Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সব দলই

ফের ভোট। ফের সব দলের থেকে মিলছে একই প্রতিশ্রুতি। তা শোনা যাচ্ছে দুই কেন্দ্রেই হুগলির আরামবাগ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে। সকলেই বলছেন, জিতলে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান কার্যকর করার ব্যাপারে তাঁরা তৎপর হবেন। তা হলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।

পীযূষ নন্দী ও অভিজিৎ চক্রবর্তী
আরামবাগ ও ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫৩
Share: Save:

ফের ভোট। ফের সব দলের থেকে মিলছে একই প্রতিশ্রুতি। তা শোনা যাচ্ছে দুই কেন্দ্রেই হুগলির আরামবাগ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে।

সকলেই বলছেন, জিতলে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান কার্যকর করার ব্যাপারে তাঁরা তৎপর হবেন। তা হলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।

সমস্যাটা মেটেনি দীর্ঘ কয়েক দশকেও। ফি-বছর বর্ষায় প্লাবিত হয় আরামবাগ এবং ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। আগের কয়েকটি লোকসভা ভোট হোক বা বিধানসভা ভোট দুই এলাকার মানুষই শুনেছেন একই প্রতিশ্রুতি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। গত বর্ষার মরসুমেও প্লাবিত হয়েছে দু’টি মহকুমার অনেক এলাকা।

আরামবাগ মহকুমার সবচেয়ে বন্যাপ্রবণ এলাকা খানাকুল। তা ছাড়া, গোঘাট এবং আরামবাগ ব্লকের একাংশও বর্ষায় প্লাবিত হয়। পাশের ঘাটাল মহকুমাও বন্যাপ্রবণ। বস্তুত, দুই মহকুমাই অনেকটা নিচু, প্রায় কড়াইয়ের মতো। ফলে, বর্ষায় নদী-খাল উপচে এলাকাগুলিতে যেমন জল ঢোকে, তেমনই সঙ্কট ঘনায় বিভিন্ন জলাধার থেকে বেশি পরিমাণ জল ছাড়া হলে। ডিভিসি-র ছাড়া জলে দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী উপচে জল ঢোকে খানাকুলে এবং দ্বারকেশ্বর নদীর জল ঢোকে আরামবাগ, গোঘাট এবং খানাকুলের একাংশে। শিলাবতী এবং কংসাবতী নদীর জল ঢোকে ঘাটালে।

এই সমস্যা থেকেই পরিত্রাণের জন্য ১৯৮২ সালে তৎপর হয় রাজ্য সরকার। তৈরি হয় ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান। ঘাটালের শিলাবতী নদীর পাড়ে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজ্যের তৎকালীন সেচ প্রতিমন্ত্রী প্রভাস রায়। কিন্তু কাজ শুরু হলেও কিছু দিনের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ওই মাস্টারপ্ল্যানে মূলত যে বিষয়গুলির উপরে জোর দেওয়া হয়, তা হল একাধিক নদীর পলি তুলে নাব্যতা বাড়ানো। নদীর পাড় উঁচু করা। নদী সংলগ্ন খাল সংস্কার এবং নতুন খাল কাটা। এ ছাড়া, নদী সংলগ্ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলাধার তৈরি। আর এই কাজ ঘাটাল এবং আরামবাগ দু’জায়গাতেই হওয়ার কথা ছিল।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ উদ্যোগেই প্রকল্পটি করা হবে। প্রকল্পের বিস্তারিত বিবরণ (ডিপিআর) তৈরি করে পটনায় কেন্দ্র সরকারের ‘গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশন’-এর সদর দফতরে পাঠানোও হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে কয়েক বার ডিপিআর ফেরত পাঠিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট কমিশন। গত বছর ফের খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা নতুন ডিপিআর তৈরি করে পাঠান। তাতে আরামবাগ মহকুমা কোনও অংশ অন্তর্ভুক্ত হয়নি। দুই মেদিনীপুরের প্রায় ১৬৫৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৫৪০ কোটি টাকা। তবে, কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের ছাড়পত্র এখনও মেলেনি। তা ছাড়া, কেন্দ্র তাদের বরাদ্দের ২৫ শতাংশ টাকা কমিয়ে দেওয়াও চিন্তা বাড়িয়েছে সেচ দফতরের কর্তাদের।

ওই মাস্টারপ্ল্যানে আরামবাগের অন্তর্ভুক্তি এবং তা কার্যকর করায় জোর দিয়েই এ বার প্রচারে নেমেছেন সেখানকার প্রার্থীরা। তৃণমূল প্রার্থী আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দার বলছেন, “জিতলে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান রূপায়ণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। মাস্টারপ্ল্যানে বাদ পড়া আরামবাগ মহকুমার বেশ কিছু এলাকা যাতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেই মতো নতুন করে রূপরেখা তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করব।” কংগ্রেস প্রার্থী শম্ভুনাথ মালিক বলছেন, “হুগলি জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশগুলোকে বাদ দিলে মাস্টারপ্ল্যানটি অর্থহীন হয়ে যাবে। তা আমরা হতে দেব না।” বিজেপি প্রার্থী মধুসূদন বাগ বলেন, “মাস্টারপ্ল্যানটি ত্রুটিপূর্ণ। তা যথাযথ ভাবে তৈরি করে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে বলাই আমার কাজ হবে।” সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক বলেন, “বর্তমান রাজ্য সরকার মাস্টারপ্ল্যানটি নিয়ে কিছুই করেনি। জিতলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করব।”

ঘাটালে শুধু বাড়ি বাড়ি প্রচারেই নয়, পথসভা থেকে কর্মিসভা, দেওয়াল লিখন প্রচারের সব ক্ষেত্রেই উঠে আসছে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কথা। কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া বলছেন, “ভোটে জিতলে অন্যান্য উন্নয়নের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ হবে মাস্টারপ্ল্যান রূপায়িত করে ঘাটালকে বন্যা থেকে বাঁচানো।” বিজেপির মহম্মদ আলম এবং সিপিআইয়ের সন্তোষ রানারও একই বক্তব্য। আর তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী (দেব) নিজে উন্নয়ন নিয়ে মুখ না খুলেও তাঁর দল প্রচারে বারেবারে মাস্টারপ্ল্যানের কথা তুলে ধরছে।

সেচ দফতরের হিসেবেই মাস্টারপ্ল্যান রুপায়িত হলে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় ১৩টি ব্লক উপকৃত হবে। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান’ তাঁদের কাছে ‘পাখির চোখ’। রাজ্য সরকার তাদের কাজ করেছে। কেন্দ্র সরকারকে তাদের বরাদ্দ আগের মতো ৭৫ শতাংশ করার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে। কেন্দ্রে নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে আবার তৎপরতা শুরু হবে।

আর যাঁদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য প্রার্থীদের এত প্রচারের ঢক্কানিনাদ, তাঁরা কী বলছেন?

ভুক্তভোগীদের এক সুর না আঁচালে বিশ্বাস নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy