আধার কার্ড সংশোধনে লম্বা লাইন তেহট্টের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
আধার কার্ড সংশোধনের কুপন পেতে কেউ ২৬ ঘণ্টা, কেউ ২৪ ঘণ্টা আগে লাইন দিয়েছিলেন। বছরের প্রথম রাতে তেহট্টের ‘স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’-র সামনে কনকনে শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নীচে তাঁরা কাগজ পেতে বসে কাটিয়েছেন।
নাগরিকত্ব আইন পাশ হয়েছে, কিন্তু নাগরিকত্ব প্রমাণে ঠিক কী কী নথি প্রয়োজন সে বিষয়ে মানুষ এখনও অন্ধকারে। ফলে বিভ্রান্ত মানুষ নিজের মতো করে যতটা পারছেন কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখতে চাইছেন। এই মরিয়া অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তার নজির দেখা গেল বৃহস্পতিবার তেহট্টে। সেখানে আধার কার্ড সংশোধনের কুপনের লাইনে সারারাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন প্রায় ১১ হাজার মানুষ!
এ দিন কুপন সবাই পেয়েছেন, কিন্তু স্বস্তি পাননি। কারণ, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, দিনে ২০-২৫ জনের বেশি মানুষের আধার কার্ড সংশোধন করা যাবে না। বছরের প্রত্যেক দিন ব্যাঙ্কে কাজ হয় না। ছুটির দিন থাকে। সে ক্ষেত্রে এত মানুষের কার্ড সংশোধন করতে গিয়ে দু'বছরেরও বেশি লেগে যাবে!
আরও পড়ুন: ধর্মঘটে ‘শান’ দিতে কুইজ থেকে এনআরবি
এ দিন যাঁরা কুপন পেয়েছেন তাঁদের কুপন নম্বরেই দেখা গিয়েছে, অনেকের আধার সংশোধনের তারিখ পড়েছে ২০২১ সালে। এখনও প্রায় ৫ হাজার মানুষকে কুপন দেওয়া বাকি। তাঁরা ২০২২ সালে আধার সংশোধন করাতে পারবেন। এমন বিচিত্র পরিস্থিতিতে পড়ে দিশেহারা মানুষের ক্ষোভ ও বিভ্রান্তি ক্রমশ বাড়ছে। কেন ২৪ ঘণ্টা লাইন দিয়েও দিনের দিন আধার সংশোধন হবে না এই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগও তুলছেন।
আসলে এঁদের বেশির ভাগই জাতীয় নাগরিকপঞ্জী ও নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিভ্রান্ত। আধার কার্ড না-থাকলে দেশচ্যূত হতে পারেন, এমন একটা আতঙ্ক তাঁদের ভিতর ঢুকে গিয়েছে। ফলে তাঁরা নিজেদের নথিপত্র ঠিক করতে মরিয়া। এ দিন লাইনে দাঁড়ানোদের মধ্যে সংখ্যালঘু শ্রেণির মানুষই ছিলেন বেশি। তাঁদের অনেকেই জানালেন, এনআরসি আতঙ্কের জেরে রাতভর লাইন দিয়েছেন এবং আধার সংশোধনে প্রায় এক বছর দেরি হবে শুনে অসহায় বোধ করছেন।
আরও পড়ুন: শহরে দুর্ঘটনা কমার পুলিশি সাফল্যে বিঁধে বাসের কাঁটা
বৃহস্পতিবার সকালে ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় সামলাতে মোতায়েন ছিল পুলিশ। কুপন সংগ্রহ করতে তেহট্ট ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম, এমনকি চাপড়া থানার অন্তর্গত বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। প্রত্যেকেই মনে করছেন, কুপন দেওয়া ও আধার সংশোধনের জন্য একটি ব্যাঙ্ককে নির্দিষ্ট না-করে যদি প্রশাসন আধার কার্ড সংশোধনের জন্য আলাদা-আলাদা প্রশাসনিক জায়গা করে দেয় সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের আধার কার্ড সংশোধন করতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। এ বিষয়ে ওই ব্যাঙ্কের ডেপুটি ম্যানেজার সঞ্জীব কুমার বলেন, ‘‘আমরা আধার কার্ড সংশোধনের দায়িত্ব নিয়েছি, কিন্তু এত মানুষের ভিড়। কি করা যাবে! সবাইকেই কুপন দেওয়া হচ্ছে। তবে আমরাও হাঁপিয়ে গিয়েছি।’’
তেহট্টের মহাকুমাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত বলেন, এ ক্ষেত্রে এলাকায় আলাদা কেন্দ্র করা যায় কিনা সেটা দেখতে হবে।’’ জেলা সিনিয়র ডেপুটি কালেক্টর নীলাঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া যদি রাজ্যে এই কাজে বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থা করেন তবে সে ক্ষেত্রে আশা করা যায়, আধার কার্ড সংশোধনের জন্য মানুষকে এতটা দুর্ভোগের সামনে পড়তে হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy