খুব বেশি দূরে কোথাও যেতে না চাইলে ঘুরে আসুন শ্রীরামপুর থেকে। ছবি: ইউটিউব থেকে সংগৃহীত
শীতকাল হল পিকনিকের আদর্শ সময়। শীতের রোদ গায়ে মেখে বনভোজনের মজাই আলাদা। বছরের এই সময়টা বেশ কিছু দিন ছুটি থাকে। দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে পরিবারের সকলকে নিয়ে কাছেপিঠে এক দিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। অনেকে মিলে গেলে শীতের আমেজে পিকনিকও করে আসতে পারেন। খুব বেশি দূরে কোথাও যেতে না চাইলে ঘুরে আসুন শ্রীরামপুর থেকে।
হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত শ্রীরামপুর কয়েকশো বছরের পুরনো শহর। ইতিহাসবিদদের মতে, শ্রীরামপুরের পত্তন কলকাতা উৎপত্তিরও আগে। আঠারো শতকের মাঝামাঝি শ্রীরামপুর হয়ে ওঠে বাণিজ্যনগরী। এখানে পা দিলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে পুরনো আমলের কিছু স্মৃতি। হুগলি জেলার সবচেয়ে উন্নত একটি শহর হল শ্রীরামপুর। শিক্ষা আর সংস্কৃতিচর্চার জন্য পরিচিত এ শহর। ঐতিহাসিক এই শহরে এলে মন আর মাথা দুই-ই শান্ত হয়ে যাবে। এ শহরের পা দিলেই কয়েকশো বছর পিছিয়ে যাবেন। এক দিনের ছুটি নিয়ে এখানে ঘুরতে এলে আপনি খালি হাতে যাবেন না। গঙ্গাপাড়ের এই শহরে ড্যানিশ উপনিবেশ চলেছিল প্রায় নব্বই বছর। ওই সময়ে শ্রীরামপুরে তৈরি হয় বিভিন্ন স্থাপত্য। তার কিছু এখনও জীবিত রয়েছে। এখানে দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। সময়ের সরণি বেয়ে দু’শো বছর অতিক্রম করেছে শ্রীরামপুর কলেজ। এশিয়ার প্রথম মিশনারি কলেজ। প্রথম মিশনারি বিশ্ববিদ্যালয়ও। এই প্রতিষ্ঠানের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে ইতিহাসের নানা উপকরণ। শ্রীরামপুরে গেলে ইতিহাসের সাক্ষী হতে এই কলেজ থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
শ্রীরামপুরে এলে হাতে সময় নিয়ে আসা জরুরি। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দেখতে গেলে সবচেয়ে পুরনো আর পুরীর পরে দ্বিতীয় প্রাচীন রথযাত্রা হয় মাহেশে। তাই শ্রীরামপুরে গেলে মাহেশের জগন্নাথ মন্দির দেখে আসতেই হবে।
১৬৬৭ সালে তৈরি হয় রাধাবল্লভ মন্দির। গঙ্গাপারে নির্মিত হওয়ার কারণে পরিচর্যার অভাবে জীর্ণ হতে শুরু করে। পরে অবশ্য ঔপনিবেশিক শাসনকালে এই মন্দির সংস্কার করা হয়। শ্রীরামপুরের ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দিরের সঙ্গে। তাই এই শহরে এলে এক বার ঘুরে আসতে পারেন।
শ্রীরামপুরের গভর্নমেন্ট হাউসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। তৎকালীন ড্যানিশ আমলে তৈরি হলেও পরবর্তী কালে ইংরেজ আমলে এবং ভারতের নিজস্ব শাসনকালে এই হাউসটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি জায়গা ছিল। বর্তমানে এটি একটি প্রদর্শশালায় রূপান্তরিত হয়েছে। শ্রীরামপুর গেলে এখানে এক বার ঢুঁ মেরে না আসলেই নয়।
এ ছাড়াও কাশীশ্বর পীঠ, শ্রীরামপুর রাজবাড়ি, ২৫০ বছরের পুরনো সেন্ট ওলাভস চার্চ, দোল মন্দির, ব্যাপটিস্ট চার্চ (উইলিয়াম কেরির গঙ্গাপারে প্রথম বাসভবন), নিস্তারিণী কালীমন্দির তো রয়েছেই। শ্রীরামপুরে এলে একেবারে নতুন কিছু অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন। তাই এই শীতে পিকনিক করতে ইচ্ছা হলে সকলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন শ্রীরামপুরের উদ্দেশে।
কোথায় পিকনিক করবেন?
শ্রীরামপুরে পিকনিক করার অন্যতম জায়গা হল জলকল পার্ক। দিগন্তবিস্তৃত মাঠ। চারিদিকে সবুজের সমাহার। বহু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কিছু গম্বুজাকৃতি স্থাপত্য। পাশেই ছোট একটি জলাশয় রয়েছে। সেই জলাশয়ের বুক চিরে চলে গিয়েছে ইট-সুড়কির রাস্তা। জলের উপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ভুলবেন না। ইদানীং বহু ছবির শুটিংয়ের জন্যেও ব্যবহৃত হচ্ছে এই জায়গাটি। এখানে পিকনিক করতে আসার আগে জলকলের একটি স্থানীয় অফিস রয়েছে। সেখানে এক বার যোগাযোগ করে নিতে হবে।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেনে হাওড়া থেকে মেন লাইনের লোকাল ট্রেনে চেপে ৩০ মিনিটের পথ পেরিয়ে যেতে হবে শ্রীরামপুরে। স্টেশন থেকে টোটো ভাড়া করে যেতে হবে পিকনিকের জায়গায়। এ ছাড়া, সড়কপথে গাড়ি করে শ্রীরামপুরে পৌঁছতে সময় লাগবে ঘণ্টা দেড়েক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy