অবসরের ঘোষণা যুবরাজের। ছবি: টুইটার।
দ্য ওভালে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দেওয়ার পরে গোটা দেশ আনন্দে মাতোয়ারা। এর মধ্যেই আজ, সোমবার দেশের বাণিজ্য নগরীতে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন যুবরাজ সিংহ।
অথচ এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। পঞ্জাবতনয় স্বয়ং চেয়েছিলেন, ২০১৯ সালের পরে তিনি অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেবেন। মানুষ যা ভাবে তা তো সব সময়ে হয় না। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহালিরা যখন রানির দেশে নিজেদের নিংড়ে দিচ্ছেন, ঘাম ঝরাচ্ছেন, তখন যুবরাজ হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো বটেই আইপিএলের বিশ্বেও আর দেখা যাবে না এই তারকাকে।
গত কয়েক বছর ধরে তাঁর অবসর নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। শেষের দিকে প্রায় প্রতিটি সাংবাদিক বৈঠকেই নিয়ম করে তাঁকে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হত, ‘‘কবে অবসব নেবেন?’’ চুপ করে থাকতেন যুবি। একই প্রশ্ন শুনতে শুনতে বিরক্ত বাঁ হাতি অলরাউন্ডার এক বার বলে ফেলেছিলেন, ‘‘একটা সময়ের পর সবাইকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ২০০০ সাল থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। ১৭-১৮ বছর হয়ে গেল। ২০১৯-এর পর আমি এই ব্যাপারে ভাবব।’’ কথা কিন্তু রাখলেন না দেশের হয়ে ৪০টি টেস্ট, ৩০৪টি ওয়ানডে ও ৫৮টি টি টোয়েন্টি খেলা যুবি।
আরও পড়ুন: ভারতীয় ক্রিকেটের যুবরাজ
আরও খবর: বল করার আগে পকেট থেকে কী বের করলেন জাম্পা? তোলপাড় ক্রিকেটবিশ্ব
আরও খবর: পাকিস্তানের জার্সিতে ‘বিরাট’!
তিনি যে অবসর নিতে চলেছেন, এ রকম একটা খবর রবিবার থেকেই উড়ছিল ভারতীয় ক্রিকেট মহলে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ ম্যাচের জন্য যুবির অবসরের খবরটা চাপা পড়ে গিয়েছিল। এ দিন সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়ের মতো ছড়িয়ে পড়ে যুবির অবসর নেওয়ার খবর। দুপুরেই যুবি জানিয়ে দিলেন, তাঁর সরে যাওয়ার খবর। সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন, ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল, ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্রডকে এক ওভারে ছ’টি ছক্কা হাঁকানো, লাহৌরে কেরিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি তাঁর ক্রিকেটজীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা।
তাঁর সাংবাদিক বৈঠক শুরুর ঠিক আগে একটি আবেগপ্রবণ ভিডিয়ো দেখানো হয়। সেখানে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘আমি এই খেলাটা ভালবাসি। আবার এই খেলাটাকেই আমি ঘৃণা করি। ক্রিকেট আমাকে সুপারস্টার বানিয়েছে। আমাকে সব দিয়েছে। তাই এই খেলাটাকে আমি খুব ভালবাসি। কিন্তু, এই ক্রিকেটই আমাকে মানসিক দিক থেকে যন্ত্রণা দিয়েছে।’’ তখনই বোঝা যায়, কেন তিনি ক্রিকেটকে ঘেন্না করেন।
বাবা যোগরাজ সিংহ বড়মাপের ক্রিকেটার হতে পারেননি। ছেলেকে ক্রিকেটার বানিয়ে নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছিলেন। যোগরাজ মাঝে মাঝে নির্দয় হয়ে উঠতেন ছোট্ট যুবির উপরে। ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচারণ করে পঞ্জাবতনয় বলছেন, ‘‘রোদের মধ্যে দৌড়নো আমার অভ্যাস ছিল না। আমার বয়স ১০ হলেও ১৬ বছর বয়সি ছেলেদের সঙ্গে আমাকে দৌড়তে বাধ্য করা হত। আমার থেকে বয়সে বড় ছেলেদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করতে নামতাম। ওদের মতো দৌড়তে না পারলে আমাকে বলা হত, বাড়ি চলে যা।’’ ক্রিকেটার হওয়ার জন্য ওই অল্প বয়সে যুবিকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়েছিল।
যুবরাজ সিংহের ক্রিকেট কেরিয়ার কম বর্ণময় নয়। ২০০০ সালে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি নক আউট ট্রফিতে ভারতের হয়ে অভিষেক ঘটে তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮০ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে বিশ্বক্রিকেটে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছিলেন তিনি। তখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের রিমোট কন্ট্রোল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে ৪১ রান করে ভারতকে ফাইনালে তোলেন তিনি।
কেরিয়ারে আকাশ ছুঁয়েছেন যুবি। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছ’টা ছক্কা হাঁকান, ২০১১ বিশ্বকাপ প্রায় একার হাতেই জিতিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার পরেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতির পরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফিরে আসেন রাজকীয় ভাবেই। আইপিএল খেলে জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। সেই স্বপ্ন আর সফল হবে না বুঝতে পেরে বিশ্বকাপের মাঝখানেই অবসরের ঘোষণা করে দিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy