Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

পরাজিতদের কেউ মনে রাখে না, এটাই ছিল দেশঁ-র ‘ভোকাল টনিক’

জানা গিয়েছে, ফরাসি কোচের এই কথাগুলো শুনে এনগোলো কঁতে, পাভার্দদের কারও চোখ দিয়ে নাকি গড়িয়ে পড়ে জল। শক্ত হয়ে গিয়েছিল পল পোগবার মতো কারও কারও চোয়াল।

কোচ দিদিয়ে দেশঁকে নিয়ে এ‌বং কাপ হাতে উল্লাস। রবিবার লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। ছবি: রয়টার্স

কোচ দিদিয়ে দেশঁকে নিয়ে এ‌বং কাপ হাতে উল্লাস। রবিবার লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:২১
Share: Save:

দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ঘরে আসার জন্য যেন ফুটছিল গোটা ফ্রান্স। আর তার জন্য নানা সংস্কার, কোচ দিদিয়ে দেশঁর ‘ভোকাল টনিক’ যেমন ছিল, তেমনই ছিল সম্প্রীতি। আর ছিল ফরাসিদের একটা সঙ্ঘবদ্ধ দল। যে দলের স্টিয়ারিংটাই ছিল, এ বারের বিশ্বকাপ ফাইনালের গোলদাতা পল পোগবার হাতে। বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের দিনে ফরাসি শিবিরের যে খণ্ডচিত্র হাতে এসেছে। তা এ কথাই বলছে।

রবিবার সকালেই সস্ত্রীক ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ও ব্রিজিত মাকরঁ-র সঙ্গে একই বিমানে মস্কো এসেছিলেন লরাঁ কসিয়েলনি এবং দিমিত্রি পায়েত। বিশ্বকাপের জন্য ফ্রান্সের চূড়ান্ত দল গড়তে গিয়ে যাঁদের রাখেননি কোচ দিদিয়ে দেশঁ। কিন্তু পায়েত বা কসিয়েলনি সেক্ষেত্রে ভেঙে পড়লেও বিশ্বকাপ জয়ের মাহেন্দ্রক্ষণে সে কথা মনে রাখেননি। মস্কোতে পা রেখেই তাঁরা পোগবা, এমবাপেদের পাঠিয়ে দেন, ছোট্ট একটা মোবাইল বার্তা, ‘বিশ্বকাপটা আবার আমাদের এনে দাও। তার জন্যই এসেছি মস্কোয়।’’

তার আগেই শনিবার পোগবাদের একপ্রস্ত ‘ভোকাল টনিক’ দিয়ে রেখেছেন, দলের কোচ দিদিয়ে দেশঁ। নৈশভোজনের পরে এমবাপেদের গোটা দল হাজির হয়েছিলেন কোচ দেশঁ এবং তাঁর সহকারী গাঁই স্তেফান্স-এর কাছে। সেখানেই ফরাসি কোচ প্রথম একাদশকে বলেন, ‘‘রবিবার তোমাদের জীবনটাই বদলে যাবে। মনে রেখো, বিশ্বকাপের এই ফাইনাল ম্যাচটা শেষ হওয়ার পরে সবাই বিজয়ীদেরই মনে রাখেন। কেউ পরাজিতদের মনে রাখেন না। কাজেই ফাইনাল ম্যাচটা খেলার জন্য মাঠে নামার দরকার নেই। মাঠে নামতে হবে ম্যাচটা জেতার জন্য। সে ভাবেই প্রস্তুতি নাও।’’ সঙ্গে ফরাসি দলে দেশাত্মবোধ জাগানোর জন্য কোচ আরও বলেন, ‘‘দেশ তোমাদের অনেক কিছুই দিয়েছে। ফুটবলের সর্বোচ্চ মঞ্চে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। এ বার দেশের জন্য তোমাদের কিছু করার পালা। শুধু দেশ নয়। তোমাদের নিজেদের ও পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের জন্য ম্যাচটা জিতে ফিরতে হবে।’’

জানা গিয়েছে, ফরাসি কোচের এই কথাগুলো শুনে এনগোলো কঁতে, পাভার্দদের কারও চোখ দিয়ে নাকি গড়িয়ে পড়ে জল। শক্ত হয়ে গিয়েছিল পল পোগবার মতো কারও কারও চোয়াল। রবিবার মাঠে নেমে লুকা মদ্রিচদের পা থেকে বল কেড়ে আক্রমণে যাওয়ার সময় তাই গোটা ফরাসি দলকেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখিয়েছে।

আরও পড়ুন: পেলের পর কনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল এমবাপের

এর এই নৈশভোজের পরে কোচের আবেগপ্রবণ বক্তৃতার পরেই ফের সেই সংস্কার। যেখানে প্রথম একাদশের পোগবা, ভারান, উমতিতিরা ফের আরও একটা বিশেষ বৈঠকে বসেন কোচ এবং তাঁর সহকারীর সঙ্গে। য়েখানে ম্যাচে নেমে কার কী বিশেষ কাজ, সেটাই ফের আরও নির্দিষ্ট করে বুঝিয়ে দেন কোচ। জানা গিয়েছে, গ্রুপ লিগের ম্যাচের সময় এই বৈঠক হয়নি ফরাসিদের। কিন্তু দল নক-আউটে ওঠার পরে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে নামার আগের দিনও এ ভাবেই বৈঠক হয়েছে দলের দুই কোচ এবং এগারো জন ফুটবলারের। বাকিরা চলে গিয়েছিলেন ঘুমোতে। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচের আগেও তার অন্যথা হয়নি ফরাসি শিবিরে।

শনিবার সন্ধে থেকেই মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে শুরু হয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপ ঘরে তোলার জন্য ফরাসিদের শেষ মুহূর্তদের প্রস্তুতি। সন্ধে হতেই মস্কোর হায়াত রিজেন্সি হোটেলের নৈশভোজের টেবিলে চলে এসেছিলেন ফরাসি ফুটবলাররা। বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে এসে এই হোটেলেই রয়েছে উগো লরিসের দল।

শনিবার রাতে সেই নৈশভোজের সময় দেখা গিয়েছে ফরাসিদের নতুন নায়ক কিলিয়ান এমবাপে ‘আরও পাস্তা দাও’ বলে অট্টহাস্য করছেন। সেই সময় ফরাসি দলের আশেপাশে থাকা হোটেলের বেশ কয়েক জন অতিথি ভেবেছিলেন, এমবাপের হয়তো খিদেটা বেশিই পেয়েছে। কিন্তু পরে জানা যায়, এটা নাকি ফরাসি দলের একটা সংস্কার। প্রতি দিন প্রতি বার দলের সঙ্গে খেলে বসে এ ভাবেই নাকি চিৎকার করেন এমবাপে। তাঁর বিশ্বাস এতে নাকি দলে
সৌভাগ্য আসবে।

তবে সেই সৌভাগ্যেই মিশেল প্লাতিনি, জ়িনেদিন জ়িদানের দেশে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ এল কি না তা জানা নেই। তবে শনিবার সন্ধ্যায় ফরাসি দলের নৈশভোজে হাজির থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, লরিস, আঁতোয়া গ্রিজম্যানদের কথাবার্তা বা মুখে চাপের লেশমাত্র দেখা যায়নি। প্রত্যেকেই নাকি ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। যেখানে সব চেয়ে বেসি মজা-ঠাট্টা করতে দেখা গিয়েছে বঁজামা মেন্দিকে। তিনি নাকি প্রতি ম্যাচের আগেই হাসি-মস্করা করে দলকে এ ভাবেই চাঙ্গা রাখেন। দলকে এ ভাবে চাপমুক্ত করে রাখার পিছনে নাকি ফরাসি কোচ দিদিয়ে দেশঁর অবদানও যথেষ্ট।

শনিবার সকাল সোয়া এগারোটাতেই এ বারের বিশ্বকাপে ফরাসিদের মূল শিবির ইস্ত্রা থেকে থেকে মস্কোর দিকে রওনা দিয়েছিল গ্রিজম্যানদের টিম বাস। ৮০ কিলোমিটার সেই রাস্তা অতিক্রমের সময় বাসের দেওয়ালে লেখা ছিল, ‘‘তোমাদের শক্তি, আমাদের আবেগ। আলেঁ লে ব্লুজ়!’’ যা বিশ্বকাপের আগে দলকে অনুপ্রাণিত করার জন্য মোক্ষম স্লোগান হিসেবে বেছেছিলেন ফরাসি ফুটবল সমর্থকরা। সেখানেও বহাল ছিল ফুরফুরে মেজাজ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy