Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Asian Games

এশিয়াডে ১০০-র স্বপ্ন পূরণ করে ১০৭-এ থামল ভারত, ফিরছে ২৮ সোনা, ৩৮ রুপো, ৪১ ব্রোঞ্জ নিয়ে

শনিবার ১০০টি পদক পেরিয়ে গেল ভারত। দিনের শেষে থামল ১০৭টি পদক নিয়ে। সোনা জয়ই হোক বা মোট পদকসংখ্যা, সবেতেই রেকর্ড হয়েছে এ বার।

asian games

সোনা জয়ী ভারতের ক্রিকেট দল। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ২২:১৪
Share: Save:

নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। শনিবার এশিয়ান গেমসে অপেক্ষা ছিল কখন আনুষ্ঠানিক ভাবে ১০০টি পদক ছোঁয় ভারত। বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। মেয়েদের কবাডি দল সোনা জিততেই ১০০ পদক ছুঁয়ে ফেলে ভারত। এশিয়ান গেমসে সবচেয়ে ভাল ফল হল এ বারই। পাশাপাশি, দিনের হিসাবে সবচেয়ে বেশি সোনাও এসেছে শনিবার। আনুষ্ঠানিক ভাবে এশিয়ান গেমস রবিবার শেষ হবে। কিন্তু ভারতীয় খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতা শনিবারই শেষ হয়ে গেল। এশিয়াডের শেষে ভারতের দখলে ২৮টি সোনা, ৩৮টি রুপো এবং ৪১টি ব্রোঞ্জ। মোট ১০৭টি পদক নিয়ে শেষ করেছে চতুর্থ স্থানে। কেমন গেল ভারতের চতুর্থ দিন?

ক্রিকেট

তিতাস সাধুদের হাত ধরে মেয়েদের ক্রিকেটে সোনা জিতেছিল ভারত। ছেলেদের ক্রিকেটেও সোনা জিতল তারা। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ক্রমতালিকায় এগিয়ে থাকার কারণে সোনা জেতে ভারত। ফাইনালে পুরো খেলাই হল না। বৃষ্টির কারণে প্রথমে ২০ মিনিট দেরিতে শুরু হয় ম্যাচ। আফগানিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠায় ভারত। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ১৮.২ ওভারে ১১২ রান তোলে আফগানিস্তান। পাঁচ উইকেট হারিয়েছিল তারা। সেখানেই খেলা বন্ধ হয়ে যায় বৃষ্টির কারণে। আফগানিস্তানের হয়ে ৪৯ রান করেন শাহিদুল্লা। তিনি অপরাজিত থেকে যান। অপরাজিত থেকে যান গুলবাদিন নাইবও। তিনি ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতের হয়ে একটি করে উইকেট নেন আরশদীপ সিংহ, শিবম দুবে, শাহবাজ আহমেদ এবং রবি বিষ্ণোই। সেই ম্যাচ আর খেলা সম্ভব হয়নি।

তিরন্দাজি

এশিয়ান গেমসে শনিবার শেষ দিন ভারতের শুরু হয়েছিল জোড়া পদক দিয়ে। প্রথমে ব্রোঞ্জ জ‌েতার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভারত সোনা জিতে নেয়। দু’টি পদকই আসে তিরন্দাজি থেকে। মহিলাদের কম্পাউন্ড বিভাগে সোনা জেতেন জ্যোতি সুরেখা ভেন্নাম। তিনি ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়োন সো-কে হারান। একই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জেতেন অদিতি স্বামী। জ্যোতি এর আগে কম্পাউন্ড মিক্সড ইভেন্টে সোনা জিতেছিলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গী ছিলেন ওজাস দেওতালে। তিনি ছেলেদের কম্পাউন্ড ইভেন্টে ব্যক্তিগত বিভাগে সোনা জিতেছেন। শনিবার জ্যোতি হারিয়ে দেন দক্ষিণ কোরিয়ার সো চায়েওনকে। ১৪৯-১৪৫ পয়েন্টের ব্যবধানে জেতেন ভারতীয় তিরন্দাজ। জ্যোতি ফাইনালে শুরুটা করেছিলেন ৯ পয়েন্টে তির মেরে। তার পরের ১৪টি তিরই ছিল ১০ পয়েন্টে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিযোগী প্রথম রাউন্ডে তিন বার ১০ মারার পর প্রতিটি রাউন্ডেই একটি করে তির ৯ বা ৮ পয়েন্টে মারেন। প্রতি রাউন্ডেই পিছিয়ে পড়ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাঁর পক্ষে জেতা সম্ভব হয়নি।

এ ছাড়া, শনিবার তিরন্দাজিতে ছেলেদের ব্যক্তিগত বিভাগে সোনা জেতেন ওজাস দেওতালে। সেই ইভেন্টেই রুপো পেলেন অভিষেক বর্মা। তাঁরা দু’জনেই কম্পাউন্ড তিরন্দাজির ফাইনালে উঠেছিলেন। আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে দু’টি পদক তাঁরা আনবেন। কিন্তু কে কোন রঙের পদক আনবেন সেটাই ছিল প্রশ্ন। শনিবার ওজাস জিতে যাওয়ায় সোনার পদক তাঁর।ওজাস তিরন্দাজির বিশ্বকাপেও সোনা জিতেছিলেন। এই বছর অগস্টে বার্লিনে বিশ্ব তিরন্দাজি প্রতিযোগিতার ফাইনালে তিনি হারিয়েছিলেন পোলান্ডের লুকাস প্রিবিলিস্কিকে। শনিবার ওজাসের লড়াই ছিল নিজের দেশের অভিষেকের সঙ্গে। সেখানে ১৪৯-১৪৭ পয়েন্টে জেতেন ওজাস। ফাইনালে ১৫ বার তির ছোড়েন তিনি। এর মধ্যে এক বার ৯ পয়েন্ট পান। বাকি ১৪ বার ১০ পয়েন্ট তুলে নেন ওজাস। অভিষেকও প্রায় সমানে সমানে লড়লেন। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে এক বার ৯ এবং তৃতীয় রাউন্ডে এক বার ৮ পয়েন্ট পান তিনি। তাতেই সোনা জয় কঠিন হয়ে যায় অভিষেকের পক্ষে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কবাডি

এশিয়ান গেমসে পদকের সেঞ্চুরি হয় মহিলা কবাডি দলকে দিয়ে। কবাডিতে মেয়েদের দল জিততেই এ বারের এশিয়ান গেমসে ১০০টি পদক হয়ে যায় ভারতের। ম্যাচে লড়াই হল সমানে সমানে। মেয়েদের কবাডির ফাইনালে ভারত নেমেছিল চাইনিজ তাইপেইয়ের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচের ফল ভারতের পক্ষে ২৬-২৫। শুরুতে ভারত কিছুটা এগিয়ে গেলেও শেষের দিকে তাইপেইয়ের মেয়েরা ম্যাচে ফিরে আসে। প্রথমার্ধে ভারত এগিয়ে ছিল ১৪-৯ পয়েন্টে। দ্বিতীয়ার্ধে তাইপেইয়ের মেয়েরা বেশি পয়েন্ট পেলেও প্রথমার্ধে এগিয়ে থাকার ফলে পদক জিতে নেয় ভারত।

এর পর ছেলেদের দলও সোনা জেতে। তবে সেই ম্যাচে তীব্র বিতর্ক হয়েছে। ইরানের বিরুদ্ধে ম্যাচে শুরু থেকে তুমুল লড়াই হয় দু’দলের মধ্যে। কখনও ভারতীয় দল এগিয়ে যায়। আবার কখনও ইরান। কোন দল সোনা জিতবে, তা বোঝা যাচ্ছিল না শেষ পর্যন্ত। তবে সব থেকে বড় নাটক হল খেলা শেষ হওয়ার ১ মিনিট ৩ সেকেন্ড বাকি থাকার সময়। দু’দলেরই তখন পয়েন্ট ছিল ২৮। ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড বাকি থাকার সময় ‘ডু অর ডাই’ ঘোষণা করা হয়। সে সময় রেডে গিয়েছিলেন পবন। ইরানের কোনও খেলোয়াড়কে স্পর্শ করার আগেই তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যান। পবনের পিছনে তাড়া করে ইরানের এক জন লাইনের বাইরে চলে এসেছিলেন। তাঁকে স্পর্শ করেছিলেন আরও তিন জন সতীর্থ। ফলে পুরনো নিয়ম অনুযায়ী ভারতের তিন বা চার পয়েন্ট পাওয়ার কথা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দু’দলেরই এক পয়েন্ট পাওয়ার কথা, যে হেতু ইরানের এক জন ডিফেন্ডার নিজে থেকেই কোর্টের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। রেফারি প্রথমে ভারতকে তিন পয়েন্ট দিয়েছিলেন। ইরানকে এক পয়েন্ট। পরে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলে দু’দলকেই এক পয়েন্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখনই ভারতের খেলোয়াড়েরা আপত্তি জানান।

ইরাকের রেফারি, মালয়েশিয়া এবং শ্রীলঙ্কার আম্পায়ারেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সমস্যার মূল কারণ, খেলা শুরুর আগে নিয়ম ঠিক ভাবে জানানো হয়নি। স্বভাবতই ভারতীয় দল পুরনো নিয়মের দাবিতে অনড় থাকে এবং ইরান নতুন নিয়মে পয়েন্ট দেওয়ার দাবি জানায়। বার বার রিপ্লে দেখেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি রেফারি এবং আম্পায়ারেরা। তাঁদের কার্যত বিভ্রান্ত দেখিয়েছে। ভারত এবং ইরান কোনও শিবিরই তাঁদের যুক্তি মানতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয় এশীয় কবাডি সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেলের। তিনি রিপ্লে দেখে দু’দলকে এক পয়েন্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রতিবাদ জানান ভারতীয় দলের কোচ। এশীয় কবাডি সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল বোঝানোর চেষ্টা করলেও ভারতীয় শিবির রাজি হয়নি। প্রতিবাদে ভারতের খেলোয়াড়েরা কোর্টে বসে পড়েন।

ভারত খেলতে না চাওয়ায় আবার নতুন করে আলোচনা শুরু করেন রেফারি, আম্পায়ারেরা। আবার রিপ্লে খতিয়ে দেখা হয়। ভারতীয় শিবিরের অনড় অবস্থানের সামনে কার্যত পিছু হটতে বাধ্য হন ম্যাচ অফিসিয়ালেরা। ভারতকে আবার ৪ পয়েন্ট এবং ইরানকে ১ পয়েন্ট দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে তীব্র প্রতিবাদ জানায় ইরান শিবির। তাদের খেলোয়াড়েরাও খেলতে না চেয়ে কোর্টের উপর বসে পড়েন। উভয় দলই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। খেলা শুরুর আগে আম্পায়ারেরা নিয়ম স্পষ্ট না করায়, তাঁরা বিপাকে পড়েন। নিজেদের ভুলের জন্য কোনও দলের উপরেই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারেননি তাঁরা।

এই পরিস্থিতিতে খেলা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত রাখা হয়। কোন নিয়ম মানা হবে, তা ঠিক করতে শুরু হয় আলোচনা। এশীয় কবাডি সংস্থার কর্তা, ম্যাচ অফিশিয়াল এবং আয়োজকেরা কথা বলে ঠিক করেন, যে হেতু খেলা শুরুর আগে নিয়ম সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে জানানো হয়নি, তাই শেষ পর্যন্ত পুরনো নিয়মকেই মান্যতা দেওয়া হয়। ফলে ইরানের আপত্তি আগ্রাহ্য করে ভারতকে ৩ পয়েন্ট এবং তাদের ১ পয়েন্ট দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে ইরানের খেলোয়াড়েরা খুশি না হলেও আর তীব্র প্রতিবাদের পথে হাঁটেননি তাঁরা। শেষ কয়েক সেকেন্ডে আরও ২ পয়েন্ট তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করে ভারত। ইরান আর কোনও পয়েন্ট পায়নি।

ব্যাডমিন্টন

পুরুষদের ডাবলসে সোনা জেতেন চিরাগ শেট্টি এবং সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি জুটি। প্রথম বার এশিয়ান গেমসের এই ইভেন্টে সোনা জিতল তারা। দক্ষিণ কোরিয়ার জুটিকে স্ট্রেট সেটে হারিয়ে দেন চিরাগেরা। ৫৭ মিনিটে ম্যাচ জিতে নেন। প্রথম গেমটি ২১-১৮ ব্যবধানে জিতে নেন তাঁরা। দ্বিতীয় গেমটি জেতেন ২১-১৬ ব্যবধানে। বিশ্বের ক্রমতালিকায় চিরাগেরা তিন নম্বর। তাঁদের বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার সোলগিউ চৈ এবং উনহো কিম উড়ে যান চিরাগদের বিরুদ্ধে। ৫৮ বছর পর প্রথম ভারতীয় জুটি হিসাবে এশিয়ান গেমস জিতলেন চিরাগেরা। ১৯৮২ সালের পর এই ইভেন্টে পদক জিতলেন তাঁরা। এশিয়ান গেমসে ব্যাডমিন্টনে এই বছরই সেরা সাফল্য ভারতের। ছেলেদের ডাবলসে সোনা ছাড়াও ভারত এ বারে দলগত বিভাগে রুপো জিতেছে এবং ছেলেদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ জিতেছে। ২০১৮ সালে একটি রুপো এবং একটি ব্রোঞ্জ জিতেছিল ভারত। ১৯৮২ সালে পাঁচটি ব্রোঞ্জ জিতেছিল তারা।

এ ছাড়া, দাবাতে পুরুষ এবং মহিলা দুই দলই রুপো পেয়েছে। কুস্তিতে দীপক পুনিয়া রুপো পেয়েছেন। মেয়েদের হকি দল জাপানকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Asian Games Team India Archery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy