Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Winter Travel

ভিড়ভাট্টা পছন্দ নয়? এই শীতে ঘুরে আসতে পারেন উত্তরাখণ্ডের স্বল্পচেনা ৩ পর্যটনকেন্দ্র থেকে

শীতে বরফের চাদরে গড়াগড়ি খেতে চান? পর্যটকদের ভিড় এড়াতে চাইলে ঘুরে নিন উত্তরাখণ্ডের স্বল্পচেনা ৩ ঠিকানায়।

ঘুরে আসতে পারেন উত্তরাখণ্ডের হর্ষিল থেকেও।

ঘুরে আসতে পারেন উত্তরাখণ্ডের হর্ষিল থেকেও। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭
Share: Save:

শীতের ভ্রমণে কেউ কেউ যেমন সমুদ্র বেছে নেন, তেমনই কারও পছন্দের তালিকায় থাকে পাহাড়। বরফ ঢাকা পাহাড়ের ঢালে হুটোপাটি করতে গেলে, শীত ছাড়া গতি নেই। হিমালয়ের সান্নিধ্য, বরফ দুই-ই একসঙ্গে পেতে ঘুরে নিতে পারেন উত্তরাখণ্ডের আনাচকানাচে। ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে একটু ‘অফবিট’ জায়গার সন্ধান চাইলে ঘুরে নিতে পারেন ৩ ঠিকানায়।

কানাতাল

মুসৌরির কাছে, অথচ উপচে পড়া পর্যটকের ভিড় পাবেন না এখানে। পাইন বনে ঢাকা, তুষারাবৃত পর্বতশিখরে ঘেরা কানাতাল উত্তরাখণ্ডের একটি সুন্দর শৈলশহর। নিরিবিলি এই জায়গাটি গত কয়েক বছরে ক্রমশই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখানে এসে কাটিয়ে দিতে পারেন তিন-চারটি দিন। ট্রেকিং, হাইকিং, দুই-ই করা যায় কানাতাল থেকে। শীতের মরসুমে এলে বাড়তি পাওনা হবে বরফ।

জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে কানাতাল ঢেকে যায় বরফে।

জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে কানাতাল ঢেকে যায় বরফে। ছবি: সংগৃহীত।

প্রবল ঠান্ডায় কানাতাল ঢেকে যায় তুষার চাদরে। এখানে থেকে আশপাশের প্রকৃতি যেমন উপভোগ করতে পারেন, তেমনই গাড়ি অথবা বাইকে ঘুরে নিতে পারেন তেহরি জেলার চম্বা শহর। দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। কানাতাল থেকে মসৌরির পথে ১৮ কিলোমিটার গেলে দেখতে পাবেন সুরকান্ডা মন্দির। এখান থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে ধানোল্টি। সেখানে ইকো পার্ক রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের সুযোগ। কানাতাল থেকে ঘুরে নেওয়া যায় তেহরি জলাধারও। মলদ্বীপের ওয়াটার ভিলার ধাঁচে জলাধারের উপর কটেজে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। আবার হৃষীকেশের রাস্তায় গেলে ঘুরে নেওয়া যাবে নরেন্দ্রনগর। কানাতালে থাকার জন্য রয়েছে হোম স্টে, হোটেল। রয়েছে ক্যাম্পিং-এর ব্যবস্থাও। এখানে চেখে দেখতে পারেন স্থানীয় খাবার।

কী ভাবে যাবেন?

কানাতালের সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর রয়েছে দেহরাদূনে। কানাতাল থেকে দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। আর যদি ট্রেনে আসতে চান, তা হলে নামতে পারেন দেহরাদুন রেল স্টেশনে বা হৃষিকেশে যোগনগরী রেল স্টেশন থেকেও কানাতাল আসা যায়। আসার জন্য ট্যাক্সি, শেয়ার ট্যাক্সি, বাস, বাইক, গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন।

হর্ষিল

উত্তরাখণ্ডের এ এমন জায়গা, যার নাম হয়তো এখনও অনেকে শোনেননি। পাহাড় ঘেরা এই উপত্যকার আশপাশে রয়েছে একাধিক হিমবাহ। যেখানে থেকে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন নদীর।

দেহরাদূন থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে হর্ষিল উপত্যকা। এখানে বয়ে চলা ভাগীরথী নদী (পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথীর সমনামী, কিন্তু আলাদা নদী), বরফ ঢাকা পাহাড়, পাইন, দেবদারুর জঙ্গল দেখে মনে হতেই পারে, ক্যানভাসে আঁকা কোনও ছবি। হর্ষিল উপত্যকা জুড়ে রয়েছে একাধিক ছোট-বড় গ্রাম। ঘরবাড়িতে আঁকা রকমারি ছবি। হর্ষিল বাজারের কাছেই বাগোরি গ্রাম। ভীষণ সহজসরল এখানকার মানুষ। অতিথিপরায়ণ। কাঠের তৈরি ঘর। সংলগ্ন আপেল বাগান। বাগোরি গ্রামের সেই সৌন্দর্য বাড়তি মাত্রা যোগ করে রঙিন পতাকা, ঘণ্টাধ্বনি। এখানে রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির বা গুম্ফা। প্রবল ঠান্ডার জন্য এখানকার বাসিন্দারা ছ'মাস এখানে থাকেন, ছ'মাস নীচে কোনও গ্রামে চলে যান। এখান থেকেই দেখা যায় গঙ্গোত্রী রেঞ্জ। পড়ন্ত বিকেলে তুষারাবৃত এই শৃঙ্গের সৌন্দর্য থেকে চোখ সরানো কঠিন। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন আশপাশের গ্রাম। গ্রামে থাকতে গেলে হাতে গোনা কয়েকটি হোম স্টে পাবেন।

কী ভাবে যাবেন?

হর্ষিল উপত্যকা যেতে হলে আসতে হবে দেহরাদূন। বিমানবন্দর থেকে হর্ষিলের দূরত্ব ২৩২ কিলোমিটার। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন। ট্রেনে এলে হৃষীকেশ, দেহরাদূন, হরিদ্বার, যে কোনও জায়গা থেকেই হর্ষিল আসতে পারেন। দিল্লি থেকেও গাড়ি নিয়ে হর্ষিল আসা যায়। নভেম্বরের পর থেকে এখানকার গ্রামগুলিতে বরফ পড়া শুরু হয়। তাই যাওয়ার আগে পরিস্থিতি বুঝে নেওয়াই ভাল।

মুন্সিয়ারি

অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শীতে বরফে ঢাকা গ্রাম দেখতে হলে আসতে হবে উত্তরাখণ্ডের মুন্সিয়ারিতে। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে এখান থেকেই দেখা মেলে পঞ্চচুলির। বরফে ঢাকা পাঁচ শৃঙ্গ। তাতে যখন দিনের প্রথম রবিকিরণ এসে পড়ে, মনে হয় যেন আগুন লেগেছে তার গায়ে।

এ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে কাহিনিও। কুরুক্ষেত্র জয়ের পর পাণ্ডবেরা স্বর্গযাত্রার জন্য রওনা হন। বলা হয়, মুন্সিয়ারিতে তাঁদের পাণ্ডবদের জন্য শেষ রান্না করা হয়েছিল পঞ্চচুলিতে। 'চুলি' মানে উনুন। কেউ কেউ মনে করেন, সূর্যোদয়ের সময় বরফাবৃত শৃঙ্গের অমন রূপের জন্যই তাকে চুলি বা উনুনের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

মুন্সিয়ারির পঞ্চচুলি।

মুন্সিয়ারির পঞ্চচুলি। ছবি: সংগৃহীত।

মেঘ, কুয়াশার চাদর সরলে রোদ ঝলমলে দিনে মুন্সিয়ারি থেকেই দৃষ্টিগোচর হয়, নন্দাদেবী, নন্দাকোট, রাজরম্ভা শৃঙ্গ। মুন্সিয়ারি থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে বিরথি জলপ্রপাত। ১২০ মিটার উচ্চতা থেকে আছড়ে পড়া এই জলপ্রপাতের রূপ পর্যটকদের কাছে অতি প্রিয়। এখান থেকে ঘুরে নেওয়া খালিয়া টপ, নন্দাদেবীর মন্দির, থামকি কুণ্ড, মাদকোট উষ্ণ প্রস্রবণ, কালামুনির মন্দির।

মুন্সিয়ারিতে থাকা জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। আছে হোম স্টেও। এখানে পাহাড়ি অঞ্চলের সমস্ত খাবারই পেয়ে যাবেন।

কী ভাবে যাবেন?

মুন্সিয়ারির কাছের বিমানবন্দরটি রয়েছে নৈনিতালের পন্তনগরে। সেখান থেকে গাড়িতে মুন্সিয়ারি। দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এ ছাড়া কাঠগোদাম বা টনকপুর রেল স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে মুন্সিয়ারি আসতে পারেন। কাঠগোদাম থেকে মুন্সিয়ারির দূরত্ব ২৭৫ কিলোমিটার। নৈনিতাল থেকে দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার।

অন্য বিষয়গুলি:

travel Uttarakhand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy