Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Wrestlers' Protest

কুস্তিগিরদের জোড়া খোঁচা দিল্লি পুলিশ, অভিযুক্ত কর্তার, দেশ জুড়ে জোরালো হচ্ছে প্রতিবাদ

এক দিকে দিল্লি পুলিশ ও অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ খোঁচা মেরেছেন কুস্তিগিরদের। অন্য দিকে কৃষকদের পাশে পেয়েছেন সাক্ষী মালিকরা। কুস্তিগিরদের সমর্থনে কলকাতায় মিছিল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Bajrang Punia and Sakshi Malik

যন্তর মন্তরে ধর্নামঞ্চে কুস্তিগির বজরং পুনিয়া (বাঁ দিকে) ও সাক্ষী মালিক। ছবি: পিটিআই

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ২১:৪৩
Share: Save:

কুস্তিগিরদের বিক্ষোভ দেশ জুড়ে বেড়ে চলেছে। শুধু দিল্লিতে তা আর সীমাবদ্ধ নেই। বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কৃষক নেতারা। তা ছাড়া বিরোধী দলগুলিরও সমর্থন পাচ্ছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে বুধবারও থেকেছে ঘটনাবহুল। এক দিকে প্রতিবাদ, তো অন্য দিকে কুস্তিগিরদের খোঁচা দিয়েছেন অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। পাশাপাশি দিল্লি পুলিশও কুস্তিগিরদের অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মঙ্গলবার হরিদ্বারে গঙ্গায় পদক বিসর্জন দিতে গিয়েও কৃষক নেতাদের পরামর্শে ফিরে এসেছেন কুস্তিগিরেরা। এই ঘটনা নিয়ে ব্রিজভূষণ বলেছেন, ‘‘ওরা হরিদ্বারে গিয়েছিল গঙ্গায় পদক বিসর্জন দিতে। কিন্তু সেগুলো দিয়ে এল কৃষক নেতাদের হাতে। এটা ওদের সিদ্ধান্ত। এতে আমরা কী করব?’’ সেই সঙ্গে আর এক বার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন ব্রিজভূষণ। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনার তদন্ত করছে দিল্লি পুলিশ। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় তা হলে আমাকে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু আমি তো কোনও দোষ করিনি।’’ দিল্লি পুলিশও জানিয়েছে, ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করার মতো কোনও প্রমাণ পায়নি তারা। এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘তদন্ত চলাকালীন ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করার মতো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কুস্তিগিরেরা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তার পক্ষেও কোনও প্রমাণ মেলেনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো ১৫ দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেব আমরা।’’ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে এক নাবালিকা-সহ বেশ কয়েক জন মহিলা কুস্তিগিরকে হেনস্থার অভিযোগ করেছেন বজরংরা। তাঁদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন অমিত পালোয়ান নামের এক ব্যক্তি। অমিতের অভিযোগ, তাঁর ভাইঝির জন্ম ২০০৪ সালে। সেই হিসাবে তার বয়স ১৮ বছরের বেশি। কিন্তু যাতে পকসো আইনে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যায় তার জন্য কুস্তিগিরেরা তার বয়স ১৬ বছর দেখান। তাঁদের ভুল বোঝানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

এই মধ্যেই অবশ্য কুস্তিগিরদের সমর্থনে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ছে। কলকাতায় কুস্তিগিরদের সমর্থনে মিছিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন কুস্তিগিরদের সমর্থনে একটি মিছিল আয়োজন করার। সেই মতো বুধবার মিছিল বার হয়। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি। তিনি রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীও। ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস, কৃষ্ণেন্দু রায়, গৌতম সরকার, বিদেশ বসু, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়রাও। কুস্তিগিরেরা পাশে পেয়েছেন কৃষক নেতাদের। কেন্দ্রীয় সরকার কুস্তিগিরদের দাবি না মানলে চার দিক থেকে দিল্লি সীমান্ত ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছেন কৃষকেরা। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের প্রধান রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘‘কুস্তিগিরদের এই হেনস্থা মেনে নেওয়া যায় না। কেন্দ্রীয় সরকার এক জনকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আমরা ঠিক করেছি পাঁচ দিনের মধ্যে কুস্তিগিরদের দাবি না মানা হলে ৫ জুন দিল্লি ঘেরাও হবে। পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থান থেকে কৃষকরা গিয়ে দিল্লি সীমান্ত ঘেরাও করবে। তা ছাড়া দিল্লিতে দুধ ও সব্জির জোগান বন্ধ করে দেব আমরা।’’ কৃষক নেতাদের কথাতেই হরিদ্বারে গঙ্গায় নিজেদের সব পদক না ভাসিয়ে ফিরে এসেছেন কুস্তিগিরেরা। দেশের সম্মান যাতে নষ্ট না হয় সেই কারণেই তাঁরা কুস্তিগিরদের বুঝিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাকেশ। তিনি বলেছেন, ‘‘দেশের হয়ে পদক জিততে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে কুস্তিগিরদের। তাই ওরা পদক গঙ্গায় ভাসিয়ে দিলে দেশের অসম্মান হত। সেই কারণেই ওদের আটকেছি। কিন্তু পাঁচ দিনের মধ্যে সরকার দাবি না মানলে ওদের আর আটকাতে পারব না।’’

আগে কী ঘটেছিল?

রবিবার সংসদ ভবন পর্যন্ত মিছিল করে যাওয়ার সময় দিল্লি পুলিশের হাতে আটক হন সাক্ষী, বিনেশরা। তাঁদের হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। তারই প্রতিবাদে মঙ্গলবার হরিদ্বারে গঙ্গায় গিয়ে নিজেদের সব পদক ভাসিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন কুস্তিগিরেরা। সেই মতো মঙ্গলবার বিকালে দিল্লি থেকে হরিদ্বারে যান বজরং, সাক্ষী, বিনেশরা। হর কি পৌড়ী ঘাটে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা। সাক্ষীদের সঙ্গে ছিলেন পরিবারের লোকেরা। স্থানীয় অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কুস্তিগিরদের সমর্থনে স্লোগান দেন সাধারণ মানুষ। অনেকে আবার কুস্তিগিরদের কাছে আবেদন করেন, তাঁরা যেন পদক বিসর্জন না দেন। ব্রিজভূষণের গ্রেফতারির দাবিতেও স্লোগান ওঠে সেখানে। তার মাঝেই সেখানে উপস্থিত হন কৃষক নেতারা। তাঁরা গিয়ে বজরংদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেন। কুস্তিগিরদের কাছ থেকে পদকগুলি চেয়ে নেন তাঁরা। কৃষকনেতারা বোঝান, দেশের হয়ে জেতা সম্মান এ ভাবে গঙ্গায় ফেলে দিলে সেটা দেশকে অপমান করা হবে। তাঁদের পরামর্শ মেনে নেন বজরংরা। নিজেদের সিদ্ধান্ত বদল করেন কুস্তিগিরেরা। তবে তাঁরা কেন্দ্রকে পাঁচ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন। তার মধ্যে তাঁদের দাবি না মানলে পাঁচ দিন পরে গঙ্গায় পদক বিসর্জন করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করেছেন কুস্তিগিরেরা। ব্রিজভূষণের গ্রেফতারির দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে যন্তর মন্তরে ধর্না দিচ্ছেন তাঁরা। কেন্দ্র সরকার ও রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বজরংরা। এর পর তাঁরা ইন্ডিয়া গেটের সামনে আমরণ অনশনে বসবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যন্তর মন্তরে তাঁদের বসতে দেওয়া হবে না বলে নির্দেশিকা জারি করেছে দিল্লি পুলিশ। তাদের তরফে দাবি করা হয়েছে, প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের বার বার অনুরোধ করার পরেও তাঁরা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। তাই তাঁদের যন্তর মন্তরে বসতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরে কুস্তিগিরেরা জানিয়ে দিয়েছেন, ইন্ডিয়া গেটের সামনে অনশন করবেন তাঁরা। ব্রিজভূষণ গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই অনশন চলবে বলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাক্ষীরা। কিন্তু সেখানেও তাঁদের বসতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Wrestler Protest wrestling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy