Advertisement
২২ অক্টোবর ২০২৪
5 Must Visit Place In India

তাজমহল থেকে হাম্পি, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে ঠাঁই পাওয়া ৫ জায়গা ঘুরে নিতে পারেন

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা স্মৃতিসৌধ, জাতীয় উদ্যান, মন্দির ইত্যাদি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। তার মধ্যে ৫টির হদিস রইল আনন্দবাজার অনলাইনে।

আগরার তাজমহল।  পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য।

আগরার তাজমহল। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:১৬
Share: Save:

ভারত জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক নিদর্শন। ইতিহাস, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, সংস্কৃতি-সহ একাধিক বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে, সেই স্থানকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র’ (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট)-এর তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো। এ দেশে সেই সংখ্যা নেহাত কম নয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তালিকায় স্থান পেয়েছে ভারতের ৪৩টি স্থান। তার মধ্যে স্মৃতিসৌধ, মন্দির, গুহা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে জাতীয় উদ্যান-সহ বিভিন্ন জায়গা। প্রতিটি স্থানের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তার মধ্যে ৫টি জায়গার হদিস রইল এখানে।

তাজমহল, আগরা

শুধু ভারত নয়, বিশ্বের কাছেও বিস্ময় তাজমহল। এই স্মৃতিসৌধ পর্যটকদের কাছে ভালবাসার স্মারক বলেই পরিচিত। ইতিহাসে প্রচলিত, মোগল সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী মুমতাজের স্মৃতিতে এটি তৈরি করিয়েছিলেন। বিশ্বের সাত আশ্চর্যের এক আশ্চর্য তাজমহলের কথা জানেন না, এমন মানুষ ভূ-ভারতে বোধ হয় পাওয়া যাবে না। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো তাজমহলকে ‘বিশ্ব হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করে।

‘তাজ’ শব্দের অর্থ মুকুট। যমুনার তীরে অবস্থিত তাজমহল দেখতে শুধু দেশ নয়, বিদেশ থেকেও অগণিত পর্যটক আসেন। ১৬৫৩ সালে এই স্থাপত্যের নির্মাণকাজ শেষ হয়। স্থাপত্যশৈলী ও সৌন্দর্যের জন্য এই স্থান পৃথিবীর কাছেই এক বিস্ময়। মার্বেলের পাথরের উপর রঙিন পাথরের কারুকাজ আজও মুগ্ধ করে পর্যটকদের।

হাম্পি, কর্নাটক

‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’, বললেই মনে পড়ে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক উপন্যাসের কথা। সেই তুঙ্গভদ্রা নদীর পাশেই কর্নাটকের ঐতিহাসিক শহর হাম্পি। এক সময় এই স্থানকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল বিজয়নগর সাম্রাজ্য। দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী হিন্দুরাজ্য হিসাবে খ্যাতি ছিল বিজয়নগরের। এই হাম্পিতেই এখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রাচীন মন্দির, ঐতিহাসিক নিদর্শন, ধ্বংসাবশেষ। ১৯৮৬ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি দেয় হাম্পিকে। এখানে এলে ঘুরে নিতে পারেন বিরূপাক্ষ মন্দির। কেউ কেউ আবার একে পম্পাপতির মন্দিরও বলেন। প্রবেশপথে রয়েছে তোরণ ও দু’টি বিশালাকার প্রাঙ্গণ। মন্দিরের মূল গর্ভগৃহে রয়েছে পাথরের তৈরি বিশাল শিবলিঙ্গ। এ ছাড়াও মন্দিরের ভিতরে রয়েছে পম্পাদেবী, ভুবনেশ্বরী, পাতালেশ্বর, সূর্যনারায়ণ প্রভৃতি দেবতার মন্দির। এখানকার আর এক সুন্দর মন্দির হল বিজয়বিঠ্ঠ‌ল। মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে গ্রানাইট পাথরের তৈরি একটি সুবিশাল রথ। তার গায়ে গায়ে সূক্ষ্ম কারুকার্য। রয়েছে মিউজ়িক টেম্পল। একক পাথরের তৈরি বিশালাকার ১৬টি স্তম্ভ ধরে আছে মন্দিরের ছাদ। কান পেতে আঘাত করলেই শোনা যায় সপ্তসুর।

ঐতিহাসিক শহর হাম্পি রাখতে পারেন ভ্রমণ তালিকায়।

ঐতিহাসিক শহর হাম্পি রাখতে পারেন ভ্রমণ তালিকায়। ছবি: সংগৃহীত।

খাজুরাহো, মধ্যপ্রদেশ

ভারতীয় মন্দির ভাস্কর্যের উৎকর্ষের অন্যতম নিদর্শন খাজুরাহো। এখানে একটি নয়, বরং বিস্তীর্ণ চত্বর জুড়ে দেখা যায় একাধিক মন্দির। অপূর্ব সেগুলির নির্মাণশৈলী। জানা যায়, ৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শেষ হয়েছিল বেশির ভাগ মন্দির তৈরির কাজ। এক সময় এখানে অসংখ্য মন্দির নির্মাণ হলেও বর্তমান টিকে রয়েছে ২০-২৫টি। তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় নির্মাণগুলিকে। ‘ওয়েস্টার্ন’, ‘ইস্টার্ন’ এবং ‘সাদার্ন’ ক্লাস্টার। এর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক এবং সেরা মন্দিরগুলি আছে পশ্চিম দিকের অংশেই। ‘নাগারা’ ঘরানায় তৈরি খাজুরাহো মন্দিরগুলির বৈশিষ্ট্য হল এর গঠনশৈলী। প্রতিটি মন্দিরের অন্যতম অংশ ‘অর্ধমণ্ডপ’, ‘মণ্ডপ’, ‘মহামণ্ডপ’, ‘অন্তরাল’, ‘গর্ভগৃহ’ এবং ‘প্রদক্ষিণ’। বহিরাংশ বেলেপাথরে তৈরি প্রতিটি মন্দিরের গর্ভগৃহ তৈরি হয়েছে গ্রানাইটে। এখানকার মন্দিরগুলির মধ্যে বিখ্যাত ‘কাণ্ডারিয়া মহাদেব মন্দির’, ‘লক্ষ্মণ মন্দির’ এবং ‘বিশ্বনাথ মন্দির’। এখানকার বিভিন্ন মন্দিরের গাত্রে সুনিপুণ ভাবে রতিভাস্কর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই মন্দির নিয়ে বিশেষ চর্চা সেই কারণেই।

 মধ্যপ্রদেশে খাজুরাহোর মন্দির।

মধ্যপ্রদেশে খাজুরাহোর মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

ইলোরা গুহা, মহারাষ্ট্র

মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে অজন্তা এবং ইলোরার কথা ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাস বইতে। এখানকার আঁকার পদ্ধতি, রং সমস্ত কিছু নিয়ে আজও চর্চা হয়ে চলেছে। ইলোরার ‘কৈলাস’ মন্দিরের শিল্পকর্ম দেখে আজও বিস্মিত হন মানুষ। এখানে ৩৪টি গুহা রয়েছে। ইলোরার গুহায় দেখা যায়, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের নিদর্শন। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের ১২টি, হিন্দু ধর্মের ১৭টি এবং জৈন ধর্মের ৫টি মন্দির রয়েছে। বৌদ্ধ গুহাগুলির মধ্যে ১০, ১১, ১২ সংখ্যক গুহা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অপূর্ব শিল্পসৌকর্যের জন্য ইলোরা ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কোর থেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি আদায় করে নেয়।

ইলোরার গুহা।

ইলোরার গুহা। ছবি: সংগৃহীত।

কোনার্ক সূর্যমন্দির, ওড়িশা

কোনার্কের সূর্যমন্দির।

কোনার্কের সূর্যমন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

সৌন্দর্য এবং গুরুত্বের দিক থেকে কোনার্ক সূর্যমন্দিরের নাম বিশ্বজোড়া। পুরীর নিকটবর্তী কোনার্কে অবস্থিত এই মন্দরটি ১২৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম নরসিংহ দেব নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। সংস্কৃত শব্দ ‘কোনার্ক’ এসেছে কোণ এবং অর্কের সমন্বয়ে। ‘অর্ক’ শব্দের অর্থ সূর্য। এই মন্দিরের আরাধ্য হলেন সূর্যদেব। ওড়িশা ও দ্রাবিড় স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে নির্মিত মন্দিরটি ধূসর বেলেপাথরে বিশাল একটি রথের আকারে গড়া হয়েছে। সমুদ্র থেকে উঠে আসা সূর্যদেবের বিশাল রথ, তার সামনে রয়েছে ঘোড়া। ১২ জোড়া বিশাল চাকার ওপর পুরো মন্দিরটি নির্মিত। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমণ্ডপ। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে নাটমন্দির, ভোগমন্দির এবং গর্ভগৃহ। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী, শৈল্পিক ভাবনার গুণে এটিও ইউনেস্কোর থেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পায় ১৯৮৩ সালে।

অন্য বিষয়গুলি:

Travel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE