মূর্তিবৎ: ডিয়ার রেসকিউ সেন্টার
গল্প, উপন্যাসে বহু বার সাক্ষাৎ হয়েছে দলমা পাহাড়ের সঙ্গে। যেখানে দামাল হাতিদের রাজত্ব, আমাদের গন্তব্য এ বার সেখানে। টাটানগরে পৌঁছে রওনা দিলাম আসানবনির পথে। সেখানেই এক রিসর্টে থাকার ব্যবস্থা। পর দিন ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম দলমা পাহাড়ের দিকে। বড় রুখু জায়গা, জনমনিষ্যি চোখে পড়ে না সে রাস্তায়। লাল মাটির পথে ধুলো উড়িয়ে এগোতে লাগলাম। দলমা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির কাছে গিয়ে দেখলাম, প্রবেশপথে হাতির মূর্তি শুঁড় তুলে স্বাগত জানাচ্ছে। তার ঠিক বাঁ পাশেই মোটা লোহার শিকল। স্থানীয় একজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, অসুস্থ হাতি ধরা পড়লে এখানে চিকিৎসা করা হয়। তাই শিকলের ব্যবস্থা। স্যাংচুয়ারির প্রবেশপথ দিয়ে গাড়ি ঢুকতেই জঙ্গলের গা-ছমছমে ভাবটা মালুম হল। কিছু দূর এগোতে বাঁ দিকে ডিয়ার রেসকিউ সেন্টার। দরজার পাশে বিশাল শিংওয়ালা দু’টি হরিণ-মূর্তি। ঠিক করলাম, পশুপাখির দেখা না পেলে এই স্ট্যাচুর সঙ্গেই ছবি তুলব।
এগিয়ে চললাম জঙ্গুলে পাহাড়িয়া রাস্তা ধরে। সে পথে একটা গাড়িও চোখে পড়ল না। ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়লাম। ‘পিন ড্রপ সাইলেন্স’ কাকে বলে সে দিন বুঝেছিলাম। মাঝেমাঝে সেই নীরবতা ভেদ করে শোনা যাচ্ছে হাতির ডাক। হিমেল হাওয়ায় গা ছমছমানি টের পেলাম আবার। ফিরে এলাম গাড়িতে, কাচ তুলে দিয়ে এগোলাম পাহাড়ের শীর্ষে। সেখানে পৌঁছেও রক্ষে নেই। সামনে পর্বতসমান সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়ে শিব ও হনুমান মন্দিরে পৌঁছতে হবে। এক-একটা সিঁড়ির উচ্চতা শহুরে বাড়ির তিন সিঁড়ি সমান। হনুমান মন্দির পর্যন্ত পৌঁছতেই নাভিশ্বাস উঠে এল। মন্দির ছাড়িয়ে পাহাড়ের শীর্ষে ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। চারপাশের সবজে পাহাড় সামনে কম্পোজ়িট প্রোফাইলে। ভূগোলের ছাত্রী হওয়ায় টোপোশিটের মতোই নদী-নালা, জনবসতি ধরা দিল চোখে। চুপ করে বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম সেই নির্জনে।
পাহাড়িয়া: দলমার উপর থেকে
নামার সময়ে আবার ডিয়ার রেসকিউ সেন্টারের দরজায়। কিন্তু তাজ্জব বনে গেলাম। হরিণমূর্তি ভ্যানিশ! বুঝলাম মূর্তি নয়, মূর্তিবৎ দাঁড়িয়েছিল তারা। রেসকিউ সেন্টারের ঘেরাটোপের ধার ধরে এগোতেই দেখি চিতল হরিণের যেন মেলা বসেছে। উত্তেজিত হয়ে ঘাসপাতা ছিঁড়ে খাওয়াতে শুরু করলাম। আরও ভিতরে চলে গিয়েছি কখন, খেয়াল নেই। হঠাৎ থমকে গেলাম এক বিশাল শিংওয়ালা হরিণ দেখে। সে গম্ভীর ভাবে আমাকে দেখে ভিতরে চলে গেল। পিছু নিয়ে তার ডেরায় পৌঁছে আমিই স্ট্যাচু। হাত-পা নড়ানোর সাহস নেই। বিশাল শিংওয়ালা সম্বর হরিণ বসে আছে বাঘের মতো। ক্যামেরা বার করে তাক করতেই একজন উঠে দাঁড়াল। মানে-মানে কেটে পড়লাম। তবে হাতির দেখা পেলাম না সে যাত্রা। চালক বললেন, ভাগ্য ভাল যে হাতির দর্শন পাইনি। দিনকয়েক আগে তাঁর বন্ধু এসেছিলেন। গাড়ির কিছু অবশিষ্ট নেই, আর বন্ধুটি হাসপাতালে। কারণ দলমার হাতি যেমন দামাল, তেমনই ভয়ঙ্কর। তাই অসুস্থ হলেও ওদের শিকলে বেঁধে রাখতে হয়।
অবগাহন: ডিমনা লেক
পাহাড় থেকে নেমে পৌঁছলাম ডিমনা লেকের ধারে। সূর্য ঢলে পড়ছে লেকের জলে। হবু বিকেলে খিদেও পেয়েছে খুব। কিন্তু একটাও রেস্তরাঁ নেই এই চত্বরে। ডিমনা লেকের আয়তন খুব কম নয়। কিন্তু পর্যটক প্রায় নেই, রেস্তরাঁ তো দূরস্থান। বাইকে করে ঘুরতে আসা কিছু জুটি চোখে পড়ল শুধু ইতিউতি। এ জায়গার সৌন্দর্যই বুঝি এই রুক্ষ নির্জনতা। ডিমনার লেকে তখন অবগাহনে ব্যস্ত শহুরে ক্লান্ত মন। খিদে মিলিয়ে গেল নিমেষেই। লেকের ধারে গাছের তলায় পা ছড়িয়ে বসে অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠলাম, ‘সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক, বেশ তো!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy