তিনি নিজেকে পাহাড়ের কন্যা বলে দাবি করেন। হিমাচলের মণ্ডীর সাংসদ তথা বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত যে বাঘা বাঘা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন, তার একটা বড় কারণ সেটিই বলে মনে করেন ভোটের নজরদারেরা। প্রচারে কঙ্গনা হিমাচলী পোশাক পরে, স্থানীয় ভাষায় কথা বলে, স্থানীয় খাবারদাবারের গল্প করে মণ্ডীর বাসিন্দাদের মধ্যে তাঁর হিমাচলি শিকড় নিয়ে বিশ্বাস গেঁথে দিতে সফল হয়েছিলেন। এ বার তাঁর সেই প্রিয় পাহাড়ের কোলেই নিজের ক্যাফে খুলতে চলেছেন কঙ্গনা।

ক্যাফের বাইরেটা তৈরি হয়েছে হিমাচলের পাহাড়ি বাড়ির আদলে। ছবি: কঙ্গনা রনৌতের ইনস্টাগ্রাম থেকে।
দেখতে কেমন সেই ক্যাফে?
ক্যাফের জানলা আর বারান্দা দিয়ে দেখা যায় বরফে মোড়া পাহাড়। ক্যাফের সামনে ঘুরে বেড়ায় ভেড়ার পাল। ক্যাফের বাইরেটা তৈরি হয়েছে হিমাচলের পাহাড়ি বাড়ির আদলে। দরজায় রঙিন পাহাড়ি শিল্প। ক্যাফের নাম ‘দ্য মাউন্টেন স্টোরি’। যে পাহাড়ের গল্প বার বার শুনিয়েছেন কঙ্গনা, সেই সব গল্প গেঁথে হবে ক্যাফে। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেই ক্যাফের ছবি, ভিডিয়ো ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেত্রী। বিবরণে লিখেছেন, ‘‘ছোটবেলার স্বপ্ন সত্যি হল। হিমালয়ের কোলে আমার ছোট্ট ক্যাফে— ‘দ্য মাউন্টেন স্টোরি’। আসলে এটা পাহাড়ের গল্প নয়, প্রেমের গল্প।’’

কঙ্গনার ক্যাফেতে একই সঙ্গে পাহাড়ি কাঠ-পাথরের নকশা, আবার ব্রিটিশ নকশার প্রভাব। ছবি: কঙ্গনা রনৌতের ইনস্টাগ্রাম থেকে।
প্রেমের গল্প তাই সাধারণ জনতার জন্য ক্যাফের দরজাও খুলছে প্রেম দিবসেই। ভিডিয়োর নেপথ্যে কঙ্গনার কণ্ঠস্বরকে বলতে শোনা যায়, ‘‘দ্য মাউন্টেন স্টোরি-তে আপনাদের স্বাগত।’’ কঙ্গনা জানান, কী ভাবে ছোটবেলা থেকে তিনি এমন একটি ক্যাফে খোলার স্বপ্ন দেখেছেন। দেশে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যখনই পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছেন, তখনই খেয়াল করেছেন, সেখানকার রেস্তরাঁ বা ক্যাফেতে কেমন খাবার পরিবেশন করা হয়। সেই সব খাবার দিয়েই তিনি সাজিয়েছেন মেনু। সেই সব খাবারের কয়েক ঝলক দেখা যায় কঙ্গনার ভাগ করে নেওয়া ভিডিয়োতেও।

ছোটবেলা থেকে এমন একটি ক্যাফে খোলার স্বপ্ন দেখেছেন কঙ্গনা রনৌত। ছবি: কঙ্গনা রনৌতের ইনস্টাগ্রাম থেকে।
কী কী খাবার পাওয়া যাবে?
ভিডিয়োটি শুরু হয় পাহাড়ের কোলে কঙ্গনার রেস্তরাঁর একটি লং শটে। দূর থেকে দেখা যায় পাহাড়ি ভেড়ার পালের পাশ কাটিয়ে কঙ্গনা ঢুকছেন ক্যাফের দরজা ঠেলে। তাঁর পরনে হিমাচলি জোব্বা। তাঁকে ক্যাফের ভিতরে যাঁরা স্বাগত জানান, সেই তরুণ-তরুণীর পোশাকেও হিমাচলি সংস্কৃতির ঝলক। মাথায় রঙিন হিমাচলি টুপি। এর পরেই ক্যামেরা ঘোরে খাবারের থালায়। দেখা যায়, রুপোলি থালায় গোল করে সার সার রুপোলি বাটি সাজিয়ে তাতে খাঁটি পাহাড়ি খাবার এক পাহাড়ি রমণীকে পরিবেশন করছেন কঙ্গনা। ভাতের পাশে চানা মশালা, কালি ডাল, ভুনা চিকেন, কালি মাস, পনির, রায়তা সাজানো এক একটি বাটি। ভিডিয়োর শেষে কঙ্গনাকে পিৎজ়া, পাস্তা এবং নাম না জানা কিছু শৌখিন খাবারও এনে রাখতে দেখা যায় লাল-সাদা চৌখুপি আঁকা টেবিল ক্লথের উপরে। হাসিমুখে তিনি প্লেটে সাজিয়ে দেন কেক-কুকিজ়ও।

রুপোলি থালায় গোল করে সার সার রুপোলি বাটি সাজিয়ে তাতে খাঁটি পাহাড়ি খাবার এক পাহাড়ি রমণীকে পরিবেশন করছেন কঙ্গনা। ছবি: কঙ্গনা রনৌতের ইনস্টাগ্রাম থেকে।
হঠাৎ ক্যাফে কেন!
ভিডিয়ো দেখে কে বলবে এই কঙ্গনাকে ‘মুখরা’ বা ‘দুর্মুখ’ বলে বলিউডের সিংহভাগ। কে বলবে এই কঙ্গনা সংসদে বা সংসদের বাইরে সুযোগ পেলেই বিপক্ষের রাজনীতিবিদদের যা নয় তা-ই বলতে পারেন! তবে এই কঙ্গনা যে আলাদা, তা তাঁর সমাজমাধ্যমের পোস্ট দেখানোর চেষ্টায় মগ্ন। ইনস্টাগ্রামে ক্যাফের প্রথম ছবিটি দিয়ে কঙ্গনা লিখেছিলেন, ‘‘পাহাড় যখন ডেকেছে, তখন সাড়া তো দিতেই হয়। কারণ, পাহাড় আমার পাঁজরের হাড়, নদী আমার শিরায়, বনানী আমার ভাবনায় আর আমার স্বপ্নে আমি দেখি তারা।’’ সেই ছবিতে পাহাড়ে ঢাকা পাহাড়ের পটভূমিতে দেখা যাচ্ছে, কাঠ আর ধূসর গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি কঙ্গনার ক্যাফে। পরের পোস্টে দেখা যায় বরফে ঢেকেছে রেস্তরাঁর ছাদ, বারান্দা, উঠোন। কঙ্গনা তার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘বিশ্বের যে সব জায়গায় গিয়ে শান্তি পাই, স্বাধীনতার মানে বুঝতে পারি, সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাহাড়।’’

কে বলবে এই কঙ্গনা সংসদে বা সংসদের বাইরে সুযোগ পেলেই বিপক্ষের রাজনীতিবিদদের যা নয় তা-ই বলতে পারেন! ছবি: কঙ্গনা রনৌতের ইনস্টাগ্রাম থেকে।
ঠিকানা কোথায়?
ক্যাফেটি কোথায়, তা অবশ্য স্পষ্ট করে জানাননি কঙ্গনা। কঙ্গনা হিমাচলের কন্যা। তাঁর বাড়ি মণ্ডীতে। ক্যাফেটিও যে হিমাচলেরই পাহাড়ে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ক্যাফের ছাদ বা বারান্দা থেকে দৃশ্যমান বরফে ঢাকা পাহাড় দেখে তা বোঝা যায়। তবে শোনা যাচ্ছে, ক্যাফেটি কঙ্গনা খুলেছেন হিমাচলের মনোরম শহর মানালিতে।
বলিউডের তারকাদের অনেকেই রেস্তরাঁর ব্যবসা করেন। মলাইকা অরোরা, শিল্পা শেট্টি, হৃতিক রোশন, করণ জোহর, শাহরুখ খানের পত্নী গৌরী খানেরও নিজস্ব রেস্তরাঁ রয়েছে। কঙ্গনাও সেই দলে নাম লেখালেন।