ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। —ফাইল চিত্র
ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ উঠেছে। তিনি নাকি এক মহিলা কুস্তিগিরের চিকিৎসার খরচ দেওয়ার বদলে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া সাপ্লিমেন্ট দেওয়ার নামেও অন্য এক কুস্তিগিরের সঙ্গেও ব্রিজভূষণ শারীরিক সম্পর্ক করতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে ১৬০০ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। সেখানেই এই নতুন অভিযোগের কথা জানা গিয়েছে। এক মহিলা কুস্তিগির অভিযোগ করেছেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চোট পেয়েছিলেন তিনি। কুস্তির আখড়ায় ফেরার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। দেশে ফেরার পরে ফেডারেশনের দফতরে তাঁকে দেখা করতে বলেন ব্রিজভূষণ। সেখানে তিনি প্রস্তাব দেন যে ফেডারেশন ওই কুস্তিগিরের চিকিৎসার সব খরচ বহন করবে। কিন্তু তার বদলে কুস্তিগিরকে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে। এ কথা শুনেই ফেডারেশনের দফতর থেকে চলে যান ওই কুস্তিগির।
আরও এক জন কুস্তিগির অভিযোগ করেছেন, ব্রিজভূষণ তাঁকে সাপ্লিমেন্ট কিনে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কুস্তিগিরের অভিযোগ, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে ব্রিজভূষণ তাঁকে এই প্রস্তাব দেন। সাপ্লিমেন্টের বদলে কুস্তিগিরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চান কুস্তিকর্তা।
ব্রিজভূষণের প্রস্তাবে রাজি না হলে তিনি হুমকি দিতেন বলেও অভিযোগ করেছেন কুস্তিগিরেরা। ব্রিজভূষণের কয়েক জন ঘনিষ্ঠের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা নাকি কুস্তিগিরদের ফোন করে তাঁদের ব্রিজভূষণের সঙ্গে একা দেখা করতে বলতেন। তার পরে তাঁদের ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হত। ক্ষমা না চাইলে কুস্তিগিরদের শো-কজ নোটিস ধরাতেন ব্রিজভূষণ। যদিও তদন্তকারী কমিটির সামনে নিজের সাফাইয়ে ব্রিজভূষণ জানিয়েছেন কোনও প্রতিযোগিতা বা তার ট্রায়ালে কুস্তিগিরদের সঙ্গে দেখা হত তাঁর। আলাদা করে তাঁর অফিসে বা বাড়িতে কারও সঙ্গে দেখা করেননি তিনি।
তদন্তকারী কমিটির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কুস্তিগিরেরা। তাঁদের অভিযোগ, মেরি কমের নেতৃত্বাধীন কমিটি তাঁদের বলেছে, ব্রিজভূষণ কোনও দিন খারাপ মনোভাব থেকে কিছু করেননি। কুস্তিগিরেরাই তাঁকে ভুল বুঝেছেন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কমিটির কাছে ই-মেল করে কুস্তিগিরেরা অভিযোগ করেছিলেন, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে বয়ান বদলের জন্য তাঁদের চাপ দেওয়া হয়েছে। ই-মেলে জানানো হয়েছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে তদন্ত কমিটির সামনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল কুস্তিগিরদের। সেখানে কুস্তিগিরদের জবানবন্দি নেওয়ার সময় সব রকমের গোপনীয়তা বজায় রাখা উচিত ছিল। অভিযোগ, যে ঘরে জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছিল তার বাইরে ব্রিজভূষণের তিন ঘনিষ্ঠ জয় প্রকাশ, মহাবীর বিষ্ণোই ও দিলীপ ঘুরঘুর করছিলেন। সেখানে তাঁদের থাকারই কথা নয়। কুস্তিগিরেরা কী বয়ান দিচ্ছিলেন তা ওই তিন ব্যক্তি শুনতে পাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কুস্তিগিরদের আরও অভিযোগ, সেখানে যে কুস্তিগিরেরা জবানবন্দি দিতে এসেছিলেন তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিলেন ওই তিন ব্যক্তি। তাঁদের বয়ান বদলের চাপ দেওয়া হচ্ছিল। বয়ান রেকর্ড করার সময় সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রাখার দায়িত্ব ছিল কমিটির। তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই অভিযোগ কুস্তিগিরদের।
ই-মেলে কুস্তিগিরদের আরও অভিযোগ, ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তার বাইরেও এক ব্যক্তি বয়ান রেকর্ডের সময় ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কুস্তিগিরদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি। ওই ব্যক্তি কে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে কুস্তিগিরদের। তদন্তের জন্য যে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার মাথায় ছিলেন মেরি কম। বাকি সদস্যেরা হলেন, অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী কুস্তিগির যোগেশ্বর দত্ত, কমনওয়েলথে সোনাজয়ী কুস্তিগির ববিতা ফোগট, প্রাক্তন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় তৃপ্তি মুরগুন্ডে এবং স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই)-এর দুই আধিকারিক রাধিকা শ্রীমানন্দ ও রাজেশ রাজাগোপালন। এই ছ’জনের বাইরে আর কার কথা কুস্তিগিরেরা বলতে চেয়েছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।
কমিটির তদন্তে খুশি নন দলেরই সদস্য ববিতা। তাই কমিটির ফাইনাল রিপোর্টে সই করেননি তিনি। ববিতার দাবি, স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করা হয়নি। তিনি বলেছেন, ‘‘শুধু মামলার সঙ্গে যুক্তদেরই ডাকা হয়েছে। নিরপেক্ষ কারও বয়ান নেওয়া হয়নি। নিয়মরক্ষার জন্যই তদন্ত করতে হয়েছে। কোনও সত্যি বার করে আনার চেষ্টা হয়নি। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার পূর্ণ অধিকার ছিল কমিটির। কিন্তু সে সব কিছুই করা হয়নি।’’
নাবালিকা-সহ ছয় মহিলা কুস্তিগিরকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে কুস্তিদিরদের ধর্নায় উত্তাল হয়েছে দিল্লি। বজরং পুনিয়া, বিনেশ ফোগট, সাক্ষী মালিকদের চাপে অবশেষে তদন্ত করেছে দিল্লি পুলিশ। চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে আদালতে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি অগস্ট মাসে হওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy