিবিআই গ্রেফতার করছে না? ঘটনাচক্রে, তার পরেই আরজি কর হাসপাতালে দুর্নীতি এবং তারও পরে ধর্ষণ-খুনের মামলায় ‘তথ্যপ্রমাণ লোপাট’ করার অভিযোগে সন্দীপকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শুক্রবার সন্দীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় চার্জশিটও পেশ করে দিয়েছে সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy