Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
5 Temples Of India

পাহাড়, সমুদ্র শুধু নয়, ভ্রমণের তালিকায় রাখতে পারেন ভারতের ৫ মন্দিরও

নানা ভাষা, নানা ধর্মের দেশ ভারত। এ দেশেই ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধর্মের উপসনালয়, গুরুদ্বার, মন্দির। এমনই বিখ্যাত ৫ মন্দির আপনিও ঘুরে নিতে পারেন।

মধ্যপ্রদেশের খাজুরোহোর মন্দির।

মধ্যপ্রদেশের খাজুরোহোর মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ১০:১৬
Share: Save:

ভ্রমণের সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম। কারও কাছে ভ্রমণ মানেই তীর্থযাত্রা। কেউ আবার সেই তীর্থস্থানে যান নিছক পুণ্যলাভের আশায় নয়, সেখানকার সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, ইতিহাসের টানেও। কারও কাছে মন্দির মানে ভক্তির স্থান। কারও কাছে মন্দির মানে দেবদর্শনের পাশাপাশি সেই জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করা।

তবে আপনি যে দলেই পড়ুন না কেন, ভ্রমণের তালিকায় জুড়ে নিতে পারেন এ দেশের বিভিন্ন মন্দির। উত্তর থেকে দক্ষিণ, ভারতে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। কোনওটির বিশেষত্ব লুকিয়ে তার নির্মাণশৈলীতে। কোনওটি বিখ্যাত তার অসাধারণ ভাস্কর্যের জন্য। কোনওটির পরিচয় তার প্রাচীনত্বে। এমনই ৫ মন্দির আপনিও ঘুরে নিতে পারেন।

খাজুরাহোর মন্দির

ইতিহাস বইয়ে পড়া খাজুরোহের মন্দিরের কথা মনে আছে? মধ্যপ্রদেশের ছতরপুর জেলায় গেলে চাক্ষুষ করতে পারবেন মন্দিরের অসাধারণ শৈল্পিক সৌন্দর্য। খাজুরাহো এখন ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট। এখানকার মন্দিরগুলির গোড়াপত্তন হয়েছিল চান্দেলা বংশের শাসনে। ৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শেষ হয়েছিল বেশির ভাগ মন্দির তৈরির কাজ। নথি বলছে, দ্বাদশ শতকে ২০ বর্গ কিমি এলাকায় ছিল ৮৫টি মন্দির। সেগুলির মধ্যে এখনও অস্তিত্ব রয়েছে ২৫টি মন্দিরের। সবুজ গাছগাছালির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রয়েছে সেগুলি। সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ‘কাণ্ডারিয়া মহাদেব মন্দির’, ‘লক্ষ্মণ মন্দির’ এবং ‘বিশ্বনাথ মন্দির’।

খাজুরাহোর মন্দির  এখন ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট।

খাজুরাহোর মন্দির এখন ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট। ছবি: সংগৃহীত।

এই মন্দিরগুলির গাত্রে শুধু রতিভাস্কর্য নয়, ফুটে উঠেছে দৈনন্দিন জীবনের বহু দৃশ্য। তবে এই মন্দির নিয়ে বিশেষ চর্চা রতিভাস্কর্যের কারণেই।

অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির

অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির।

অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

শিখদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির ভারতের এক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। সরোবরে ঘেরা স্বর্ণচূড়া সম্বলিত এই বিশাল গুরুদ্বারে এসে ভক্তিভরে দাঁড়ান বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ। আর নিছক যাঁরা ভ্রমণের টানে সেখানে যাবেন, তাঁরা চাক্ষুষ করতে পারেন, স্বর্ণমন্দিরের কারুকাজ, মার্বেল পাথরের প্রদক্ষিণ-পথ, রুপোর সুবিশাল দরজা। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে সোনা, রুপো এবং হাতির দাঁতের কারুকাজ।

স্বর্ণমন্দিরের ‘দরবার সাহিব’-এ রয়েছে শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ ‘শ্রী গুরু গ্রন্থসাহিব’। এখানে কোনও বিগ্রহ নেই, নেই কোনও পুজোপাঠের অনুষ্ঠান। গুরু গোবিন্দ সিংহের সংকলিত, হাতে লেখা ‘গ্রন্থসাহিব’-কেই এখানে গুরুজ্ঞানে দেখা হয়। দিবারাত্র চলে নামগান এবং পাঠ।

শিখদের চতুর্থ গুরু রামদাস মন্দির সংলগ্ন সরোবরের খনন সম্পূর্ণ করেছিলেন। পরবর্তী কালে মন্দির নির্মাণের পর বার বার তার উপর আঘাত আসে। রণজিৎ সিংহ শিখ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর বর্তমান স্বর্ণ মন্দিরের নির্মাণসাধন হয়। তিনি সোনার পাতে মুড়ে দিয়েছিলেন ওই বিরাট গুরুদ্বারের গম্বুজ। সেই থেকে এর নাম হয় স্বর্ণমন্দির।

স্বর্ণমন্দির চত্বরে রয়েছে বিশাল লঙ্গরখানা। সেখানে হাজারের বেশি মানুষ একসঙ্গে বসে খেতে পারেন।

তিরুপতি মন্দির

অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলায় তিরুমালার শিখরে রয়েছে তিরুপতি বালাজির মন্দির। প্রতিষ্ঠাতা হলেন বিজয়নগরের রাজা কৃষ্ণদেব রায়। তেলুগু ভাষায় ‘তিরু’ কথার অর্থ শ্রী বা লক্ষ্মী, অর্থাৎ লক্ষ্মীর পতি বা তিরুপতি। তিনি মূলত বিষ্ণু। বিশ্বাস, এখানে দেবতা বড় জাগ্রত। বালাজি দর্শনে তাই রাজনীতিক থেকে চলচ্চিত্র জগতের লোকজন, সাধারণ মানুষ, এমনকি হতদরিদ্রেরাও আসেন। তিরুপতি স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ৮৬০ মিটার উচ্চতায় তিরুমালা মন্দির শহর। তামিল ভাষায় ‘তিরুমালা’ শব্দের অর্থ হল ‘পবিত্র পাহাড়’।

অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি মন্দির।

অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

তিরুপতি মন্দিরে রয়েছেন বালাজি। কষ্টিপাথরের চতুর্ভুজ দণ্ডায়মান মূর্তির দুই হাতে শঙ্খ ও চক্র, অন্য হাতে অভয়মুদ্রা ও আর এক হাত কোমরে, পাশে শ্রীদেবী ও ভূদেবী। মন্দির সংলগ্ন স্বামী পুষ্করিণীর জলে স্নান করে পবিত্র হয়ে বালাজির দর্শন করার প্রথা রয়েছে। তবে দেবদর্শনে ধৈর্যের পরীক্ষা আবশ্যিক। বছরভরই এখানে বালাজিকে দর্শনের জন্য অগণিত ভক্ত ভিড় করেন। লম্বা লাইনে অনেক ক্ষণ সময়ও লাগে। তবে, চাইলে অগ্রিম টিকিটও কাটা যায়। মন্দিরের নিজস্ব পোশাকবিধিও রয়েছে।

বৈষ্ণোদেবীর মন্দির

উত্তর ভারতের জম্মু থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে এক তীর্থক্ষেত্র কাটরা। জম্মু এবং কাশ্মীর ভ্রমণে গেলে অনেকেই বৈষ্ণোদেবী দর্শনও রাখেন ভ্রমণের তালিকায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের উপরে বৈষ্ণোদেবীর মন্দির। ১২ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরিয়ে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মানুষ বৈষ্ণোদেবীর দর্শনে যান। লম্বা যাত্রাপথে পথচলার সুবিধার জন্য অনেকেই যাত্রা শুরু করেন রাতে, কেউ ভোরে। তবে হাঁটার কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়ে যেতে পারে পাহাড়ে উঠে চারপাশের সৌন্দর্য দেখলে।

কাটরায় বৈষ্ণোদেবীর মন্দির দর্শন করে নিতে পারেন।

কাটরায় বৈষ্ণোদেবীর মন্দির দর্শন করে নিতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত।

১২ কিলোমিটার চড়াই পথে ওঠার জন্য সিঁড়ি ছাড়াও বাঁধানো পথ রয়েছে। চাইলে কেউ ঘোড়ার পিঠে চাপতে পারেন। রয়েছে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থাও। বৈষ্ণোদেবী দর্শনের জন্য আগাম টিকিট কাটতে হয়। একে স্থানীয়রা বলেন ‘পড়ছি’। সেখান লেখা নম্বর অনুযায়ী দর্শনের সুযোগ মেলে। বৈষ্ণোদেবী দর্শনের পর আরও দেড় কিলোমিটার গেলে রয়েছে ভৈরববাবার মন্দির।

লোটাস টেম্পল

দিল্লির লোটাস টেম্পল।

দিল্লির লোটাস টেম্পল। ছবি: সংগৃহীত।

শুধু পুরনো নয়, নতুন কিছু স্থাপত্যও দেখার মতো। তারই মধ্যে একটি লোটাস টেম্পল। বিস্তৃত সবুজ বাগানের মধ্যে সাদা মন্দিরটি দেখলে মনে হবে যেন পদ্মফুল। এটি আসলে বাহাই ধর্মাবলম্বীদের উপসনাস্থল। মন্দিরের অভ্যন্তর শান্ত, সুন্দর। সকল ধর্ম, বর্ণ এবং জাতির জন্য মন্দিরদ্বার উন্মুক্ত। দিল্লির অন্যতম জনপ্রিয় এই পর্যটন কেন্দ্রটির নির্মাণশৈলী বহুল প্রশংসিত। মার্বেল পাথরের ২৭টি পদ্ম এর শোভা বাড়িয়েছে। পাপড়িগুলি তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। মন্দিরের মূল কক্ষে ৪০ মিটরের বেশি উচ্চতাবিশিষ্ট ৯টি দরজা রয়েছে। ১৯৮৬ সাল থেকে এটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Travel temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy