বরফের চাদরে ঢেকে গিয়েছে পাহাড়ের চারদিক। সেই পুরু চাদর ঠেলেই এগিয়ে চলেছে চার চারটি তুষার চিতাবাঘ। বন্যপ্রাণী চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরায় এমনই একটি বিরল দৃশ্য ধরা পড়েছে। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েও পড়েছে সেই ভিডিয়ো (যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)।
আরও পড়ুন:
‘ডব্লিউডব্লিউএফ-পাকিস্তান’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের পাতায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে যে, চারটি তুষার চিতাবাঘ সারি বেঁধে বরফাবৃত পাহাড়ের ঢাল বেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ঘটনাটি কারাকোরাম শৃঙ্গের কাছে গিলগিট বাল্টিস্তানের মধ্য কারাকোরাম জাতীয় উদ্যানে ঘটেছে। দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেছেন শখাওয়াত আলি নামের এক তরুণ। তিনি পেশায় বন্যপ্রাণী চিত্রগ্রাহক এবং সেখানকার হুশে গ্রামের বাসিন্দা।
আরও পড়ুন:
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চিত্রগ্রাহক বলেন, ‘‘আমি আমার বাড়ির ছাদে ঘোরাফেরা করছিলাম। হঠাৎ মনে হল অদূরে পাহাড়ের গায়ে কিছু একটা নড়েচড়ে উঠল। দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখি একটি স্ত্রী তুষার চিতাবাঘ এগিয়ে যাচ্ছে। তার পিছনে রয়েছে তিনটি শাবক। দেখামাত্রই ক্যামেরা নিয়ে দৌড় দিই। পায়ের ছাপ অনুসরণ করতে থাকি। তার পর ২০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে চারটি তুষার চিতাবাঘকে একসঙ্গে ফ্রেমবন্দি করি। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ তুষার চিতাবাঘ দেখেছেন। তবে একসঙ্গে চারটি তুষার চিতাবাঘ কেউ দেখেননি। সকলে বলাবলি করছেন যে, আমি ভাগ্যবান।’’
সাধারণত ‘দ্য ঘোস্ট অফ মাউন্টেন্স’ বা ‘পাহাড়ের ভূত’ নামে অধিক পরিচিত তুষার চিতাবাঘ। তারা অন্য যে কোনও চিতাবাঘের চেয়ে আলাদা। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও অন্য রকম। অন্য যে কোনও চিতাবাঘের তুলনায় তুষার চিতাবাঘ মাঝারি আকারের হয়। তাদের শরীরের কাঠামো ১.৮ থেকে ২.৩ মিটারের মধ্যে হয়। তুষার চিতাবাঘের গায়ে হলদে রং থাকে ঠিকই। তবে সেই সঙ্গে থাকে কালচে ছোপ, ধোঁয়াটে রঙের আস্তরণও থাকে। তাদের চোখের রং ফ্যাকাশে ধূসর থেকে সবুজ রঙের হয়। তাদের লেজ লম্বায় ১ মিটার হয়।
পুরুষ তুষার চিতাবাঘের ওজন হয় ৪৫-৫৫ কেজি। স্ত্রী তুষার চিতাবাঘের ওজন হয় ৩৫-৪০ কেজি। বাঘের যেমন গর্জন শোনা যায়, তুষার চিতাবাঘের কিন্তু কোনও তর্জন-গর্জন নেই। বরফে মোড়া পাহাড়ে নিজেদের এতটাই অদৃশ্য করে রাখে যে, ওদের উপস্থিতি টের পাওয়াই মুশকিল। তবে ওরা গোঁ গোঁ শব্দ করতে পারে। প্রজননের সময় ছাড়া তুষার চিতাবাঘেরা কখনওই একসঙ্গে ঘোরাফেরা করে না। বরং অধিকাংশ সময় একলা বিচরণ করে তারা। তুষারাবৃত পাহাড়ি এলাকায় আস্তানা তুষার চিতাবাঘের। এতটাই উঁচু জায়গায় তারা থাকে যে, তাদের নাগাল পাওয়া দুঃসাধ্য। সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার ৪০০ মিটার উঁচুতে এদের দেখতে পাওয়া যায়।