নতুন দৌড়ের চব্বিশ ঘণ্টা আগে। শনিবার ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসে সুয়োকা। ছবি: উৎপল সরকার
তৈলাক্ত বাঁশের উপর বাঁদরের ওঠানামার অঙ্কটা মনে পড়ছে আর্মান্দো কোলাসোর টিমকে দেখে।
বাঁদরের ওঠা-নামার পাটিগণিতের সেই অঙ্কটা স্কুল ছাত্র থাকার সময় হয়তো মিলিয়েছেন অনেকের মতো লাল-হলুদের গোয়ান কোচও। কিন্তু চিডি-সুয়োকাদের নিয়ে এখন ‘অঙ্কের মাস্টার’ হয়েও সেই উত্তর যেন কিছুতেই মেলাতে পারছেন না তিনি। কারণ আই লিগের তৈলাক্ত লিগ টেবিলে ইস্টবেঙ্গল সেই টিম, যে এক ধাপ ওঠে তো এক ধাপ নামে। কিছুতেই দু’ধাপ উঠতে পারে না।
কেন এমন হচ্ছে? ডেম্পোতে থাকার সময় তো এ রকম কত অঙ্ক মিলিয়েছেন অবলীলায়? ড্রেসিংরুমের পরিবেশই কি পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে?
“দুই ড্রেসিংরুমের মধ্যে ফারাক অনেক। আকাশ-পাতাল। তবে সেগুলো কী বলা যাবে না।” তেতো মুখ করে বলে দেন ডেম্পোকে পাঁচ বার আই লিগ দেওয়া কোচ। বিতর্ক তাঁর নিত্যসঙ্গী, সম্ভবত সে জন্যই এড়িয়ে যান প্রসঙ্গ।
কিন্তু তাতে লিগের সাপ-লুডোর লড়াইয়ে বারবার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হওয়ার ছবি ঢাকা দেওয়া যাচ্ছে না।
লিগ শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরু শুক্রবার পুণের সঙ্গে ড্র করেছিল। যা চল্লিশ ছুঁইছুঁই শহরের তীব্র গরমের মধ্যেও আর্মান্দোর কাছে হাতে আইসক্রিম পাওয়ার মতোই স্বস্তিদায়ক ব্যাপার। এর উপর লিগের দু’নম্বর টিম সালগাওকর শনিবার হেরে গেল রাংদাজিদের কাছে। সেটা যেন আইসক্রিমের উপর চকলেট সস দেওয়ার মতো আরও সুস্বাদু হয়ে দেখা দিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের কাছে।
ঈশ্বর তো নানাভাবে আপনাকে বারবার ফেরানোর চেষ্টা করছেন খেতাবের লড়াইয়ে, তা-ও....? স্পোর্টিং ক্লুবের বিরুদ্ধে খেলতে নামার এক দিন আগে প্রশ্ন শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন কলকাতায় আই লিগ জেতার স্বপ্ন নিয়ে আসা আর্মান্দো। “সুযোগ তো পাচ্ছি। কিন্তু কাজে লাগাতে পারছি কই। আগের মুম্বই এফ সি ম্যাচেও তো শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে গেলাম। যে ভুলের কোনও ক্ষমা নেই।”
ইস্টবেঙ্গলের সামনে এখনও খাতায়-কলমে আই লিগ জেতার সুযোগ রয়েছে। সহজ অঙ্ক হল, ইস্টবেঙ্গল বাকি ছয় ম্যাচ জিতল এবং বেঙ্গালুরু বাকি তিন ম্যাচের মধ্যে যে কোনও একটিতে পয়েন্ট নষ্ট করলতা হলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতে পারে লাল-হলুদ। এ রকম অবস্থাতেও শনিবারের সকালে ইস্টবেঙ্গল মাঠ শুনশান। ঘুঘু-কাকের ওড়াউড়ি আর ঝরা আমপাতায় ভরা গ্যালারি। অনুপস্থিত কর্তা-সদস্য-সমর্থক। চোট সত্ত্বেও মাঠে হাজির দুই বঙ্গসন্তান মেহতাব হোসেন আর সৌমিক দে। কিন্তু দেখা যায়নি দুই বিদেশি মোগা-উগার। আর্মান্দোর ড্রেসিংরুমের পরিবেশ চৌম্বকে ধরা যেতে পারে এই ঘটনায়। তিনি মুখে না বললেও।
ডেম্পোয় আর্মান্দোর সুখের সময়ে দুই সঙ্গী ছিলেন অভিজিৎ মণ্ডল আর জোয়াকিম আব্রাঞ্চেজ। এখন ওঁরা ইস্টবেঙ্গলে। দু’জনেরই মত, টিমের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতাই ইস্টবেঙ্গলের বারবার সুযোগ পেয়েও তাকে কাজে লাগাতে না পারার প্রধান কারণ। “ডেম্পো একটা ম্যাচ তিন-চার গোলে হারলেও পরের ম্যাচে ঝাঁপাত জেতার জন্য এবং সেটা সংঘবদ্ধ ভাবে,” অনুশীলনের পর বলছিলেন অভিজিৎ। আর জোয়াকিম বলে দিলেন, “আমরা প্রথম দশ ম্যাচের জন্য একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট টার্গেট করতাম। এখানে সেটা শুরুতে করা হয়নি বলেই শেষ দিকে টিমটা চাপে পড়ে যাচ্ছে।”
তা সত্ত্বেও স্বপ্ন দেখছে ইস্টবেঙ্গল। উল্টে দিতে চাইছে পাশার দান। এ বছর অস্কার ব্রুজোর দলের বিরুদ্ধে দু’টো ম্যাচ খেলে একটাতেও জিততে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। বরং হেরেছে একটিতে। সেই স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে কি জিততে পারবে ইস্টবেঙ্গল? “স্প্যানিশ বুল দেখেছেন? যে ঘাড়ে আঘাত পাওয়ার পরও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপায়। আমরা হচ্ছি তাই। মোহনবাগানের কাছে হেরেছি তো কী, ইস্টবেঙ্গলকে হারাতেই এসেছি আমরা,” বলছিলেন স্পোর্টিং ক্লুবের স্প্যানিশ কোচ। সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী সংযোজন, “ইস্টবেঙ্গল মনে হয় ১০২ সপ্তাহ আগে একবার আমাদের হারিয়েছিল,” লাল-হলুদের জাকুজি, জিম, মাঠ, ক্লাব তাঁবু ঘুরে দেখার আগে বলছিলেন অস্কার। সামনে বৈমা কার্পে, স্টপারে গঞ্জালো হিনোজাল আর মাঝে কালু ওগবাএই বিদেশি শক্তি নিয়ে আর্মান্দো-বধে এসেছেন অস্কার। “চ্যাম্পিয়ন নয়, আমরা প্রথম পাঁচের মধ্যে থাকতে চাই,” খুশি খুশি মুখে বলে দিলেন স্পোর্টিং কোচ। এ রকম কথা যদি আর্মান্দো বলতেন তা হলে হইচই পড়ে যেত। কিন্তু অস্কারের সঙ্গে গোয়ার ক্লাবের চুক্তি সব মিলিয়ে তিন বছর। মানে আরও দু’বছর তিনি থাকছেন। চেয়ার নিশ্চিত থাকলে অনেক কথা বলা যায়। তিনি তো এখনই ঠিক করে ফেলেছেন আরও দু’জন স্প্যানিশ ফুটবলার আনবেন পরের মরসুমে।
আর্মান্দোর অবশ্য সে সুযোগ নেই। চেয়ার বাঁচাতে শৃঙ্খলাভাঙা চিডি-সুয়োকাদের সঙ্গেও আপস করতে হচ্ছে তাঁকে। আজ যুবভারতীতে ওই জুটির উপরই ভরসা রাখছেন তিনি, জেতার জন্য। ফরোয়ার্ডে দু’জনকে রেখে। জোর করে নামাচ্ছেন চোট পাওয়া লালরিন্দিকাকে। গোলে সেই ‘ঐতিহাসিক ভুল’-এর পর ফিরছেন গুরপ্রীত সিংহ। তুলুঙ্গা-সহ জনা পাঁচেক ফুটবলার চোটের জন্য নেই। ডেম্পোতে ক্লিফোর্ড-সমীর নায়েকদের মতো তারকাদের সাইড লাইনে বসিয়ে রেখে ম্যাচের পর ম্যাচ জিতেছেন যে ভদ্রলোক, এখানে তিনি সেটা করার জায়গায় নেই। সে জন্য অ্যালভিটো ডি’কুনহাকে রিজার্ভ বেঞ্চে রাখতেই হয় তাঁকে। ক্লাব সচিবের ফিজিক্যাল ফিটনেস নিয়ে ‘জ্ঞান’ মেনে নিতে হয় মুখ বুজে। ‘বেয়াড়া’ ফুটবলারদের উপর রাগ করলেও কড়া হতে পারেন না।
এই মেনে নেওয়া ঠিক না বেঠিক সেটা সময় বলবে। আর্মান্দোর এ সব ভাবার সময় নেই। বরং তিনি কবীর সুমনের ঢঙে গেয়ে উঠতেই পারেন, “কত আপস করলে তবে ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকা যায়।”
রবিবারে আই লিগ ফুটবল
• ইস্টবেঙ্গল: স্পোর্টিং ক্লুব (যুবভারতী ৫-০০)
• শিলং লাজং: মুম্বই এফ সি (শিলং)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy