লক্ষ্য: মেক্সিকোর বিরুদ্ধে গোল করে ছন্দে নেমার। ফাইল চিত্র
পর্তুগিজে চালু একটা প্রবাদ আছে। যার অর্থ হচ্ছে, দেখেও যারা দেখতে পায় না, তাদের কপালে দুর্ভোগ অপেক্ষা করে। কিছু লোক আছে, যারা সত্য থেকে চোখ বন্ধ করে রাখে। তাদের জন্য এই প্রবাদ।
বার বার আমার কলামে লিখেছি, এই ব্রাজিল ব্যক্তি-নির্ভর ফুটবল খেলে না। এই দলটা কোনও নেমার, কোনও কুটিনহো বা কোনও জেসুসের উপর শুধু নির্ভর করে চলছে না। দল হিসেবে খেলাটাই ওদের শক্তি। মুখে হাসি নিয়েও প্রতিপক্ষকে হারানো যায়। এই ব্রাজিল ঠিক সেটাই করছে।
মেক্সিকো কোচ কার্লোস ওসোরিয়ো দেখছিলাম প্রাক-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, কুটিনহোকে কেন নেমারের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক মনে হয়। আমার ধারণা, লুই ফিলিপ স্কোলারির কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে মেক্সিকোর কোচ অতি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। এটা কোনও রকেট সায়েন্স নয়। ফুটবল খেলাটা সকলেই অল্পবিস্তর বুঝতে পারে এখন। এবং, বার বার বলছি কোচ হিসেবে ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের মহাতারকার ইগোকে উস্কে দিতে যাওয়াটা আগুন নিয়ে খেলতে যাওয়ার সমান। শেষ ষোলোর ম্যাচের আগে যদি নেমারের একটা খোঁচার দরকার পড়ত, মেক্সিকোর কোচই সেটার ব্যবস্থা করে দিলেন। তিনি যে ম্যাচের আগে ব্রাজিলীয় তারকার নাটকীয়তা নিয়ে কটূক্তি করলেন, তাতেই জেগে উঠল নেমার। পুড়লেন প্রতিপক্ষ কোচ।
কী অসাধারণ একটা ম্যাচ হল! যেমন রণনীতির দিক থেকে ভাল ছিল, তেমনই দেখতেও সুন্দর লাগল। ব্রাজিল যেখানে যখনই খেলুক, তাদের কাছ থেকে মানুষ সুন্দর ফুটবল দেখতে চায়। জেতাটা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু একই সঙ্গে আনন্দ দিয়েও তো জিততে হবে। তিতের ব্রাজিল যেমন টেকনিক্যাল ফুটবল খেলছে, তেমনই সৌন্দর্যও মেশাচ্ছে। এ বারের বিশ্বকাপে ব্রাজিল শুরু থেকে কুটিনহোকে প্রধান করে ছক সাজাচ্ছিল। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে সেটা ওরা পাল্টে ফেলে উইং হাফ এবং উইং ব্যাককে বেশি প্রাধান্য দেয়।
আরও পড়ুন: সংযত রাশিয়ায় মাতোয়ারা ভারত
সেই কারণেই ফিলিপে লুইস এবং প্যাগনার বার বার বিপক্ষের ছয় গজ বক্সে হানা দিতে পারছিল। আর থিয়োগা সিলভা মাধখানটা পাহাড়া দিচ্ছিল যাতে কাউন্টার অ্যাটাকে মেক্সিকো গোল করতে না পারে। উইলিয়াম আর প্যাগনার দারুণ খেলেছে। ওদের জন্যই ডান দিকে একের পর এক আক্রমণের ঝড় তুলল ব্রাজিল। যদি ম্যাচটা আবার দেখেন ভাল করে, দেখবেন ডান দিকে কী দুর্দান্ত ভাবে জুটি গড়ে ফেলেছিল উইলিয়ান আর প্যাগনার। আর বাঁ দিকে ফিলিপে লুইস জোট বেধেছিল নেমারের সঙ্গে। লুইস যখন উপরে উঠছিল নেমারকে সাহায্য করার জন্য, তখন কুটিনহো, জেসুস, প্যাগনার নীচে নেমে আসছিল রক্ষণে থিয়াগো সিলভা আর মিরান্ডাকে ভরসা দেওয়ার জন্য। তিন জনের রক্ষণের সামনে কুটিনহো ‘ব্লকার’-এর ভূমিকা নিচ্ছিল। ব্রাজিল খেলছিল ৩-৪-৩ ছকে। কিন্তু আক্রমণে যাওয়ার সময় ৩-২-৪-১ হয়ে যাচ্ছিল। আবার রক্ষণের সময় সেটাকেই করে দিচ্ছিল ৪-৩-৩। খেলতে খেলতে নকশায় এই বদল আনাটা মোটেও সহজ নয়। বিশেষ করে এমন প্রচণ্ড গতিতে যখন ম্যাচ হচ্ছে। তিতে এবং ওর দলকে এর জন্য কৃতিত্ব দিতেই হবে।
আর একটা জিনিস। যদি ভাল করে লক্ষ্য করেন, তা হলে মেক্সিকো ম্যাচে যখনই কোনও ব্রাজিলীয় ফুটবলার অ্যাটাকিং থার্ডে বল পাচ্ছিল, তার আশেপাশে দু’তিন জন সতীর্থ পৌঁছে যাচ্ছিল। এর ফলে লং বল না খেলে দ্রুত পাস করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল। এর সঙ্গে রয়েছে ‘অফ দ্য বল রান’ অর্থাৎ বল ছাড়া দৌড়। এই জিনিসগুলোই ব্রাজিলকে ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। কেউ কি খেয়াল করেছেন যে, এমনকি নেমারও টিমগেম খেলছে! বল নিয়ে অহেতুক কারুকাজ করা বন্ধ করে ও দ্রুত পাস করে দিচ্ছে। প্রফেসর (তিতেকে এই নামেই ডাকে ব্রাজিলের ফুটবল মহল) হোমওয়ার্ক করেছেন এবং যাকে যেটা বলা দরকার, বলতে ভয় পাচ্ছেন না। ওঁকে দেখে আমাদের চিরসবুজ মারিয়ো জাগালোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। দলের উপর তিতের কী দারুণ নিয়ন্ত্রণ, সেটা বোঝা যাচ্ছে ব্রাজিলের রক্ষণের শৃঙ্খলা দেখে। তেমনই আক্রমণে ঝাঁঝ।
এখনও পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় মাত্র একটিই গোল খেয়েছে ব্রাজিল। এই তথ্যই বলে দিচ্ছে, ওরা কতটা জমাট ফুটবল খেলছে। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ অবশ্য নিয়ে নিল কাজেমিরোকে। কার্ড দেখায় বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে ও খেলতে পারবে না। তিতেকে ভেবে নিতে হবে, কাজেমিরোর জায়গায় কাকে খেলাবেন। বেলজিয়াম বেশ শক্তিশালী দল এবং ওদের আক্রমণ ভাগ এই বিশ্বকাপের সেরা। সেটা ওরা জাপান ম্যাচেই আবার প্রমাণ করে দিয়েছে। দু’গোলে পিছিয়ে থেকেও ৩-২ জিতেছে। আবার গত ২৬টি ম্যাচে মাত্র ৬টি গোল খেয়েছে ব্রাজিল। সেটা তিতের দলকে আত্মবিশ্বাস দেবে। আমি হলে কাজেমিরোর জায়গায় ফার্নান্দিনহোকে খেলাতাম। মেক্সিকো ম্যাচের শেষের দিকে ফার্নান্দিনহোকে নামিয়েছিলেন তিতে। তবে শুরুতে যেটা বলেছি, সেটারই পুনরাবৃত্তি করছি। এই ব্রাজিল এক জনের উপর নির্ভর করে থাকা দল নয়। ওদের আসল শক্তি দল হিসেবে খেলতে পারে এবং প্রত্যেকের বিকল্প আছে।
ভিভা ব্রাজিল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy