কে সেরা: আজ মুখোমুখি লুকাকু-এমবাপে। এএফপি, ফাইল চিত্র
কত ম্যাচ আসে আর কত ম্যাচ যায়। খুব কম ম্যাচই আছে, যেগুলো আমাদের স্মৃতিতে চিরকালের জন্য থেকে যায়। এই সব ম্যাচের অভিজ্ঞতাই আমরা পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে ভাগ করে নিই। কেন জানি না মনে হচ্ছে, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সে রকমই একটা ম্যাচ আজ, মঙ্গলবার দেখতে চলেছি আমরা। বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের ফুটবলের সঙ্গে ফ্রান্সের ফুটবল নবজাগরণের লড়াই। এই ম্যাচই হয়তো ঠিক করে দেবে এ বারের বিশ্বকাপ কাদের হাতে যাবে।
ব্রাজিল ম্যাচে বেলজিয়াম আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। আমি আবারও ভুল প্রমাণিত হতে চাই না। তবে আমার স্বভাবটাই হল, যেটা ঠিক মনে হয়, সেটা মুখের ওপর বলে দেওয়া। সেই আমারই কি না এই ম্যাচটা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সমস্যা হচ্ছে। এতটাই সমানে-সমানে দু’দলের শক্তি।
আমার হৃদয়ে লালের ছাপ, মস্তিষ্কে নীলের জোয়ার। অর্থাৎ হৃদয় বলছে বেলজিয়াম, মস্তিষ্ক ফ্রান্স।
বেলজিয়াম আমার হৃদয়ে আছে বলা মানে এই নয় যে আমি ফরাসি দল বা ওদের সমর্থকদের কোনও ভাবে অপমান করতে চাইছি। তবে এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, বেলজিয়াম এখন দুরন্ত ফর্মে আছে। পাশাপাশি ওদের সাপোর্ট স্টাফের তালিকায় রয়েছে ধুরন্ধর কোচ রবের্তো মার্তিনেস আর সহকারী কোচ থিয়েরি অঁরি। ভাগ্যটাও যে সঙ্গে আছে বেলজিয়ামের, সেটা তো কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচেই বোঝা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: কাপের জন্য জীবন বাজি রাখতে তৈরি হুগো, কুর্তোয়া
আমি এমন একটা ম্যাচের প্রিভিউ লিখতে বসেছি, যেটা খুব কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আমি ভেবেছিলাম, বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল খেলবে ব্রাজিলই। কিন্তু সেটা হয়নি। কী আর করা যাবে। জীবনটাই যে এমন। আপনাকে মেনে নিতেই হবে। তবে এটাও বলতে হবে, বেলজিয়ামকে সত্যিই অপ্রতিরোধ্য দেখিয়েছে এই বিশ্বকাপে। ফ্রান্সকেও তাই।
দু’টো দলের মধ্যে পার্থক্যটা কিন্তু খুবই কম। দু’টো দলের তুলনা শুরু করছি ‘হট সিট’-এ বসে থাকা দু’দলের কোচ—রবের্তো মার্তিনেস এবং দিদিয়ে দেশঁ।
নিজের ফুটবল জীবনে দেশঁ এক জন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ছিলেন। মার্সেই, জুভেন্তাস, চেলসি, ভ্যালেন্সিয়ার মতো ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোয় খেলেছেন। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে দক্ষ ছিলেন দেশঁ। খেলেছেন এরিক কঁতোনা, জিনেদিন জিদান এবং পরে অঁরির সঙ্গেও। তাই আমি নিশ্চিত, মার্তিনেস এবং অঁরির জন্য লুকোনো কিছু তাস এই ম্যাচে ঠিক বার করবেন দেশঁ।
পাঠকরা ভুলে যাবেন না, এই মানুষটার কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতা আছে ফ্রান্সের হয়ে। দেশঁ নিশ্চয়ই চাইবেন, কোচ হিসেবেও বিশ্বকাপজয়ীদের তালিকায় নাম তুলতে। অধিনায়ক এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতা আছে ব্রাজিলের মারিয়ো জাগালো এবং জার্মানির ফ্রানৎস বেকেনবাউয়ারের। যাঁদের সঙ্গে একাসনে বসার এই সুযোগটা নিশ্চয়ই ছাড়তে চাইবেন না দেশঁ।
মার্তিনেসও ওঁর ফুটবল জীবনে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ছিলেন। কিন্তু এখানে অঁরিকে পাশে পেয়ে ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছেন না। এই বিশ্বকাপে বেলজিয়াম ম্যাচের স্কোরগুলোর ওপর চোখ বোলালে সেটা বোঝা যাচ্ছে। পাঁচ ম্যাচে ১৪ গোল কিন্তু বেলজিয়াম আক্রমণের শক্তিটাই দেখিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বেলজিয়ামের রক্ষণে একটু ফোঁকফোকর দেখা যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত, দেশঁ এই দুর্বলতার ফায়দা তুলতে চাইবেন। রক্ষণে বেলজিয়াম তিন জনকে কাজে লাগাচ্ছে— ভার্তোমেন, কোম্পানি এবং আল্দারওয়েল্দ। কিন্তু গ্রিজ়ম্যান, দেম্বেলে এবং এমবাপেকে সামলানোর ক্ষমতা বেলজিয়াম ত্রয়ীর আছে কি না, সেটাই দেখার।
আমার মনে হয়, ফরাসিরা ৪-১-২-১-২ ছকে খেলবে যেখানে উমতিতি এবং ভারান সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের ভূমিকায় নামবে। মানে বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের অভাবনীয় জুটি। এদের সঙ্গে সামনে থেকে কঁতে। অ্যাজারের গতি সামলানোর জন্য কঁতে হয়তো একটু ডান দিকে চেপে খেলবে। মাঝখানে পোগবার সঙ্গে থাকবে মাতুইদি। মাঝমাঠ এবং স্ট্রাইকারের মধ্যে যোগসূত্র হবে গ্রিজ়ম্যান। ওর কাজ হবে আক্রমণে বল জোগানো। উপরে এমবাপে এবং দেম্বেলে ডান দিক-বাঁ দিক করে খেলবে।
বেলজিয়ামের ছক সম্ভবত হবে ৩-২-২-৩। প্রতি-আক্রমণে ফরাসি দুর্গে হানা দেওয়ার চেষ্টা করবে ওরা। যে প্রতি-আক্রমণে গতিই হবে বেলজিয়ামের বড় অস্ত্র। আরও একবার দে ব্রুইনকে দেখা যাবে লুকাকু এবং অ্যাজারকে বল বাড়াতে। একটু পিছনে থাকবে ফেলাইনি এবং উইতসেল। মাঝমাঠের একটা লড়াই দেখার অপেক্ষায় আছি। পোগবা, মাতুইদি, গ্রিজম্যান, কঁতে বনাম ফেলাইনি, উইতসেল, দে ব্রুইন, অ্যাজারের লড়াই। অ্যাজারকে মাঝে মাঝে নেমে আসতে হবে। না হলে বেলজিয়ানরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে ওপরে একা হয়ে পড়বে লুকাকু। এখানেই বেলজিয়ামের সাফল্য নিয়ে আমার একটু সন্দেহ আছে। মনে হচ্ছে ওরা মাঝমাঠে সংখ্যার লড়াইয়ে তিন-পাঁচ পিছিয়ে পড়বে। বেলজিয়ামের তিন ফুটবলারের মোকাবিলায় ফ্রান্সের পাঁচ জন থাকবে। তাই মনে হয়, বেলজিয়াম দুই প্রান্তে খেলাটা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। যেটা আটকাতে কঁতের ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
অবাক হবেন না, যদি দেখেন দে ব্রুইন এবং কোম্পানি বাঁ দিক থেকে শুরু করছে। শাদলির কাজটা হবে দে ব্রুইনকে বাঁ দিক থেকে আক্রমণে উঠতে সাহায্য করা। মার্তিনেস কী রণনীতি নেন, সেটা দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। আমি নিশ্চিত, দু’প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করে বেলজিয়াম চাইবে ফ্রান্সের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডকে চাপে ফেলতে। ফরাসি গোলকিপার হুগো লরিসকে তৈরি থাকতে হবে বিষাক্ত সব ক্রস সামলানোর জন্য।
এমন দু’টো দেশ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নামছে যাদের সংস্কৃতির মধ্যে মিলও আছে, আবার পার্থক্যও আছে। বেলজিয়াম আর ফ্রান্সের সংস্কৃতির মধ্যে তুলনা করাটা খুব জটিল ব্যাপার। সহজ ভাবে বলা যায়, ফরাসিভাষী বেলজিয়ানরা ফরাসি সংস্কৃতিকে নিজেদের বলে গ্রহণ করেছে। আবার ফ্লেমিশভাষী বেলজিয়ানদের নিজস্ব একটা সংস্কৃতি আছে। মঙ্গলবার আমরা সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন নয়, ফুটবলের একটা চরম দ্বৈরথ দেখতে বসব। দেখা যাক, কে কার ওপর শাসন চালায় মাঠে। আশা করব, সেরা দলটাই জিতবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy