Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Brij Bhushan Sharan Singh

যৌন নিগ্রহের পর এ বার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল কুস্তিকর্তা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে

ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতিরও অভিযোগ করেছেন কুস্তিগিরেরা। মেরি কমের নেতৃত্বাধীন বিশেষ কমিটির কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।

Brij Bhushan Sharan Singh

ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। —ফাইল চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ১৭:৩৪
Share: Save:

ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ প্রকাশ্যে এল। তাঁর বিরুদ্ধে এত দিন যৌন নিগ্রহের অভিযোগের কথা জানা গিয়েছিল। এ বার জানা গেল কুস্তিগিরেরা অভিযোগ করেছেন যে ব্রিজভূষণ তাঁদের চুক্তি করেও বেতন দেননি। অর্থাৎ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল কুস্তিকর্তার বিরুদ্ধে।

দিল্লি পুলিশ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট জমা দিয়েছে তাতে মেরি কমের নেতৃত্বাধীন বিশেষ কমিটির রিপোর্ট রয়েছে। কমিটির সামনে কুস্তিগিরেরা দাবি করেছেন, কথার খেলাপ করেছেন কুস্তিকর্তা। স্পনসরের সামনে কুস্তিগিরদের দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা কুস্তিগিরদের কাছে আসেনি। এই অভিযোগ অস্বীকার করে ব্রিজভূষণ জানিয়েছেন, অতি উৎসাহে ভুল হয়ে গিয়েছে। স্পনসর আনার জন্য কুস্তিগিরদের নাম ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু কুস্তিগিরদের সঙ্গে কোনও রকমের চুক্তি নাকি তাঁদের হয়নি।

২০১৮ সালে কুস্তিগিরদের বার্ষিক চুক্তির কথা ঘোষণা করেছিল ভারতীয় কুস্তি সংস্থা। সেই বছরই কুস্তি সংস্থার প্রধান স্পনসর হিসাবে এসেছিল ‘টাটা মোটরস’। কুস্তিগিরদের অভিযোগ, তাঁদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা মানা হয়নি। স্পনসরের কাছে থেকে পাওয়া টাকা কোথায় গিয়েছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

ব্রিজভূষণের দাবি, কুস্তিতে স্পনসর আনার জন্য অতি উৎসাহে একটি ভুল করে ফেলেছিলেন তাঁরা। কুস্তিগিরদের নাম ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু কুস্তিগিরদের সঙ্গে কোনও আর্থিক চুক্তি তাঁদের হয়নি। কুস্তি সংস্থার সহকারী সচিব বিনোদ তোমর দাবি করেছেন, তাঁদের প্রস্তাবে বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটেরা রাজি ছিলেন। যদিও তোমর বা কুস্তিগিরেরা নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে কোনও নথি জমা দিতে পারেননি।

তোমর জানিয়েছেন, যে কুস্তিগিরেরা অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁদের বেশি টাকা বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কুস্তি সংস্থা। ব্রিজভূষণের কথা মতো বজরংয়ের সঙ্গে ৩০ লক্ষ, সাক্ষী ও বিনেশের সঙ্গে ২০ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল। সেই মতো তাঁদের টাকা দেওয়া হয়েছিল। যদিও কুস্তিগিরদের দাবি, চুক্তির খুব সামান্য অংশই তাঁরা পেয়েছেন। কেউ ১০ লক্ষ। কেউ ৫-৬ লক্ষ। বাকি টাকা তাঁদের দেওয়া হয়নি। এই বিষয়েও কোনও পক্ষ কোনও নথি জমা দিতে পারেননি। ফলে কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কোনও নির্দেশ মেরি কমের বিশেষ কমিটি করেনি। শুধু রিপোর্ট জমা দিয়েছে তারা।

পরে কুস্তিগিরেরা দাবি করেন যে স্পনসরের লোগো জার্সিতে থাকলে তাঁদের টাকা দিতে হবে। সেই দাবির পরে একটি নতুন খসড়া চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সিলমোহর পড়েনি।

ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের তদন্তও করেছে বিশেষ কমিটি। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ব্রিজভূষণ। তিনি দাবি করেছেন, কুস্তিগিরদের যোগাভ্যাস শেখানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু হেনস্থা করেননি। কমিটির কাছে এক মহিলা কুস্তিগির অভিযোগ করেছেন, তাঁর পেট ও বুকে হাত দিয়েছেন ব্রিজভূষণ। জবাবে কুস্তিকর্তা জানিয়েছেন, তাঁর নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হত। তখন যোগাভ্যাস তাঁকে অনেক সাহায্য করেছিল। যখনই তিনি কোনও কুস্তিগিরের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখতে পেতেন তাঁকে যোগাভ্যাস শেখাতেন। নিজের পেটে ও বুকে হাত দিতেন। কখনও কোনও কুস্তিগিরের সঙ্গে তিনি অশালীন আচরণ করেননি বলে দাবি করেছেন ব্রিজভূষণ।

ব্রিজভূষণ আরও দাবি করেছেন, তিনি পুরুষ ও মহিলা কুস্তিদিরদের আলাদা শিবিরে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। এবং তাতে মহিলা কুস্তিগিরদের পরিবারের সায় ছিল। কুস্তিকর্তার দাবি, যাতে মহিলা কুস্তিগিরদের প্রস্তুতিতে কোনও সমস্যা না হয় এবং তাঁরা কোনও রকম অস্বস্তিতে না পড়েন তার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, তিনি যদি মহিলা কুস্তিগিরদের জন্য অতটাই করবেন, তা হলে কেন তাঁদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করবেন?

যদিও ২০১৪ সালে লখনউয়ে মহিলা কুস্তিদিরদের শিবিরে থাকা এক ফিজিয়ো পরমজিৎ মালিক জানিয়েছেন, প্রতি রাতে ১০-১১টা নাগাদ একটি গাড়ি সেখানে আসত। কয়েক জন নাবালিকা কুস্তিগিরকে গাড়িতে চাপিয়ে কোথাও নিয়ে যাওয়া হত। এই নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, অভিযোগও করেছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টে তাঁকেই শিবির থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এই অভিযোগের উল্লেখও নিজেদের রিপোর্টে করেছে তদন্তকারী কমিটি।

ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ‘পকসো’ আইনে মামলা হয়েছিল। এই আইনে মামলা প্রত্যাহার করার আবেদন করেছিল দিল্লি পুলিশ। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে হওয়া সেই মামলা এখনই প্রত্যাহার করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্ট। মামলা নিয়ে রায় দেওয়ার আগে অভিযোগকারী ও ‘নির্যাতিতা’, দু’পক্ষের বয়ান শুনতে চান বিচারপতি। তিনি দু’পক্ষকে নোটিসও পাঠিয়েছেন। পাতিয়ালা হাউস কোর্টের বিচারক ছবি কপূর জানিয়েছেন, এই মামলার শুনানির আগে পুলিশের চার্জশিটের সঙ্গে অভিযোগকারী ও ‘নির্যাতিতা’র বয়ান শোনা জরুরি। ১ অগস্টের মধ্যে সেই বয়ান নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তার পরেই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে মূল দু’টি মামলা দায়ের হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছিল ‘পকসো’ ধারায় মামলা। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছিল যে এক নাবালিকা কুস্তিগিরকে যৌন হেনস্থা করেছেন ব্রিজভূষণ। এই ঘটনা নিয়ে কিছু দিন আগে মুখ খোলেন সেই নাবালিকা কুস্তিগিরের বাবা। তিনি জানান, মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। তাঁর মেয়ে একটি প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ায় তিনি রেগে গিয়ে কুস্তি কর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সেই ব্যক্তি। সেই অভিযোগের পক্ষে কোনও প্রমাণ দিল্লি পুলিশ পায়নি বলে জানিয়েছে। তারা দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্টে ৫০০ পাতার চার্জশিট পেশ করেছে। সেখানে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে পকসো ধারায় মামলা খারিজ করার আবেদন জানানো হয়েছে। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই এ কথা জানিয়েছে আদালত।

অন্য বিষয়গুলি:

Brij Bhushan Sharan Singh wrestling Wrestler
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy