মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংসদরা। নবান্নে। —নিজস্ব চিত্র
বাংলাদেশের মানুষ যেন তাঁকে ভুল না-বোঝেন পড়শি দেশ থেকে শুভেচ্ছা সফরে আসা ৮ জনপ্রতিনিধির কাছে শনিবার এই আকুল আবেদন জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বলেন, “ও দেশে আমাদের বাড়িঘর ছিল। বাংলাদেশ আমারও দেশ। আমি ও দেশে যেতে চাই। রংচঙে রিক্সা চড়ে ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে চাই।” সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের নেতৃত্বে আসা বাংলাদেশের সাংসদদের মমতা বলেন, তিনি জানেন বাংলাদেশের মানুষ আজ তাঁর ওপরে ক্ষুব্ধ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে তিনি ঢাকা সফরে না-যাওয়ার অনেকে অনেক রকম অর্থ করেছে। অনেক অপপ্রচার হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ এই প্রথম আমি আপনাদের জানাচ্ছি, কেন্দ্রের জন্যই আমি ঢাকা যেতে পারিনি। গোছানো ব্যাগ খুলে ফেলতে হয়েছে। কষ্টে সে দিন চোখে জল এসে গিয়েছিল!”
শনিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক আতিথ্যে আপ্লুত পড়শি দেশের প্রতিনিধিরা। ফিস ফ্রাই আর রসগোল্লার আপ্যায়ন আরও মিঠে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গাওয়া গানে। ‘একখানা জানালা খুলে দাও না’ দু’কলি গেয়ে চমকে দেন মমতা। আগাগোড়া আবৃত্তি করেন পরিচিত কবিতা ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি।’ অতিথিদের কোনও বিতর্কিত প্রসঙ্গ সে ভাবে তুলতেই দেননি মুখ্যমন্ত্রী। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ ও জঙ্গি সমস্যা নিয়ে উদ্বেগটুকু জানাতে গিয়েছিলেন সংসদে আওয়ামি লিগের হুইপ ইকবালুর রহিম। চকিতে মমতা তাঁর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে শুনিয়ে দেন, “মনে রাখবেন এনআইএ নয়, রাজ্য পুলিশই কিন্তু এই বিস্ফোরণের সব চেয়ে বড় চাঁইটিকে গ্রেফতার করেছে। আমাদের ওপর ভরসা রাখুন।” মমতা বলে চলেন, বাংলা জঙ্গিদের ঠাঁই দেয় না। এদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই।
আওয়ামি লিগের আর এক সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টি উত্থাপন করা মাত্র মমতা বলেন, “ছিটমহলের মানুষের যে কী দুর্দশা, তা আমি জানি। অসুস্থ হলে যাওয়ার জায়গা নেই। ছেলেমেয়েদের স্কুল নেই, থানা-পুলিশটুকুও নেই। এত দিন ধরে এই অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। আমিও চাই এর একটা ফয়সালা হোক।” মমতা বলেন এক ভাষা, এক প্রাণ, এক সংস্কৃতির দেশ ভারত আর বাংলাদেশ। তিনি মনে করেন,এমন কোনও বকেয়া বিষয় থাকতে পারে না, আলোচনায় যার সমাধান করা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ভাবনা চিন্তাতেই ভুল রয়েছে। তাই এত ক্ষোভ, অবিশ্বাস। দু’দেশের উচিত বকেয়া সমস্যাগুলি একটি প্যাকেজ হিসেবে তুলে এনে আলোচনা করা। তাতে ফল হবে।”
শনিবার রাতেই দিল্লি রওনা হন বাংলাদেশের সাংসদরা। সেখানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, বেশ কয়েক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছাড়া কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও আলোচনায় বসার কথা তাঁদের। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে যন্ত্রে ভোটগ্রহণের বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখবেন। তার আগে এ দিন বিকেল সোয়া চারটেয় তাঁরা নবান্নে পৌঁছন। মমতার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান। পড়শি দেশের প্রতিনিধি দলের নেতাকে নিজের পাশের আসনে এনে বসান মমতা। বাকিদের প্রত্যেককে নাম ধরে ডেকে পরিচিত হন। প্রতিনিধি দলের একমাত্র মহিলা সদস্য মাহজাবিন খালেদ মমতাকে একটি নক্সা করা চাদর উপহার দেন। কাজী নবিল আহমেদ দেন বই। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মুস্তাফা লুৎফুল্লা, নাহিম রজ্জাক ও শফিকুল রহমানও। পৌনে এক ঘণ্টা পরে বৈঠক শেষ করে বেরনোর সময়ে প্রত্যেককে একটি করে শাল উপহার দেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন থেকেই বিমানবন্দরে রওনা হন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy