ফাঁকা কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে চলছে সন্তোষ ট্রফির খেলা। —নিজস্ব চিত্র।
স্টেডিয়ামে আসন ৩৫০০০। অথচ সন্তোষ ট্রফির খেলা দেখতে আসছেন মাত্র কয়েক হাজার দর্শক। ফাঁকাই পড়ে থাকছে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম। ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন হতাশ কর্মকর্তারাই। মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ সচিব অরূপরতন ঘোষ আক্ষেপ করেন, “প্রথম দিন ৭ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। তারপরে থেকেই ক্রমশ টিকিট বিক্রি কমছে। খেলার মান খুব খারাপ। কে সময় নষ্ট করে খেলা দেখতে আসবে?”
শিলিগুড়িতে চলছে ৬৮তম সন্তোষ ট্রফির চূড়ান্ত পর্বের খেলা। শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে প্রতিযোগিতার অধের্কের বেশি ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। দর্শকের ভিড় কার্যত নেই। অথচ আশা করা গিয়েছিল বাংলার ম্যাচ গুলিতে মাঠ অর্ধেক ভরে যাবে স্টেডিয়াম। তা না হওয়ায় স্বভাবতই হতাশ শিলিগুড়ির উদ্যোক্তারা। হতাশ শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদও। তার মধ্যে বাংলা দুটি ম্যাচে ড্র করে এবং একটিতে হেরেছে। অনেকগুলি খেলার মান একেবারেই দুর্বল। উপরন্তু, পরীক্ষার সময় খেলা হওয়ায় প্রচারের অভাবও রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিযোগিতা আক্ষরিক অর্থেই মাঠে মারা গিয়েছে বলে মনে করছেন ক্রীড়া পরিষদের কর্তারা। প্রতিটি খেলায় ম্যাচ অফিসিয়াল, খেলোয়াড় ও দু’দলের সঙ্গে যুক্ত লোক ছাড়া গড়ে পাঁচশো লোকও হচ্ছে না। অন্য দিন বাংলার খেলার দিন সংখ্যাটা হাজারের কাছাকাছি থাকছে, এই পর্যন্তই।
সোমবারের খেলাতেও মেরেকেটে হাজার খানেক লোক ছিল মাঠে। তার মধ্যে ৩০ শতাংশ দু’দলের কর্মকর্তা, ক্রীড়া পরিষদের সদস্যরাই ছিলেন। খেলার মান যে খারাপ তা মানছেন আইএফএর কো অর্ডিনেটর দেবু মিত্র। কিন্তু তার জন্য তিনি দায়ী করেছেন এআইএফএফ (অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন)-এর নতুন নিয়মকেই।
এ নিয়মে আই লিগ খেলা কোনও খেলোয়াড় সন্তোষ ট্রফিতে খেলতে পারবেন না। বেশি করে খেলোয়াড়দের জাতীয় মানের খেলায় অভ্যস্ত করার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে এআইএফএফ। ২০১৭ তে ভারতে যুব বিশ্বকাপের আসরকে সামনে রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে আই লিগ খেলা দলগুলি পুরো শক্তির দল পাচ্ছে না। ম্যাড়মেড়ে খেলাকে ঘিরে উৎসাহ হারাচ্ছে ক্রীড়াপ্রেমীরা। তিনি বলেন, “এ কারণেই খেলা জৌলুস হারাচ্ছে।” পাশাপাশি প্রচারের অভাবকেও দায়ী করেছেন তিনি। অন্য প্রতিযোগিতার মতো শহর জুড়ে মাইকে ঘোষণা বা শহরের চারি দিকে সন্তোষের ব্যানার কোনওটাই চোখে পড়েনি। মাধ্যমিক চলাকালীন মাইকে ঘোষণায় অসুবিধা রয়েছে। তবে অন্য উদ্যোগে খামতি কেন? প্রশ্নের উত্তরে ক্রীড়া পরিষদ সচিব বলেন, “প্রচার হচ্ছে। আমরা তোরণ তৈরি করিয়েছি। ক্রীড়াপ্রেমীরা এমনিতেই আসেন খেলা দেখতে।”
এর আগে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপে অবশ্য দর্শকের অভাব হয়নি। ক্রীড়া পরিষদ সূত্রে খবর, ফেডারেশন কাপের খেলায় প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ হাজার দর্শক হয়েছে। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচে সেই সংখ্যাটাই বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ হাজার। আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের খেলাতেও প্রতিদিন গড়ে ১৫-১৮ হাজার দর্শক হত। আইএফএ শিল্ডের ম্যাচে সংখ্যাটা ছিল প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ হাজার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও দর্শকের অভাব হয়নি। নেহরু কাপে ভারত-রাশিয়া ম্যাচে দর্শক ছিল প্রায় ২৫ হাজার। এক ক্রীড়াপ্রেমী মানস দে জানান, শিলিগুড়িতে গত মরশুমেই আই লিগের দ্বিতীয় বিভাগের খেলা হয়েছে। তাতে লোকের অভাব হয়নি। হয়েছে আইএফএ শিল্ডের খেলাও, তাতেও প্রচুর লোক হয়েছিল। এমনকী ফেডারেশন কাপে স্টেডিয়ামে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। তাঁর কথায়, “ভাল খেলায় লোক হয় তা প্রমাণিত।” এক দর্শক বিপিন রায় মঙ্গলবার বেলাকোবা থেকে এসেছিলেন বাংলার খেলা দেখতে। ফাঁকা মাঠ দেখে তাঁর আক্ষেপ, “বাংলার ম্যাচে এত ফাঁকা মাঠ! ভাবাই যায় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy