প্রতিবেদন: সৌরভ, সম্পাদনা: বিজন
স্রেফ কথা বলা হয়নি বলেই, কত ভাষা মরে গেল! স্রেফ লেখা হয়নি বলেই হারিয়ে গেল কতশত লিপি। পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে এই মুহূর্তে ৭ হাজার ১৬৮টি ভাষার অস্তিত্ব আছে। যার মধ্যে ৪৩ শতাংশই সঙ্কটে। জীবন সংশয়ে রয়েছে ৩ হাজার ৭৮টি ভাষা। মাত্র ৪৯০টি ভাষাই এমন রয়েছে, যারা এখনও অক্সিজেন পাচ্ছে। কানাডার একটি ওয়েবসাইট তাদের প্রতিবেদনে দাবি করছে, প্রতি ৪০ দিনে একটি করে ভাষার মৃত্যু হচ্ছে। তাদের সংশয়, এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী একশো বছরের মধ্যে পৃথিবীর ৯০ শতাংশ ভাষারই মৃত্যু হবে।
ভাষা সব থেকে বেশি সঙ্কটে ওশেনিয়ায়। এখানে কম করে ৭৩৩টি ভাষা এখন কার্যত ‘ভেন্টিলেশনে’। যার ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত হতে পারে পাপুয়া নিউগিনি। ৮৮ লক্ষ মানুষের মুখে মুখে ফেরা পাঁচ শতাধিক ভাষা অবলুপ্তির পথে! ভাষার মৃত্যুমিছিলকে দীর্ঘায়িত করেছে আফ্রিকাও। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ মহাদেশে অন্তত ৪২৮টি ভাষা জীবাশ্ম হওয়ার রাস্তায় হাঁটছে। ভাষাবিদদের একাংশ মনে করছেন, এই ভাষার অবলুপ্তির নেপথ্যে যে কারণ রয়েছে তার মধ্যে সব থেকে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে ‘ডিসপ্লেসমেন্ট’। অর্থাৎ ভাষাগত একটি জনজাতির এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরের কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে শতাধিক ভাষা। তাছাড়াও যে কারণগুলো রয়েছে, তার মধ্যে অন্য একটি হল প্রকৃতি। বিশেষ করে খরা। আর এর বাইরে মনুষ্য প্রদত্ত ‘দাঙ্গা’, ‘হাঙ্গামা’ তো আছেই!
উত্তর এবং মধ্য আমেরিকায় জীবন সংশয়ে রয়েছে ২২২টি ভাষা। এই প্রসঙ্গে আরও একটি তথ্য বিস্ময় তৈরি করতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৯৮ শতাংশ আদিবাসী ভাষাই বিলুপ্তির পথে, যা গোটা পৃথিবীর পরিসংখ্যানে সর্বাধিক বলে চিহ্নিত। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ কথা সত্যি, ভাষা অবলুপ্তির পিছনে ‘অসুরীয় প্রভাব’ রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের। বেশিদিন আগের কথা নয়। ২০২১ সালেই ‘ডাউন টু আর্থ’ নামের একটি ওয়েবসাইট তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, স্রেফ দেশান্তরী হওয়ার কারণেই আমেরিকার ৯৮ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার ৮৯ শতাংশ আদি ভাষা মৃত্যুমুখী! ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্লোব ট্রেন্ডসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, পৃথিবীর ৬ কোটি মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়াও।
ভানুয়াটু, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্সের মতো দেশে সঙ্কটে শতাধিক ভাষা। ভাষার হারিয়ে যাওয়ার হাওয়া রয়েছে ভারতেও। তবে দেড়শো কোটির দেশে এখনও পর্যন্ত ৪২৪টি ভাষার অস্তিত্ব নথিভুক্ত রয়েছে। ভাবের প্রকাশে দেশ যে ভাষা ব্যবহার করছে তার মধ্যে প্রাচীনতম হল তামিল। ভারতে এখনও বেঁচে আছে সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি ভাষা। সরকারি কাজকর্ম থেকে বাজারের চাহিদা এবং লেখাপড়ায় ইংরেজি ভাষার আধিক্য থাকলেও ভারতে এখনও গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলা, হিন্দি, তেলগু, মালায়লমের মতো একাধিক মাতৃভাষা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যে অর্জন নিয়ে উৎসব হচ্ছে, কে বলতে পারে এমন এক দিনেই হয়ত হতে পারে ‘ভাষার স্মরণসভা’!
জেনে রাখুন:
* সুয়েটিনা (Tsuut’ina)— কানাডার অ্যালবার্ট প্রভিন্সে এই ভাষায় কথা বলে মাত্র ১৭ জন
* কাল্লাওয়ে (Kallawaya)— বলিভিয়ায় এই ভাষায় কথা বলে মাত্র ১০০ জন
* জেদেক (Jedek)— মালয়েশিয়ায় এই ভাষায় কথা বলেন ২৮০ জন মানুষ
* ইস্ত্রো-রোমানিয়ান (Istro-Romanian)— ক্রোয়েশিয়ায় এই ভাষায় কথা বলেন ৫০০ জন
* লিংগিত (Tlingit), কর্ণিশের (Cornish) মতো ভাষায় কথা বলার মানুষ এক হাজারেরও কম
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy