জেলা পুলিশের আমন্ত্রণ পেয়ে রায়বেঁশে শিল্পীরা জানিয়েছিলেন, হাতে বেশ কিছু অনুষ্ঠান রয়েছে। নাগাড়ে চলেছে তার মহড়া। নতুন করে আর কোনও অনুষ্ঠান নেওয়া অসম্ভব।
কিন্তু ‘মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান’ বলে কথা। পুলিশের ‘চাপাচাপি’তে অগত্যা তাই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরের পরিচিত ‘ষড়ভুজ’ সংস্থার রায়বেঁশে শিল্পীরা। ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে দিন কয়েক ধরে টানা মহড়াও দিয়েছিলেন। কিন্তু বুধবার রাতে আচমকা তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘সময় কম’। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে অনুষ্ঠানের সুযোগ নেই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার আগেই ‘অপমানিত’ রায়বেঁশে শিল্পীরা মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। পঁয়ত্রিশ বছরের পুরনো ‘ষড়ভুজ’-এর সম্পাদক তরুণকুমার প্রধান বলেন, “দেশে-বিদেশে বহু অনুষ্ঠান করেছি। এ ভাবে অপমানিত হইনি কখনও।”
‘ষড়ভুজ’ একা নয়। বৃহস্পতিবার, ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম-এ মুখ্যমন্ত্রীর ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েও অনুষ্ঠান করার সুযোগ না পাওয়া শিল্পীদের এই তালিকাটা দীর্ঘ।
এই ডাক আসবে--দুপুরভর অপেক্ষা করে থেকেও শেষ পর্যন্ত মাইকে আর নামই ঘোষণা করা হয়নি বিশিষ্ট ঝুমুর শিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতোর। ক্ষুব্ধ শিল্পীর কথায়, “আমাদের জন্য বরাদ্দ ছিল সাকুল্যে সাত মিনিট। অথচ ডাকাই হল না আমাদের। এটা কী ধরনের ভদ্রতা!” এই তালিকায় রয়েছে, ঝাড়গ্রামের ঝুমুর গানের দল কিংবা শালবনির ছৌ নাচের শিল্পীরাও। অনুষ্ঠান শেষে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ শিল্পীদের জন্য ‘মিষ্টিমুখের’ আয়োজন করেছিলেন। সুযোগ না পাওয়া ‘অপমানিত’ লোকশিল্পীরা সে জন্য আর অপেক্ষা করেননি। সে পথে না হেঁটে ধামসা মাদল নিয়ে স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে যান তাঁরা।
পালাবদলের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক অনুষ্ঠানে দাবি করেছেন, তাঁর সরকারের আমলেই শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রকৃত সম্মান এবং মর্যাদা পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের অনুষ্ঠানেও তিনি বলেন, “শিল্পীদের এক হাজার টাকা ভাতা ও বছরে চারটি অনুষ্ঠান করার সুযোগ দিচ্ছি। এটা আমাদের সাংস্কৃতিক গৌরব।” অথচ, এ দিনের অনুষ্ঠানে চটুল হিন্দি নাচ-গানের জন্য সময় বরাদ্দ হলেও সুযোগ পেলেন না লোকশিল্পীরা।
অনুষ্ঠানে মিনিট পঁয়তাল্লিশ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতার শিল্পীর হিন্দি গান, কলকাতা পুলিশ ব্যান্ডের শিল্পীদের গান মন দিয়ে শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। বেলা দু’টো নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় স্টেডিয়ামে ঢুকছে দেখেই থমকে যায় অনুষ্ঠান। মমতা অবশ্য নিজেই ওই বাঁশি-শিল্পীকে ফের ‘শুরু’ করতে বলেন। একে একে সালুয়ার ইএফআর জওয়ানদের ‘কুকরি নাচ’ পুলিশ কর্মীর দেশাত্মবোধক গানসবই শোনেন তিনি। কিন্তু পৌনে তিনটে নাগাদ তাঁর কনভয় স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। সাজঘরে সেজেগুজে তখড়ও অপেক্ষায় ছৌ শিল্পী শিশুরঞ্জন মানা, রবি মানা-রা।
কেন এ ভাবে ‘অপমানিত’ হতে হল শিল্পীদের?
ভারতীদেবীকে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা কবুল করেন, ব্যার্থতাটা তাঁদেরই। তিনি বলেন, “আসলে অনুষ্ঠানটা গুছিয়ে তোলা যায়নি। অনেক শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁদের কাকে কতক্ষণ সময় বরাদ্দ করা হবে সেটাই ঠিক করে উঠতে পারেননি সংগঠকরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy